প্রেক্ষাপট
এইচ এম মশিউর রহমান
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৬ এএম
পোশাকশিল্প দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। এ শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও অন্যতম এক মাধ্যম। সহজ করে বললে পোশাকশিল্পের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও প্রত্যাশা অনেকাংশে নির্ভর করে। অথচ গত বছরজুড়েই নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে এগিয়েছে এ খাতটি। শ্রমিক অসন্তোষসহ নানান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কাঁচামাল সরবরাহ ও প্রাপ্তি এবং যথাসময়ে অর্ডারকৃত পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে আমদানিকারক দেশসমূহের মধ্যেও দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। যার প্রভাব পড়েছে পোশাক খাতে। অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তৈরি পোশাক খাতের অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে শিল্পমালিকরা বলছেন, জ্বালানির সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ ও ব্যাংক খাতের অস্থিতিশীলতা এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, গত এক বছরে তৈরি পোশাক নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল শিল্পের ১৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৭৬, নিট খাতে ৫০ ও টেক্সটাইল খাতে ১৪টি কারখানা রয়েছে। এক বছরে ১৪০টি কারখানার মোট ৯৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে বলেও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন। সব মিলিয়ে ছোটবড় দেড় শতাধিক কারখানার ১ লাখের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলছেন, কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি সমস্যা, শিল্পে অব্যাহত গ্যাসসংকট, গ্যাস ট্যারিফ বৃদ্ধি, বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না পাওয়া, অব্যাহতভাবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। আবার বহু কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকপক্ষ।
দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ অবদান রাখা শিল্পে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি বাজারে ভাগ বসাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো। এতে কারখানার মালিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমন দীর্ঘমেয়াদে দেশের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরকে যত দ্রুত সম্ভব এ গভীর গহ্বর থেকে টেনে তুলে আবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আগের স্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। বৈশ্বিক গুরুত্বের দিক দিয়ে পোশাকশিল্প দেশকে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে নিয়েছিল, তা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে ধাবিত হতে পারে। এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পোশাকশিল্পের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সবার সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। এ খাতে অস্থিরতার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য সম্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।
দেশের রপ্তানি আয়ের ৮২ থেকে ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। গত শতাব্দীর আশির দশকে ১২ হাজার ডলার রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে নাম লেখায় আমাদের পোশাকশিল্প। এখন সে শিল্প থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হচ্ছে। পোশাকের মাধ্যমে বিশ্বকে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, যা আমাদের গৌরবের। এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জিংয়ের মধ্যে পার করছে আমাদের পোশাক খাত। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ শিল্প খাতগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেন ঠিক রাখা এবং নতুন পণ্য ও বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। তা হলেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সম্ভব।