সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৪ এএম
‘আড়াই মাস ধরে বিদ্যুৎহীন দেড় হাজার পরিবার’ শিরোনামে ২০ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যেমন উদ্বেগজনক তেমনি বিস্ময়কর। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের দেড় হাজার পরিবার। যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণে আমাদের সক্ষমতা নিয়ে গর্ব রয়েছে, তখন একটি এলাকার এত বিপুলসংখ্যক মানুষের বিদ্যুৎবিহীন থাকা নিঃসন্দেহে হতাশার। আমরা জানি, বৈশ্বিক অর্থনীতির নানামুখী চাপের মুখেও সরকার মানুষকে স্বস্তি দিতে চাইছে। মানুষকে ভালো রাখতে চাইছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে নানামুখী সহায়তা দিচ্ছে। সে সময়ে যদি বিদ্যুতের অভাবে, বিশেষত কারিগরি ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন একটি এলাকার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা নিতান্তই বেদনার। এর মাধ্যমে সরকারের শুভকাজের সুফল থেকেই মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিপুলসংখ্যক মানুষের দীর্ঘদিন এই বিদ্যুৎবিহীন থাকার পেছনের কারণ পদ্মা নদীর তলদেশের সাবমেরিন কেবলে ত্রুটি। গত ৪ নভেম্বর রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরই ওই পরিবারগুলো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে। এর পর পেরিয়েছে আড়াই মাস। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগের দিন পর্যন্ত কেবলের ত্রুটি শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে ত্রুটি মেরামত করে বিদ্যুতের পুনঃসংযোগও স্থাপন করতে পারেনি। ঢাকার দোহার উপজেলার নারিশা ইউনিয়ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘সাবমেরিন কেবল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখনও তা আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। আমরা কয়েক দফা চেষ্টা করেও সাবমেরিন কেবলের কোথায় ত্রুটি তা ধরতে পারিনি। ডিটেক্টর দিয়ে ত্রুটির জায়গা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া নদীর তলদেশ দিয়ে যে বৈদ্যুতিক কেবল টেনে নেওয়া হয়েছে, তা পলি পড়ে অনেক নিচে চলে গেছে। কেবল ওঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আমাদের প্রশ্ন, এই যে ত্রুটির কথা সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা তো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অপারগ হলে স্বাভাবিকভাবেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে। সেই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে জানিয়েছেও। কিন্তু সবচেয়ে হতাশার বিষয়, এত দীর্ঘ সময়েও বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে ত্রুটি সংশোধন তো দূরের, সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা নয়। স্থানীয় পর্যায়ে প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানরা ত্রুটি শনাক্ত করতে না পেরে ঊর্ধ্বতন মহলে জানানোর পরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি আড়াই মাসেও সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে সমাধান তো দূর অস্ত। আর তাই সময় গড়িয়ে গেলেও এলাকাবাসী বিদ্যুতের দেখা পায়নি। বিষয়টি যে কর্তাব্যক্তিদের চূড়ান্ত অবহেলা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা এই ধরনের অবহেলার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হওয়ার জন্য বলি। যার বা যাদের অবহেলায় এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, তাদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয়দের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে, কৃষিসহ সকল ধরনের উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেÑ এ দায় তো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাবমেরিন কেবলের ত্রুটি চিহ্নিত করে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য বলি। পাশাপাশি দায়িত্বহীনতার যে নজির তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার জন্য সরকারকে বলি। মনে রাখা দরকার, প্রযুক্তির এই অগ্রসরমান বিশ্বে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হলে জীবনযাত্রায় তার প্রভাব পরে। স্থানীয় পর্যায়েও উৎপাদনশীলতা কমে যায়। যার প্রভাব জাতীয় জীবনেও এড়ানো যায় না। তাই যেকোনো মূল্যে সকল স্থানেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই পদ্মা নদীবেষ্টিত দিয়ারা নারকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের জনসাধারণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত সাবমেরিন কেবলের ত্রুটি মেরামতে নজর দিতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় যেন বাড়তি চাপ না পড়ে, তাদের দুর্ভোগ যেন আর না বাড়ে আমরা আশা রাখি, সে বিষয়টি বিদ্যুৎ খাতের নীতিনির্ধারকরা বিবেচনায় রাখবেন।