পরিপ্রেক্ষিত
মো. হেলাল মিয়া
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২৬ এএম
যুগের চাহিদা অনুয়ায়ী মানুষের উচ্চশিক্ষা ও উচ্চতর গবেষণার প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকি আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে বাংলাদেশে গুটিকয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনের পর প্রয়োজন ও চাহিদার নিরিখে বাড়তে দেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং উচ্চশিক্ষাপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি প্রতিযোগিতাও বাড়তে থাকে। দেশে বর্তমানে পঞ্চাশের অধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে গত কয়েক বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিলেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়। এতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়। বর্তমানে কয়েকটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ভেঙে যাওয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য হতাশার এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের।
অনেক অভিভাবকের পক্ষেই সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানের ভর্তি পরীক্ষার ফরম কেনা সম্ভব নয়। আবার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা-যাওয়ার খরচ মেটানোও সবার পক্ষে সম্ভব না। সেইসঙ্গে রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানের একই দিনে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ও। আমরা সবার জন্য শিক্ষার কথা বলছি, কিন্তু একই সঙ্গে শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবেও গণ্য করছি। অথচ শিক্ষা হতে হবে সেবা। ২০২০-২১ সেশন থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি চালু হওয়ায় অভিভাবকদের আর্থিক ব্যয় ও হয়রানি কম হয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ভোগান্তি, থাকাখাওয়ার সমস্যায়ও পড়তে হয়নি। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমেছিল বহুলাংশে। আবার একই দিনে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঝামেলাও ছিল না। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধা ছিল অনেক।
সরকার বর্তমানে দেশের সব চাকরি পরীক্ষার আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যেখানে চাকরির আবেদন ফি ২০০ টাকা, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি অগ্রহণযোগ্য ও লজ্জাজনক। মূলত অধিক মুনাফা লাভের আশায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ভেঙে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা। বড় একটি পদ্ধতিতে কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। সে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের পথ বের করতে হবে। কিন্তু সমাধানের পরিবর্তে পদ্ধতিটিই ভেস্তে যেতে পারে না। দেশে এখনও সমন্বিত পদ্ধতি মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এবং সমন্বিত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের পরীক্ষা পদ্ধতি আরও শানিত করতে পারে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে অযৌক্তিক ভর্তি ফি যেমন বাতিল করতে হবে, তেমন যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য স্থানে নিয়োগ দান করতে হবে। তা হলেই বাস্তবায়িত হবে সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচি।