× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল

অপেক্ষা করছে হয়তো আরও ভয়াবহতা

মিং পান

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪২ এএম

মিং পান

মিং পান

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী দাবানলে মৃত্যু বেড়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা সতর্ক করে বলছে, ভয়াবহ এ দাবানল ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ যে ঝোড়ো বাতাস, সেই সান্তা আনা তুলনামূলক শান্ত থাকার পর আবার বাড়তে পারে। সবচেয়ে বড় দাবানলটি ছড়িয়েছে প্যালিসেইডসে। এখানকার ২৩ হাজার একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে এবং ১১ শতাংশ এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। ইটনের দাবানল দ্বিতীয় বৃহত্তম। এ অঞ্চলের ১৪ হাজার একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণে আছে ২৭ শতাংশ এলাকার আগুন। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসে এত ভয়াবহ পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক আবহাওয়া শুষ্ক বাতাস প্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে চলে। আর এ বাতাসের প্রবাহের ফলে লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তপ্ত পরিবেশে দাবানলের সৃষ্টি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের ফলে হাজারো বাড়ি এবং অন্যান্য অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মূলত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান ডিয়েগোর সেন্টার ফর ওয়েস্টার্ন ওয়েদার এবং ওয়াটার এক্সট্রিমস প্রতিষ্ঠানে হাইড্রোলজিস্ট হিসেবে গবেষণা করছি। গবেষণায় মূলত এ রাষ্ট্রের পানি সরবরাহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক আবহাওয়া এবং ওই অঞ্চলের মানচিত্র ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে অনেক আঙ্গিক খুঁজে পেয়েছি। এ গবেষণার মাধ্যমে ক্যালিফোর্নিয়া আর লস অ্যাঞ্জেলেস কতটা শুষ্ক পাওয়া গেল তার একটি বিস্তৃত বিবরণ আমরা প্রকাশ করেছি। জানুয়ারির অগ্রভাগে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মাটির ময়েশ্চার পর্যবেক্ষণ করা হয়। তখন ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে অঞ্চলটির মাটির আর্দ্রতা অন্তত ২ শতাংশ কম ছিল। আর আনুপাতিক হারে সংখ্যাটিও অনেক কম। একটি ম্যাপে আমরা ক্যালিফোর্নিয়ার মাটিতে কম আর্দ্রতার হার ও ভয়াবহতা দেখিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের ৪০ ইঞ্চি গভীরের মাটি স্যাম্পল হিসেবে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি। অক্টোবরের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশ স্বচ্ছ হতে শুরু করে এবং ওই সময় মূলত ক্যালিফোর্নিয়ার মাটি কিছুটা হলেও আর্দ্র হয়ে ওঠে। মূলত ওই মাসেই ক্যালিফোর্নিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলেসের সুপেয় পানির প্রবাহ বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসের যে কয়টি অঞ্চল দাবানলে জ্বলছে, সেগুলোর মধ্যে প্যালিসেইডস ও ইটন অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের সাধারণ কারণ হিসেবে বজ্রপাতকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এবার এ দুই অঞ্চলে বজ্রপাতের কারণে দাবানল হয়নি। কেউ আগুন দিয়েছে বা গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ থেকে দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে; এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি। বজ্রপাতের পর এ দুটি উৎসকেই দাবানলের সবচেয়ে বড় দুই কারণ হিসেবে ধরা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া ২০২২-২৩ সালে বেশ আর্দ্র ছিল। ফলে ওই সময়ে সেখানে বিপুল গাছপালা জন্মেছে। কিন্তু পরের বছরের খরার কারণে সেই আর্দ্রতা শুকিয়ে গিয়েছিল। এতে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ছোটখাটো দাবানলের সৃষ্টি হয়েছিল।

গত বছরের অক্টোবর থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রগুলোতে কেবল দশমিক ৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই নজিরবিহীন শুষ্ক সময় এবং সান্তা অ্যানা হিসেবে পরিচিত সমুদ্রের শক্তিশালী ঝোড়ো হাওয়া একসঙ্গে মিলে দাবানল সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো জায়গায় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অল্প বৃষ্টি ঝরে। এজন্য বর্ষার মৌসুম আর শীতে পানি সংরক্ষণ এবং সরবরাহ ভালো রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। অন্ততপক্ষে পানি সংরক্ষণ করার জন্য অবকাঠামোও নির্মাণ করতে হয়। সুপেয় পানির জন্য ক্যালিফোর্নিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলেস বৃষ্টির ওপর বেশি নির্ভর করতে পারে না। তাই তারা সিয়েরা স্নোপ্যাকের মাধ্যমে সুপের পানির এক-তৃতীয়াংশ চাহিদা পূরণ করতে পারে।

সমস্যা হলো, দক্ষিণে ক্যালিফোর্নিয়া এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৪-২৫ সালে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। নভেম্বরের দিকে বায়ুমণ্ডলীয় নদীর মতো আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে সেখানে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু পানির চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। তারপর বায়ুমণ্ডলীয় নদীর অধিকাংশই পশ্চিম উপকূলের দিকে যেতে শুরু করে, বিশেষত ওয়াশিংটন ও ওরিগনে বেশি দেখা যায়। যখন আবহাওয়া শুষ্ক থাকে এবং পানি শুকিয়ে যেতে শুরু করে তখন উদ্ভিদের স্বেদনপ্রক্রিয়া এবং পানির বাষ্পীভবন যদি দ্রুত ঘটে তাহলে উদ্ভিদ ও মাটির পানি দ্রুত শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে উদ্ভিদের পাতা ও শাখাপ্রশাখার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শুষ্ক হয়ে ওঠে। আর তীব্র গরমে যখন উদ্ভিদ গোছা বাঁধে তখন ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়া মুহূর্তের বিষয়। লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল মূলত এভাবেই ঘটেছে।

উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে পানি ও স্নোপ্যাক অবকাঠামো যথেষ্ট ভালো এবং উন্নত। কিন্তু দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক আবহাওয়া ও তীব্র গরম ভয়াবহ। তা ছাড়া অঞ্চলটিতে পানিস্বল্পতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়াতে চলতি বছর কি ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে? অন্তত আমাদের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে উত্তরটি কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে দেখা জরুরি। কারণ গোটা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বিষয়টির এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। জানুয়ারির অগ্রভাগে দক্ষিণ সিয়েরা স্নোপ্যাক কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামনের সময়ের পূর্বাভাস দিতে পেরেছে। তাদের তথ্যানুসারে মার্চের দিকে অঞ্চলে খরা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। খরা তীব্র আকার ধারণ করলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এবং এমন ভয়াবহ দাবানল একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অধিকাংশ আবহাওয়াবিদ লা নিনাকে প্রধান বলে মনে করছেন। লা নিনা মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের এক ধরনের প্যাটার্ন। বিশেষত প্যাসিফিক মহাসমুদ্রে ২০২৫ সালে এ তাপমাত্রার প্যাটার্ন আরও বদলাতে শুরু করবে। লা নিনার মতো পরিস্থিতি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক পরিস্থিতির প্রধান কারণ। সমস্যা হলো, সব ধরনের লা নিনা ক্যালিফোর্নিয়াকে সমানভাবে পরিবর্তন করতে পারে না। একেক সময় পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এ ধরনের পরিবর্তন ঘটে।

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু এখনও দাবানল কমার আশার আলো দেখা যায়নি। বরং বিপজ্জনক ঝোড়ো বাতাসের গতি বাড়ার সতর্কতা জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যা থেকে দাবানল আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দাবানলে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের বড় অংশ কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। প্যালিসেইডস দাবানলের বিস্তার ঠেকাতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই দাবানল ব্রেন্টউড এবং অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ সান ফার্নান্দো উপত্যকার দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও নাটকীয়ভাবে খারাপের দিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। 

এ মুহূর্তে লস অ্যাঞ্জেলেস কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ায় যদি বৃষ্টিপাত বাড়তে শুরু করে তাতেও উষ্ণতার সমস্যা দূর হবে না। কারণ দাবদাহ এবং শুষ্ক আবহাওয়া ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। অর্থাৎ দুয়েকবার বড় বৃষ্টি হলেও দাবানল কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ক্যালিফোর্নিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী দেখা গেছে অনেক। তাই এত দ্রুত ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক আবহাওয়া কত দূর বাড়বে তা আন্দাজ করা কঠিন। সামনের মাসে পরিস্থিতি কতটা বাজে দিকে যাবে, তার পূর্বাভাস দেওয়াও সম্ভব নয়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রার গড়পতন সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এটুকু নিশ্চিত, শুষ্ক এলাকায় বসবাসরত প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। তারা যে ঝুঁকিতে রয়েছে তা অনুধাবন করেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো ভয়াবহ দাবানলের মর্মন্তুদতার মুখোমুখি হতে হবে।

  • সিনিয়র হাইড্রোলজিস্ট রিসার্চার, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ডিয়েগো

দ্য কনভারসেশন থেকে অনুবাদ : আবেদিন আকাশ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা