× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিবেশ-প্রতিবেশ

নদ-নদীর অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৯ এএম

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের নদ-নদীর খসড়া তালিকা করেছে। খসড়া তালিকায় দেশের নদ-নদীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১৫৬টি। তবে এ তালিকাটি চূড়ান্ত নয় বিধায় আরও যাচাইবাছাইয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। তারপর প্রকাশ হবে চূড়ান্ত তালিকা। খসড়া তালিকাটি করা হয়েছে জেলা প্রশাসকদের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। বর্তমান খসড়া তালিকায় এমন ৩৬৫টি নদ-নদীর নাম যুক্ত করা হয়েছে যা ২০১১ সালে বাপাউবো কর্তৃক প্রকাশিত ৪০৫টি নদ-নদী এবং ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ১ হাজার ৮টি নদ-নদীর তালিকায় ছিল না। নদীর সংখ্যা আরও বেশি হয়তো ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে কিছু নদী দখল হয়েছে। দূষিত হয়েছে। এগুলো তো স্পষ্ট। আমরা নদী উদ্ধার করব কী, নদী রক্ষাই করতে পারছি না। যেসব নদী এখনও প্রবহমান সেসবও দূষণ আর ভরাট হওয়ার কবলে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শীতলক্ষ্যা নদী এখন ভয়াবহ দূষণের কবলে। এখানে নারায়ণগঞ্জের ডাইং কারাখানাগুলোর বর্জ্য ও বিষাক্ত কেমিক্যাল এসে পড়ছে। এতে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ছে শীতলক্ষ্যা নদী। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ বিভিন্ন ডাইং কারখানার বর্জ্যে শুধু নদী নয়, সেখানকার খাল-ডোবা-নালাও বিষাক্ত হচ্ছে। 

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডাইং কারখানা। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা এ নদীতে গোসল করে তাদের নানা ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। পানি তো ব্যবহারই করা যাচ্ছে না। নদীটিও এখন মৃতপ্রায়। একই দশা বুড়িগঙ্গা নদীরও। আর এর আশপাশের খালগুলোর অস্তিত্ব তো খুঁজেই পাওয়া যায় না। নদীটি এতটাই দূষিত যে এর পানি কালো রঙ ধারণ করে আছে। নরসিংদীর ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থাও তাই। প্রভাবশালীদের দখল তো আছেই, সঙ্গে এখানেও শিল্পকারখানার বর্জ্যপদার্থ এসে পড়ছে। ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য তো বটেই, পানি দূষিত হয়ে লাল ও কালছে বর্ণ ধারণ করেছে। এ পানি আর ফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা যায় না। যদিও এখানে নদী পার রক্ষা, অবৈধ দখলমুক্ত করা, কলকারখানায় ইটিপি ব্যবহার করা ইত্যাদি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে লাভ হয়নি। যে দখল-দূষণ ছিল তা আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নদীগুলো ভাগাড়ে পরিণত করার অধিকার শিল্পমালিকদের দেওয়া হয়নি। ব্যবসায়িক লাভের জন্য বর্জ্য নদীতে ফেলার লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি। অনেক কিছুর বিকল্প তৈরি করা যায় কিন্তু নদীর কোনো বিকল্প তৈরি করা যায় না।’ নদী রক্ষায় সরকারের  আন্তরিকতা খুঁজে পাওয়া যায় এই বক্তব্যে। তবে শুধু ঢাকা ও আশপাশের নদী বলেই এখানে বেশি দূষণ হচ্ছে, বেশি দখল হচ্ছে ব্যাপারটা এমন নয়। মফস্বলের নদীগুলোরও একই অবস্থা। ভাবুন পাবনার বড়াল নদের কথা। নদটির পারে বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি অফিস নির্মাণ, হাউজিং প্লট তৈরি করা হয়েছে বলে খবরে এসেছে। নদের ওপর বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ হয়েছে বলে এর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদের তীর তীরে অসংখ্য পোল্ট্রি ফার্ম, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কলকারখানা যেমন নির্মাণ হয়েছে; তেমন বসতবাড়ির বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন দূষিত করছে নদকে। 

২০০৮ সালে এ নদ বাঁচানোর জন্যই এখানে বড়াল রক্ষা আন্দোলনও হয়েছে। কিন্তু তাতে করে ফল মিলেছে, তাও নয়। নদটি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। একই অবস্থা নাটোরের গুরুদাসপুরের নন্দকুজা নদীর। এখানেও নদীর দুই তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। ময়লা-আবর্জনা জমে নদী ভরাট হয়ে গেছে। এ নদীটি একটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ নদীর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চলনবিলের জীবন। নদীটি মরে গেলে চলনবিলও হয়তো মারা যাবে। এভাবে অনেক নদী মরে গেছে। একটি গবেষণার তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর গড়ে ১০টি নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। বর্তমানে বিপন্ন নদীর সংখ্যা ১৭৪। একটি তথ্যমতে ঢাকার চারদিকের নদ-নদীতে প্রতিদিন বর্জ্য জমা হয় ৪ হাজার ৫০০ টন। আর দূষণের কারণে বিলীন হয়ে যাওয়া নদীর সংখ্যা ২৫টি। বিগত ৫০ বছরে নদীপথ বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার।

এ ছাড়া ঢাকা শহরের আশপাশের নদ-নদীতে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ চিত্র এসেছে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে। গবেষণায় সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে টঙ্গী খালের পানিতে। এর পরই রয়েছে বালু নদ, এরপর বুড়িগঙ্গা নদী। এখানকার জলাশয়গুলোতে প্রতি ঘনমিটার পানিতে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার। গ্রামের নদীগুলোতেও প্লাস্টিকের দূষণ হচ্ছে। সেখানে প্রতি ঘনমিটারে ১০০ থেকে ১৫০টি প্লাস্টিক কণা। গ্রামের চেয়ে শহরের নদীতে শতগুণ বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এ প্লাস্টিক কণাগুলো মাছ খাচ্ছে। মাছ থেকে এসব প্লাস্টিক কণা যাচ্ছে আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে।

প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তথ্যমতে দেশের নদী দখলদারের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৭৪২। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কাছে ঢাকার পাঁচটি নদ-নদীর ৯৫৯ জন দখলদারের নাম জমা পড়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নদ-নদী দখলদারের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছেই। এ অবস্থায় নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণ প্রয়োজন। প্রয়োজন নদ-নদীর তীর সংরক্ষণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ইতোমধ্যে ৪৮টি নদ-নদীর প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান সরকার আশা দিয়েছে প্রতি জেলায় একটি করে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে। সরকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা দূষণমুক্ত করবে বলে জানিয়েছে। সরকারের এ আশা বাস্তব রূপ পাবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

  • শিক্ষক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা