× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে নথিগুলো উদ্ধার জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০১ এএম

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে নথিগুলো উদ্ধার জরুরি

‘বারান্দায় রাখা দুই হাজার মামলার নথি গায়েব’ শিরোনামে চমকে দেওয়ার মতো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে ৭ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ। আদালতের বারান্দায় রাখা মামলার নথি গায়েবের খবরটি শুধু বিস্ময়করই নয়, রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়ের সামনের বারান্দা থেকে গায়েব হয়ে গেছে ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথি (কেস ডকেট বা সিডি)। নথিগুলো খুঁজে না পাওয়ায় ৫ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর পিপি কার্যালয়ে ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেস ডকেট রক্ষিত ছিল। পিপি কার্যালয়ে জায়গা-স্বল্পতার কারণে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে পিপি কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় প্লাস্টিকের বস্তায় ১ হাজার ৯১১টি মামলার কেস ডকেট পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় রাখা ছিল। ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর আদালতের অবকাশকালীন ছুটির সময়ের মধ্যে নথিগুলো হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি থানায় ডায়েরিভুক্ত করে রাখার জন্য আবেদন করা হলো।’

চট্টগ্রাম আদালতে নথি হারানোর ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার অবকাশ নেই। যেকোনো মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য নথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আদালতে বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে যেমন তেমনি বিচার সম্পন্ন মামলারও জন্য নথি গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিচারপ্রার্থী যখন ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হন, তখন নথিই তার পক্ষে কথা বলে। আবার একজন বিচারপ্রার্থী যদি মনে করেন নিম্ন আদালতের রায়ে তিনি ন্যায়বিচার পাননি, তখন সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চতর আদালতে বিচার চাইতে যাওয়ার পাথেয় ওই নথি। আদালতে নথিই বিচারপ্রার্থীর পক্ষে কথা বলে, আদালতে নথিই বড় প্রমাণ যা ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বড় ভূমিকা রাখে। বিচারিক কাজে সিডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগপত্রের সঙ্গে আদালতে সিডি জমা দিতে হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিডিতে মামলার ধারাবাহিক অগ্রগতির বিবরণ লিখে রাখেন। তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হলে নতুন কর্মকর্তাও একই সিডিতে বিবরণ লেখেন। সে অনুযায়ী আদালতে সাক্ষ্য দেন। সিডি থাকলে ৫ থেকে ১০ বছর পরও সাক্ষ্য দিতে সুবিধা হয়। নইলে মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

চট্টগ্রাম আদালতের বারান্দা থেকে এত বিপুল সংখ্যক মামলার নথি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখার অবকাশ নেই বলেই আমরা মনে করি। একই সঙ্গে আমরা এও মনে করি, বিচারের সঙ্গে জড়িত এমন গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ কেনইবা এভাবে হেলায় ফেলে রাখা হলো, তাও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। এত বিপুল সংখ্যক নথি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম আদালতের বারান্দা থেকে যে ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথি গায়েব হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, এগুলোর বড় অংশই হত্যা মামলার নথি। এ ছাড়া হারিয়ে যাওয়া নথিগুলোর মধ্যে মাদক, চোরাচালানসহ অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথিও ছিল। নথি না থাকলে যেহেতু অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন, তাই স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে সচেতনভাবেই নথিগুলো কেউ গায়েব করে দিয়েছে। যদি তাই হয়, তবে তা আদালতের নিরাপত্তাব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

আদালত প্রাঙ্গণ সুরক্ষিত একটি স্থান। সিসি ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রতিটি আদালতের নিরাপত্তার অংশ। এই নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কী করে এত বিপুল সংখ্যক নথি গায়েব হয়ে যায়, তা একটি বড় প্রশ্ন। আর বিচারব্যবস্থায় নথি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, সেক্ষেত্রে এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেন দীর্ঘদিন বারান্দায় ফেলে রাখা হবে? কেন সেগুলোর রাখার জন্য যথাযথ স্থান বরাদ্দ দেওয়া হবে না, সে প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে, নথিগুলোর নকল তৈরি করতে পারবে। কিন্তু সেগুলো তো আর মূল নথি হবে না। ফলে বিচারের ক্ষেত্রে আদালতে তার আবেদনও দুর্বল হয়ে যাবে, যা বিচারব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করবে। এটি একদিকে যেমন অনেক আসামিকে সুবিধা দেবে, আবার অনেক বিচারপ্রার্থীর সুবিচার নিশ্চিতের পথেও বাধা তৈরি করবে। আমরা মনে করি, স্পর্শকাতর বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যার বা যাদের অবহেলায় নথিগুলো হারিয়ে গেছে, তাদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি যেমন আমরা জানাই, তেমনি হারিয়ে যাওয়া নথিগুলো উদ্ধারের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পথের বাধাও দূর করার জন্য বলি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা