× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংস্কার ও নির্বাচন

বিতর্ক নয়, অঙ্গীকারের প্রতিপালন করুন

হোসেন আবদুল মান্নান

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪ পিএম

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:২২ পিএম

বিতর্ক নয়, অঙ্গীকারের প্রতিপালন করুন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিক ও জনগণের কিছু অংশের মধ্যে আশা-নিরাশার দোলাচল রয়েছে। রাস্তাঘাটে, পথে-প্রান্তরে, বাসে, ট্রেনে, চায়ের দোকানের আড্ডায় সর্বত্র সাধারণ মানুষের মুখে একটাই কথাÑ অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বারা অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে তো? নানা প্রশ্ন উঠছে আমজনতার মধ্যে। কারণ তারা গোপন ব্যালটে ভোট দিতে প্রায় ভুলেই গেছে! দেশের ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সি যুবক শ্রেণির মানুষের একটা বিরাট অংশ এখনও ভোট প্রদানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেনি। অথচ জনগণ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপন করতে চায়। তাদের কাছে নির্বাচনের দিনটা হবে গ্রামে, পাড়ামহল্লায় গ্রামীণ হাটবাজার বা মেলার মতন। প্রার্থী, সমর্থক, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই যে-যার মতো করে ভোটের পিছে দৌড়াবেন ভোটারের সমর্থন পাওয়ার জন্য, তাদের মন জয় করার জন্য। এমনটাই সাধারণের আশা ও প্রত্যাশা। মানুষ নিরাপদে কেন্দ্রে যাবে, স্ব স্ব ভোটার আইডি কার্ড প্রদর্শন করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, পূর্ববর্তী জনকে সুযোগ করে দেবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার বা দায়িত্বপ্রাপ্তরা সাধারণ ভোটার ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর এজেন্টের নিরাপত্তা বিধান করবেন।

মানুষ নির্ভয়ে ও নিঃশঙ্কচিত্তে তার পছন্দসই প্রার্থীর পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিমিত্ত ভোটের আগেই দেশব্যাপী এমন পরিবেশ সৃষ্টি হোক। এটা এখন সময়ের দাবি। আগামী নির্বাচনের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নির্বাচনব্যবস্থা যেভাবে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে গত রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলে, তা তো কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। এর বহুমাত্রিক ক্ষতি এবং অপচ্ছায়া দেশ-জাতির ওপর ফেলেছে তা সরানোর দায়িত্ব পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে। তা করতে তাদের সময়ের প্রয়োজন।

দুই

এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা ইতঃপূর্বে বাতিল করা হয়। এর আগে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকেও এতদ্‌সংক্রান্ত একটা রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে পূর্ববর্তী সরকার সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে। বাতিলের কারণ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রলম্বিত হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছিল। তবে তত্ত্বাবধায়কের আগের রেওয়াজ বহাল থাকলে আসন্ন এ সরকারের প্রধান হবেন সুপিম কোর্টের সর্বশেষ অবসরগ্রহণকারী প্রধান বিচারপতি। সে ক্ষেত্রে দেশের মানুষের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নাম আগেই সুস্পষ্ট হয়ে থাকত। সহজেই বোঝা যেত পরবর্তী নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান কে হবেন বা হতে যাচ্ছেন। কিন্তু অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেননা নির্বাচন ঠিক কবে, কোন মাসে, কোন তারিখে হবে তার রোডম্যাপ প্রকাশিত হয়নি। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা সরকারপ্রধান এখনই দৃশ্যমান নয়। অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন প্রশ্ন সেটা বড় নয়, মূল চ্যালেঞ্জ প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা। কোনো কোনো আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।

তিন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়ে দেশের মানুষের একটা বড় অংশের সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করার মূল কারণ হলো অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা; বিগত অনেক নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার অব্যক্ত দুঃখবোধ। তখন ভোটে পেশিশক্তির ব্যবহার, কালো টাকার দাপট, হুমকিধমকি, মামলা-মোকদ্দমার ভয়ভীতি কমবেশি সবই বিরাজমান ছিল। এ ক্ষেত্রে কেবল গত তিনটি নয়, এর আগের দুয়েকটি বিতর্কিত নির্বাচনের কথাও স্মরণযোগ্য। একই সঙ্গে কেবল সম্প্রতি পতিত সরকার নয়, অতীতের অন্য রাজনৈতিক সরকারের কথাও বলা যায়। গ্রামে-গঞ্জের সাধারণ শ্রেণির মানুষ ইতোমধ্যে হতাশা ব্যক্ত করার আরেক কারণ হচ্ছে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের বেপরোয়া গতিবিধি, অশালীন আচরণ, অফিস-আদালত, ব্যবসাবাণিজ্যে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে নীরব চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকা ইত্যাদি। ফলে তৃণমূলের মানুষ সত্যিই শঙ্কিতবোধ করছে। ভাবছে এরাই হয়তো একটা নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ, সুশৃঙ্খল নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই সময় থাকতেই এদের এমন অপ্রতিরোধ্য গতি প্রতিহত ও রুখে দিতে হবে। অন্যথায় দেশে-বিদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ কর্মকাণ্ডগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সমূহ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

চার

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নতুন আরেক অপরাধের কথা শোনা গেছে এবং তা বাস্তবে অনেক স্থানে ঘটেছেও। তা হলো, কালো টাকার মালিক এমন প্রার্থীদের দ্বারা তার নির্বাচনী এলাকার বড় বড় কেন্দ্রে মোতায়েনকৃত সব জনবল অর্থের বিনিময়ে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। এতে প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে আনসার সদস্য পর্যন্ত সবাই আকারে ইঙ্গিতে, সরাসরি বা প্রচ্ছন্নভাবে তার পক্ষে কাজ করে যাবে। তারা সেই প্রার্থীর সমর্থনে জাল ভোট দিতে সহায়তা করবে। কেউ কেউ একাধিকবার কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও এর কোনো প্রতিবাদ করবে না, প্রতিপক্ষের অভিযোগ আমলে নেবে না, লোকদেখানো তৎপরতা প্রদর্শন করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে তারা আগেই উপজেলা কার্যালয় থেকে নিজেদের পছন্দমতো প্রিসাইডিং অফিসার তাদের চিহ্নিত কেন্দ্রে পদায়ন করিয়ে নেয় এবং তা করা হয় যথেষ্ট গোপনীয় যোগসাজশে। এর সঙ্গে প্রতিপক্ষ জনপ্রিয় প্রার্থীর সম্পর্ক থাকে না। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বাইরে কোনোরূপ বাধা বা দৃশ্যত প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। ভোটাররা কেন্দ্রের ভেতরে নিরাপদে প্রবেশ করলেও সবাই ভোট দিতে পারবে এমন গ্যারান্টি থাকবে না। বাহ্যিক অবস্থা বা পারিপার্শ্বিকতা থেকে বোঝা যাবে, কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে কিন্তু বাস্তব চিত্র হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

পাঁচ

জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার উভয় নির্বাচনেই দুর্বৃত্ত ও ভোট ডাকাতরা নানা অপকর্মের জাল বিস্তার করে থাকে। তারা নতুন নতুন প্রযুক্তিগত কলাকৌশল উদ্ভাবন করে। নির্বাচনে কোনো কোনো প্রার্থী ভাড়াটিয়া গুন্ডা, সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্রধারীকে শহর থেকে আমদানি করে থাকে। তারা রেজিস্ট্রেশনবিহীন হোন্ডা আর মাইক্রোবাস ভর্তি করে এদের নিয়ে চলাচল করে থাকে। অভিজ্ঞতা বলে, দুয়েকদিন আগেই তারা কেন্দ্রভিত্তিক বিরাট অঙ্কের টাকা পৌঁছে দিয়ে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর স্থানীয় প্রতিনিধিরা রাতের আঁধারে তা ভোটারের ঘর পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়ে থাকে। এ অবৈধ অপপন্থা অবলম্বনকারীদের রুখতে না পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে সারা দেশে আগাছার মতো বেড়ে ওঠা এসব সমাজ বিনষ্টকারী জঞ্জাল সাফ করে তবেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সমতাভিত্তিক মাঠ প্রস্তুতের সাহসী অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে। শতভাগ নিরাপত্তা দিতে হবে সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক ও জনপ্রিয় প্রার্থীকে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক ভালো দলের চেয়ে ভালো ব্যক্তি ইমেজ ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। সৎ-যোগ্য মানুষের আস্থার স্থল হোক অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা।

ছয়

নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে, এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিতর্কের আবসানে মনোযোগ গভীর করতে হবে। সংস্কারের দাবি তো রাজনৈতিক দলগুলোরও ছিল সমান্তরালে। যে পরিস্থিতির ওপর ভর করে জুলাই-আগস্ট প্রেক্ষাপটে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতাবান রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটিয়েছে তা সবাইকে আমলে রাখা বাঞ্ছনীয়। জনঅধিকার হরণসহ অবিরাম দুর্নীতি এবং বহুমাত্রিক কদাচারের যে অপচ্ছায়া ছড়িয়েছিল, তা সরাতে হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এত অল্প সময়ে এর চূড়ান্তকরণ কঠিন। কিন্তু ন্যূনতম সংস্কার জরুরি ভিত্তিতে করে নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত মনে করি। নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়া করে যেন মূল কাজগুলো বাদ পড়ে না যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও জনগণের স্বার্থের বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। আমাদের রাজনীতির অর্জন কম নয়, কিন্তু এও তো অসত্য নয় যে অর্জনের বিসর্জনও অনেক। এমনটি নিশ্চয় কারওরই কাম্য ছিল না। দেশ গড়ার, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার রাজনীতিকরা ব্যক্ত করেন বারবার; কিন্তু এর ফল কখনোই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দৃশ্যমান নয়। রাজনীতিকদের দায়বদ্ধতার কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার মনে রেখে এগোতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা