× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শুল্ককরের বোঝা কমানো হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৭ পিএম

শুল্ককরের বোঝা কমানো হোক

চলমান উচ্চমূল্যস্ফীতির মধ্যেই শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূসক বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর শর্ত হিসেবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে গ্রাহকের ওপর এই করের বাড়তি চাপ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে এ সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এনবিআরের প্রস্তাব পাস করা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। এসব সেবার মধ্যে খরচ বাড়ছে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও। প্রকাশিত খবরটি মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য দুঃসংবাদই বটে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এ প্রস্তাব ইতোমধ্যে শীর্ষ মহলে অনুমোদিত হয়ে প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায়। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘করের চাপে মোবাইল গ্রাহক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে এনবিআর। এতে সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল সেবার ওপর ৩ শতাংশ সম্পূরক কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে এনবিআর। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ রয়েছে, নতুন করব্যবস্থায় মোবাইল রিচার্জে খরচ আরও বেড়ে যাবে। এখন ১০০ টাকা রিচার্জ করলে বর্তমানে কর বাবদ ৫৪ দশমিক ৬ টাকা কাটা হবে। এতে করের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। এ সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ গ্রাহকের ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগে মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলা কমাতে পারে। এতে রাজস্ব আরও কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

সময়টা এখন তথ্যপ্রযুক্তির। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোন কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ই-কমার্স, শিক্ষা এবং পেশাগত কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান বলছে শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগ এমন একসময় নেওয়া হলো, যখন দেশে মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে মোবাইল ফোনের গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে। গত সরকারের শাসনামলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা, রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর দিতে হয় ২০ দশমিক ৪ টাকা। মানে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সব মিলিয়ে কর দেন ৫৪ দশমিক ৬ টাকা। তবে এখন সম্পূরক শুল্ক যদি আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো হয় তাহলে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত মোবাইল সেবার ওপর সাধারণ মানুষের নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিতে পারে।

মোবাইল গ্রাহকসেবার মান নিয়ে প্রায় সব অপারেটরের বিরুদ্ধে এমনিতে নানা অসন্তোষ বিরাজমান। সেখানে সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ না নিয়ে কর বাড়ানো কার্যত কতটা যৌক্তিক, তা দেখার বিষয়। নানা সময়ে গ্রাহক পর্যায় থেকে আপত্তি ওঠার পরও এখনও কলড্রপ ও নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রায়ই একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে ও বুঝতে অসুবিধা হয়। এসব সমস্যার সমাধান না করে কর বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করা কি জরুরি ছিল? তুলনামূলক মূল্যায়নে দেখা যায়, ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম থাকলেও করের ক্ষেত্রে শীর্ষে। দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনও ইন্টারনেট সেবার বাইরে, সেখানে নতুন করে এ উচ্চকর আরোপ তাদের আরও পিছিয়ে দেবে এটা সহজে বলা যায়। সিদ্ধান্তটি বৈষম্যমূলক এবং সমাজে নতুন ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। আমরা মনে করি, গ্রাহক পর্যায়ে মতামতের আগে এ সিদ্ধান্তটি এড়ানো উচিত ছিল। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন রাখব, কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সেবার মান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে। সরকারের উচিত হবে কর বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং জনগণের সামর্থ্য ও তাদের মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া। আমরা আশা করছি শুধু মোবাইল ফোন সেবা নয়, আরও যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক ও করের হার বাড়ানো হয়েছে সেগুলো জনস্বার্থে পুনর্বিবেচনা করা হবে। মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই হাসফাঁস অবস্থায় থাকা সাধারণ মানুষ যেন নতুন করে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির জাঁতাকলে পড়ে না যায় সে দিকটি সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা