× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:১২ এএম

কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হোক

এখন সবজির ভরা মৌসুম। বাজারে শীতের সবজির বিপুল সমারোহ। হরেক রকম সবজির বৈচিত্র্যময় পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সরবরাহ বাড়ার কারণেই কমেছে সবজির দাম। এতে ক্রেতারা স্বস্তি পেলেও  লোকসানে পড়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। আগাম সবজিতে তারা ভালো দাম পেলেও এখন দাম পড়ে গেছে। চাষের খরচই উঠছে না। ফলে বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের। ‘ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচছে’ শিরোনামে ৫ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কৃষকের হতাশার কথাই স্পষ্ট করেছে। ফলন বাড়লে কৃষকের আনন্দে দিনাতিপাত করার কথা। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় তাদের নেই আনন্দ অনেকটা ম্লান। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অধিক দামে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে চাষাবাদ করে সবজি উৎপাদন করলেও বিক্রির বেলায় দর পাচ্ছেন না। কোন কোন ক্ষেত্রে বিক্রির দরে তাদের জমি থেকে পণ্য তুলে বাজারে নেওয়ার খরচই উঠছে না। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ক্ষেত্রে চিত্রটি ছিল ভিন্ন।

গত বছরও কৃষক সবজির ভালো দাম পেয়েছেন। এটা মাথায় রেখে এ বছরও বেশি করে সবজির আবাদ করেছেন তারা। পেয়েছেন বাম্পার ফলনও। কিন্তু এবারে সবজির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে খরচও উঠছে না প্রান্তিক কৃষকের। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পাঠানো প্রতিবেদকের পাঠানো তথ্যে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সবজির দামে ভোক্তা স্বস্তি পেলেও খরচের টাকা তুলতে না পেরে পথে বসতে চলেছেন কৃষক। এমনকি কোথাও কোথাও খরচ না ওঠার শঙ্কায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলতেও নারাজ। কৃষকের উৎপাদন খরচ না ওঠার এমন চিত্র যেমন দুঃখজনক, তেমনি আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জন্যও অশনিসংকেত। এতে তারা সবজি উৎপাদনে নিরুৎসাহিতই হবেন। দেশের অন্যতম সবজি বাজার হিসেবে পরিচিত বগুড়ার মহাস্থান হাটে প্রতি মণ ফুলকপি যেখানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, সেখানে রাজধানীতে প্রতি পিস ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রির চিত্র ও বাজার নিয়ন্ত্রকদের দৌরাত্ম্য স্পষ্ট করে। এ শুধু ফুলকপির বেলায়ই নয়, প্রতিটি সবজিতেই একই চিত্র লক্ষণীয়। এখানে উভয় সংকট বিদ্যমান, বেশি দাম মানে ক্রেতার কষ্ট, দাম কমা মানে কৃষকের মাথায় হাত! আমরা জানি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে একটি নিয়ন্ত্রণবিধি থাকে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসা পর্যন্ত দামের একটা ভারসাম্য থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে বিষয়টির অনুপস্থিতি বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। সুযোগের ফায়দা নিচ্ছে একটি শ্রেণী। তাই বাজারের ভারসাম্যের নিয়ন্ত্রণ বিধি থাকা দরকার।

কৃষি উৎপাদনে কৃষকের খরচের হিসাব করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তবে এখনও পর্যন্ত এবার প্রতিষ্ঠানটি চলতি শীত মৌসুমে প্রতি কেজি সবজির দাম কত পড়ছে, তা নির্ধারণ করতে পারেনি। ফলে কৃষককেও তার উৎপাদিত পণ্য লোকসান দিয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক যে উত্তর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দিয়েছেন, তা গ্রহণীয় তো নয়ই বরং দায়সারা এবং দায়িত্বহীন। তিনি বলেছেন, ‘পণ্যের দাম নির্ধারণে তো কৃষকের বিক্রিতে কিছু আসে-যায় না।’ আমরা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কাছে যেমন দায়হীন মন্তব্য প্রত্যাশা করি না, তেমনি দায়িত্বশীল কারও দায় এড়িয়ে যাওয়ারও অবকাশ আছে বলে মনে করি না।

আমরা মনে করি, কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ জরুরি। সেইসঙ্গে পণ্যের বিকল্প ব্যবহার বাড়াতেও সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণে ‘মূল্য কমিশন’ গড়ে তোলার বিষয়েও আমরা তাগিদ দেই। সেইসঙ্গ সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের পণ্য সংগঠিত হয়ে বাজারজাত করার মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ কমাতেও উদ্যোগী হতে হবে। একই পণ্য কয়েকবার হাতবদল হওয়া, পরিবহন খরচ এবং চাঁদাবাজির কারণেও পণ্যের দাম ভোক্তাপর্যায়ে অসহনীয় হয়ে ওঠে। এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে সমাধানের মাধ্যমে কৃষক ও ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি দূর করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রয়োজন পরিকল্পনাভিত্তিক চাষাবাদ। একই সময়ে সবাই একই ধরনের ফসল উৎপাদন না করে বাজারে চাহিদার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ফসল উৎপাদনের দিকেও নজর দেওয়া যেতে পারে। সেইসঙ্গে মৌসুমের শুরুতেই বীজ, সার, মজুরিসহ আনুষঙ্গিক সব খরচের হিসাবের মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায়, তাহলেও কৃষককে লোকসানের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষককে উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি কৃষি বিপণন নীতিমালা প্রণয়নে জোর দেবে। উৎপাদন ব্যয় যাতে না বাড়ে এবং প্রয়োজনে কৃষি পণ্যে ভর্তুকির ব্যবস্থা যায় সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চিত করা জরুরি। যার মাধ্যমে কৃষকের অধিকার রক্ষা পাবে, তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে প্রান্তিক কৃষক যেন কোন অবস্থায় ক্ষতির শিকার না হন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা