পরিপার্শ্ব
স্মৃতি চক্রবর্তী
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৪২ পিএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫১ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে এর অভিঘাত অধিকতর দৃশ্যমান। পুরুষ-নারী-শিশু সবাই এর প্রত্যক্ষ শিকার। বিশেষ করে নারীরা অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত। নারী-পুরুষ-শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ বহুমাত্রিক সামাজিক-পারিবারিক সংকট বাড়ছে। অপ্রতুল শিক্ষা, অসচ্ছলতা, অসচেতনতা ইত্যাদিও সংকটের ছায়া গাঢ় করছে। খুলনা উপকূলীয় এলাকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি বাদাবন সংঘ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৪ কোটির বেশি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের নানানরকম ঝুঁকিতে পড়েছে। সংঘের তথ্যমতে যাদের ৮০ শতাংশই নারী। অর্থাৎ দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীই ঝুঁকিতে রয়েছে। আরেকটি সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমারও আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। মারাত্মক অভিঘাত লাগছে জনস্বাস্থ্যে। বাড়ছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা। উপকূলীয় অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। এ লবণাক্ততা বৃদ্ধিরও বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মুখ্য পেশা মাছ ধরা। অর্থাৎ তাদের বড় অংশই মৎস্যজীবী। উপকূলবাসীর জন্মনিরোধ ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি হওয়ায় প্রজননস্বাস্থ্যও সংকটের মুখে। সেইসঙ্গে বাড়ছে অন্য নানা রোগব্যাধিও।
উপকূলবাসীর মধ্যে সঙ্গত কারণেই পেশা বদলে স্থানান্তরিত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। জীবিকার তাগিদেই এমনটি হচ্ছে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, স্বাস্থসেবা প্রার্থীরা যে সেবা পান তা একেবারেই অপ্রতুল। বাদাবনের গবেষণা তথ্যেও দেখা যায়, উপকূলীয় অঞ্চলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর অনেকেই দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী। উপকূলীয় অঞ্চলের আরেক মানবিক সমস্যা বাল্যবিয়ে। এজন্য অর্থাভাব ও অসচেতনতাই মুখ্যত দায়ী। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জীবনসংকট তৈরি করছেন অসচেতনতা ও ভবিষ্যৎ পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সংকটও প্রকট হচ্ছে। ২০২২ সালে একটি সংস্থার সমীক্ষায় প্রকাশ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে উপকূলে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার কমলেও উপকূলে এ হার বাড়ছে দ্রুত। আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এর জন্য দায়ী।
আমাদের সমাজ বাস্তবতায় মানব পাচার ভিন্ন মাত্রার এক অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নানা বৈরী পরিস্থিতির শিকার উপকূলবাসীর দিকেও মানব পাচারকারীদের নজর পড়েছে এবং এর ফলে সেসব অঞ্চলে আরও একটি উপসর্গের রেখাপাত তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দেশের উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে যার উপশমে জরুরি হলো, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন। একই ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর জন্য তা কোনোভাবেই নিয়তি হতে পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরদার প্রস্তুতির পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। অতীতে রাজনৈতিক সরকারগুলোর শাসনামলে এ ব্যাপারে কল্যাণকর কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে দুর্নীতিবাজদের আখের গোছানোর অভিযোগ আছে। ওই কদাচারের প্রতিবিধান যেমন জরুরি তেমন ভুক্তভোগীদের জন্য টেকসই কর্মসূচির বাস্তবায়নও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।