× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

তেল নিয়ে তেলেসমাতির উৎসে নজর দিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৩০ এএম

তেল নিয়ে তেলেসমাতির উৎসে নজর দিন

মূল্যস্ফীতির টানা কশাঘাতে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত তখন সম্প্রতি ভোজ্য তেল নিয়ে কারসাজির চিত্র সংবাদমাধ্যমে ফের উঠে এসেছে। ২১ ডিসেম্বর ‘ভোজ্য তেলের বাজারে এ কোন ভোজবাজি’ শিরোনামযুক্ত প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে প্রতীয়মান হয়, ভোজ্য তেল আমদানিকারক ও সরবরাহকারীরা তাদের ইচ্ছামতো চলছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে ভোজ্য তেলের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৩ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বাকি ২১ লাখ টনের চাহিদা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। ভোজ্য তেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৫ মাসে চাহিদার চেয়ে আমদানি হয়েছে অনেক বেশি। আমরা জানি, দেশে ভোজ্য তেল আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় হাতে-গোনা কয়েকটি কোম্পানি যুক্ত এবং তারা তাদের ইচ্ছামাফিক ব্যবসার নামে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। 

চাহিদার নিরিখে অনেক বেশি আমদানির পরেও বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বিস্ময়কর যুগপৎ প্রশ্নবোধক। আমরা দেখেছি, কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন ও পামওয়েলের মূল্য লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা আসে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের তরফে। তারপর বাজারে সরবরাহ বাড়লে এবং পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও কেন ফের সংকট সৃষ্টি হলো এর উত্তর দেওয়ার দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষেরই কমবেশি রয়েছে। ভোজ্য তেল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে ৬৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত তেল আমদানির পরও কোন অদৃশ্য ইশারায় এ ফের তেলেসমাতির প্রেক্ষাপট তৈরি করলেন কারা? আমরা জানি, সয়াবিন ও পামতেলের পর অপরিশোধিত সূর্যমুখী ও কেনেলার তেল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে যাতে আমদানিকৃত তেল দেশে পৌঁছেÑ এ লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরও ভোজ্য তেলের বাজারে যে পরিস্থিতি দৃশ্যমান তা কারসাজি বৈ কিছু বলে আমরা মনে করি। আমরা জানি, সিন্ডিকেট গড়ে দীর্ঘ সময় ধরে অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীগোষ্ঠী ভোক্তার পকেট কেটে নিজেদের উদর পূর্তি করছেন। বিস্ময়কর হলো, প্রায় সব সরকারের শাসনামলেই সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বরাবরই স্বীকার করেছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারও এর বাইরে নয়। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কি অসাধুদের স্বেচ্ছাচারিতার দরজা উন্মুক্ত থাকে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রচলিত থাকলেও তাদের ক্ষেত্রে বাজারে এমন অশুভ প্রবণতার নজির বিরল।

আমরা দেখছি, দীর্ঘদিন ধরে কোনো না কোনো পণ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিলেও এর যথাযথ প্রতিকার-প্রতিবিধানের দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায় সব নিত্যপণ্য নিয়েই তেলেসমাতি কাণ্ড করে থাকেন, তবে তেল নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত তেলেসমাতির নজির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে গুটিকয়েক তেল আমদানিকারকের কাছে ভোক্তারা জিম্মি। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যেভাবে স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন এর কেন দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার নিশ্চিত করা যাচ্ছে নাÑ আমরা এ প্রশ্নের উত্তর প্রত্যাশা করি। কোনো কোনো আমদানিকারকের তরফে সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে ভোজ্য তেল আমদানি কমে গেছে এবং বাজারে চাহিদার নিরিখে সরবরাহ নেই। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি শুধু যে ভোক্তার জন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি করছে তা-ই নয়, সরকারের জন্যও বিষয়টি স্বস্তির নয়। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দ্রুত বৈঠকে বসে জানতে চেয়েছেন, সমস্যা কোথায়? ব্যবসায়ীরা বললেন, ‘এই দামে তো পোষাচ্ছে না।’ তারপর সিদ্ধান্ত হলো, প্রতি লিটারে ৮ টাকা মূল্য বৃদ্ধির। আমদানি দাম ও পরিশোধন ব্যয় কত হয় এবং এর নিরিখে সঠিক দাম নির্ধারিত হয় কি নাÑ এ প্রশ্নটি নতুন কিছু নয়। আমরা জানি, অন্তর্বর্তী সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপই নিয়েছে। কিন্তু এর পরও সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে, সর্বশেষ লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর পর ‘লুকানো’ ভোজ্য তেল পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে সরবরাহ হয় এক রাতেই। এই পরিস্থিতি সাক্ষ্য দেয়, প্রকৃতপক্ষে ভোজ্য তেলের কোনো সংকটই ছিল না।

বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কেটে নিজেদের পকেট স্ফীত করে বারবার পার পেয়ে যাবেন তা তো হতে পারে না। ভোজ্য তেল আমদানি করে দেশে পরিশোধন ও বোতলজাত করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমদানি মূল্য ও পরিশোধন ব্যয়ের পর এর প্রকৃত মূল্য কত দাঁড়াল এবং কত দামে সেই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে তা কি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ কখনও নেওয়া হয়েছে? গুটিকয়েক কোম্পানি ভোজ্য তেল আমদানি করে তারা তাদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করবে আর ভোক্তা ও সরকার দুপক্ষই অসহায়ত্ব বোধ করবে তা তো হতে পারে না। আর কয়েক মাস পরেই পবিত্র মাহে রমজান এবং তখন সংগত কারণেই ভোজ্য তেলসহ আরও কিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই ‘মওকা’ নিতে এখনই অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন!

আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই ইতোমধ্যে অনেকবার বলেছি, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্র, সরবরাহ ব্যবস্থা ও চাহিদার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সার্বিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোর নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। মুক্তবাজার অর্থনীতির মানে এই নয়, ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছে তা-ই করবেন আর সরকার চেয়ে চেয়ে তা দেখবে। বস্তুত বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকে আরও অনমনীয় অবস্থান নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ভোজ্য তেল নিয়ে যে কারসাজি চলছে এর নিরসন আশু করতে হবে। এমন নৈরাজ্য কোনোভাবেই চলতে পারে না। আমরা মনে করি, দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার-প্রতিবিধানের নজির যদি সামনে থাকে তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি-আস্ফালন অনেকটাই থেমে যাবে। ভোজ্য তেল নিয়ে ফের যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এর প্রতিবিধানে আমদানিকারক-মজুদদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের গুদামে সাঁড়াশি অনুসন্ধান চালানো জরুরি বলেও আমরা মনে করি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা