× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২৫ এএম

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

শীত নিয়ে সাধারণ বাঙালি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের আদিখ্যেতা নেই। থাকবেইবা কী করে? প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিবছর শীত এলেও ঋতুটি আমাদের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। বরং শীতের সঙ্গে শত্রুতাই বেশি। সেই শত্রুতার কারণ আমাদের গরম কাপড়ের অভাব। সেটি দেখিয়ে গেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘প্রার্থী’ কবিতায়। তিনি লিখেছেন, ‘হে সূর্য, তুমি তো জানো,/ আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!/সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে/এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,/ কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!/ সকালের এক টুকরো রোদ্দুর-/ এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।’

শীত আসে গুটিগুটি পায়ে। প্রথমে হাল্কা মৃদু চালে। তারপর হঠাৎ কয়েকটি নিম্নচাপে ভর করে। তখন শীত হানা দেয় দুর্ধর্ষ ডাকাতের মতো। তার আক্রমণ শানিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। সে যতই নতুন সবজির ঘ্রাণ নিয়ে আসুক, যে যতই ফসলের উন্মাদনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলুক, তার শান দেওয়া আক্রমণ, সে যত স্বল্পস্থায়ীই হোক না কেন, কিন্তু তখন ‘জলের উঠেছে দাঁত কার সাধ্য দেয় হাত’? কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতার পঙক্তি তখন আরও বেশি সত্য হয়ে ওঠে যারা তীব্র ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পথের পাশে কখনও শুকনো পাতা, প্লাস্টিক কুড়িয়ে আগুন জ্বালায়। আবার কখনও বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, ফুটপাত, উড়ালসড়কের নিচে জড়োসড়ো হয়ে রাত কাটায়। তাদের কাছে শীত উপভোগের নয়। কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতার মতো, ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’ বলে তাদের অপেক্ষা করারও সুযোগ নেই। বর্ষা ও শীত দুই-ই তাদের কাছে সমান কষ্টের। তবে শীতের তীব্রতায় তাদের ভরসাস্থল থাকে না। 

৪ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশে ‘ঘনকুয়াশায় বেড়েছে শীতের দাপট, সঙ্গে দুর্ভোগও’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত চার দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তথা দিনের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। কুয়াশার কারণে রাজধানীতে রাত-দিন একাকার হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এ অবস্থা আরও তিন থেকে চার দিন চলার আভাস দেওয়া হয়েছে। ৩ জানুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। পৌষের শেষে এসে শীতের এই দাপটে অনেক স্থানেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশার সঙ্গে অতিরিক্ত ঠান্ডায় শ্রমজীবী অনেক মানুষই কাজে যেতে পারছে না। ফলে তাদের আয়-রোজগারও বন্ধ হওয়ার পথে। এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আবারও শৈত্যপ্রবাহের হানা দেওয়ার কথা। যা শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষের বিপদের শঙ্কা বাড়াচ্ছে। 

ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের সহায়তায় ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তবে তা যে যথেষ্ট নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সহৃদয় মানুষের বদন্যতায় আবার স্বেচ্ছাসেবী নানান সংস্থার উদ্যোগেও শীতবস্ত্র, কম্বল বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত উত্তরবঙ্গে শীতার্ত গৃহ ও বস্ত্রহীন মানুষের বাঁচার যে আকুতি, তা সামান্য কম্বলে মেটে না। তা খুব বেশি ভরসারও হয়ে ওঠে না। কনকনে বাতাসে খোলা স্থানে টিকে থাকাও এক বিভীষিকা। অসহায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন গরম কাপড় ও খাবার। এ সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদের। সামর্থ্য পুরুষ তবুও বাইরে শুকনো পাতা, প্লাস্টিক পোড়ানো আগুনে ওম নেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু শিশু, মহিলা ও বয়স্কদের সে সুযোগও কম। তাই সরকারের পাশাপাশি আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে যেমন তেমনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফেও ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানাই। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে উদ্যোগী হতে বলি। শীতার্তদের পাশে আমাদের সাধ্যানুযায়ী দাঁড়াতে হবে।

পথের পাশে ঠাঁই নিয়ে যারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ প্রয়োজন। ঋতু বৈচিত্র্যে প্রতিবছর শীত আসবে। শীত চলেও যাবে। কিন্তু নিরন্ন, বস্ত্রহীন অসহায় মানুষের সহায়তার প্রয়োজনে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। শীতার্ত মানুষ যেন আগামী বছর একই সমস্যায় না পড়ে, তারা যেন শীতে দুর্ভোগ না পোহায় সেদিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারকে নজর দিতে হবে শীতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দিকেও। শীতে সর্দি-কাশি, চর্মরোগ, পেটের রোগ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানামুখী রোগের প্রকোপ বাড়ে। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে ঘনকুয়াশায় যেহেতু দৃষ্টিসীমা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়, তাই সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চালক ও ট্রাফিক বিভাগকে আরও বেশি সতর্ক ও দায়িত্বশীল আচরণ করার তাগিদও আমরা দিই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা