× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

আর্থিক খাতে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতেই হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:১৫ এএম

আর্থিক খাতে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতেই হবে

বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির নানা চিত্র উঠে আসছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নানা প্রতিষ্ঠান খুলে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ মিলেছে। পাচার হওয়া এই অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। টাস্কফোর্সের আলোকেই বিভিন্ন সংস্থা ও টিম অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। এতে আর্থিক খাতের নানা দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ হতে থাকে।গতকাল বুধবার প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর তথ্য। ‘গোয়েন্দা জালে সাড়ে তিন শতাধিক প্রভাবশালী’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছেÑ সাবেক সরকারের আমলে দেশের আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে গোয়েন্দারা। এ পর্যন্ত ৩৬৬ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা জালে জড়ানো হয়েছে। তাদের ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে দিয়ে নানামুখী তদন্ত চলছে। এ ছাড়া ৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ারও জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে এমন অর্থের উৎস ও খরচের খাতও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে তিন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিসহ দেড় হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব হিসাবের অনুকূলে তদন্ত শুরু করেছে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্লেখ্য, সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে ৩৬৬ ব্যক্তির আড়াই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। 

বিভিন্ন সময় প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দেশগুলোর সহায়তা চেয়ে আসছেন। বিএফআইইউও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ-সম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠিও দিয়েছে। সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, এনবিআর, কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বলা যায়, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে সরকারের চেষ্টার কমতি নেই। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে, সুতরাং আমরা পারব না কেন?’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এর অন্যতম মাধ্যম ছিল বাণিজ্য। তার মতে, পাচার হওয়া এসব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। অর্থ পাচার বন্ধে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কথা সত্য যে, সাধারণত কোনো হিসাব ব্লক করতে হলে তার বিপরীতে প্রাথমিক তদন্ত করতে হয়। বিএফআইইউ প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করেছে। কারও কারও মন্তব্য, সন্দেহজনক ব্যক্তির লেনদেনে প্রথমেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারপর তদন্ত করা যেত। আমরা মনে করি, ৫ আগস্টের পর কী পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা সহায়তা করেছেন কি নাÑ সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া দরকার। 

আমাদের দেশে জবাবদিহির সংস্কৃতির অনুশীলন এখনও গড়ে ওঠেনি। আমরা বিশ্বাস করিÑ সুনীতি-জবাবদিহির সংস্কৃতি অনুশীলনের মাধ্যমে পরিশীলিত ব্যবস্থার সূচনা হয়। অর্থাৎ প্রভাবমুক্তভাবে আইনি কাঠামোর মধ্যে ব্যাংকগুলো যাতে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা জরুরি। আসলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা জরুরি। গত ১৫ বছরে অর্থনৈতিক খাতে যে রাজনৈতিক প্রভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, এরও বিরূপ প্রভাব এখনও পড়ছে অর্থনীতিতে। তাই অতীত দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষপে নিতে হবে, প্রতিষ্ঠা করতে হবে সুশাসন। এ খাতকে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত না করা গেলে সুফল মিলবে কি না সন্দেহ। কারণ দেশের সুশাসনের একটি বড় সূচক হলো অর্থনৈতিক সুশাসন নিশ্চিত করা। অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুনীতি আর বাড়তে না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আইন অনুযায়ী তার ওপর প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার ব্যাংকিং খাত সংস্কারসহ পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে এবং পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা কথায় নয় কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা