× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মধ্যপ্রাচ্য

সিরিয়ার পুনর্গঠনে জরুরি বিষয়গুলো

লুবনা মাসারওয়া

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২৪ এএম

লুবনা মাসারওয়া

লুবনা মাসারওয়া

সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে সামরিক অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন বাশার আল-আসাদ। ফলে কয়েক দশক ধরে চলা আসাদ পরিবারের নৃশংস শাসনের অবসান ঘটেছে। সিরিয়ার মানুষ আপাতত মুক্তির উল্লাসে ব্যস্ত। কিন্তু বাশারের পতনের পর দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্রোহী এইচটিএস নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি সিরিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন কি না এখনও নিশ্চিত নয়। সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেয়ার পেডারসন সিরিয়ার সব গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। এইচটিএস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করে বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত চলমান সমস্যাগুলোর কথাও উল্লেখ করেছেন জোলানি। পরিস্থিতি যে গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে তাতে করে আগে থেকেই সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনুমান করা বেশ কঠিন। তবে বিবিসির সঙ্গে কথা বলা কয়েকজন বিশ্লেষক দেশটির ভবিষ্যতের সম্ভাব্য তিনটি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন।

আসাদ সরকারের পতনের পর সবচেয়ে ভালো ঘটনার মধ্যে দায়িত্বশীলভাবে দেশ শাসনের জন্য এইচটিএস অন্য বেসামরিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে কাজ করতে দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিশোধ এবং লুটতরাজের চক্রে পড়ে প্রতিবেশী দেশগুলো যে নতুন সংঘাতের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল তা এড়িয়ে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে তারা জাতীয় মীমাংসার পথ তৈরি করতে পারে। এখন পর্যন্ত জোলানি সিরিয়ার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও পারস্পরিক সম্মানের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সিরিয়ার অনেক গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ফিলিপস বলেন, বাস্তবে আমরা এমন এক অনিশ্চিত জায়গায় আছি যেখানে এইচটিএস একটি কার্যকর ও শান্তিপূর্ণ পালাবদলের চেষ্টা করছে। কিন্তু পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল। দক্ষিণের যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কখনও আসাদ পরিবারের কর্তৃত্ব স্বীকার করেনি তারা নতুন দামেস্ক সরকারকে মানবে বলেও মনে হয় না। পুবদিকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের একটি অংশ এখনও হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে, যার ফলে মার্কিন বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলো দেশের উত্তর-পূর্ব অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সিরিয়ার উত্তরের তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আর সম্প্রতি এ এলাকায় নতুন সংঘাত দেখা দিয়েছে। ২০১১ সালের পর থেকে সিরিয়ার বাইরে অনেক বিরোধী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক ব্লক গঠিত হয়েছে। তারাও দেশে ফিরে রাজনৈতিক পালাবদলের অংশ হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। সুইজারল্যান্ডের লউজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সিরিয়া আফটার দি আপরাইজিংস বইয়ের লেখক জোসেফ দাহের বলেন, একটি ঐক্যবদ্ধ সরকারের সম্ভাবনা অনিশ্চিত। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো কিছু ঘটলে সেখানে স্বাধীন নির্বাচন, ক্ষমতা ভাগাভাগি এবং বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া আরও ঐক্যবদ্ধ শক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে তা হওয়া এখনও বাকি। দাহেরসহ অন্য বিশ্লেষকরা মনে করেন জনসম্মুখে জোলানির দেওয়া প্রথম ভাষণে অসঙ্গতি ছিল।

আসাদ শাসনের মতো করেই স্বৈরাচারী উপায়ে এইচটিএসও ক্ষমতা একীভূত করবে এমন আশঙ্কাও আছে। জোলানি ইতোমধ্যে ইদলিবে তার শক্তিশালী ঘাঁটি তৈরি করেছে, যা একসময় উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী ঘাঁটি এবং অন্যান্য সিরিয়ান প্রদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪০ লাখ মানুষের আবাসস্থল ছিল। এইচটিএসের অধীনে ন্যাশনাল স্যালভেশন গভর্নমেন্ট ইদলিবের বেসামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে শরিয়া আইন অনুসরণ করা একটি ধর্মীয় পরিষদও রয়েছে। জোলানি দেখানোর চেষ্টা করছেন যে, স্থিতিশীলতা এবং জনসেবা অগ্রাধিকার দিয়ে এইচটিএস সুশাসন করতে পারে। তবে সমালোচকরা বলছেন, ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করার সময় তার দল প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে কোণঠাসা এবং ভিন্নমত দমন করেছে।

এইচটিএসের নেতৃত্বে ২৭ নভেম্বর চালানো আক্রমণের আগে ইদলিবে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানকার কট্টর ইসলামপন্থি ও সিরিয়ান অ্যাকটিভিস্টরা এইচটিএসের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল। এইচটিএস মূলত দমনপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা সুসংহত করেছে। যদিও পরে ইদলিবের সব বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সেবা দিয়ে ক্ষমতা একত্র করেছে। তবে তাদের শাসনেও কঠোর দমনপীড়ন ও রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব সমালোচনার জবাবে এইচটিএস কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে; যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা একটি বিতর্কিত নিরাপত্তা বাহিনীকে ভেঙে দিয়েছে এবং নাগরিকদের অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য একটি বিভাগ তৈরি করেছে। তবে সমালোচকদের মতে, এ সংস্কারগুলো আসলে ভিন্নমত দমনে নিছক এক মুখোশ মাত্র। এইচটিএসের দাবি, সিরিয়ার অগ্রগতি এবং আসাদ সরকারের শাসনকে চূড়ান্তভাবে অপসারণের জন্য ইদলিবে ক্ষমতা সুসংহত করার প্রয়োজন ছিল। তবে দাহেরের মতে, এইচটিএস এ মুহূর্তে একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।

এসব পরিস্থিতির বিপরীতে গিয়ে সবচেয়ে খারাপ যেটা হতে পারে, সেটা হলো আরব বসন্তের পর অন্য দেশগুলোর মতোই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া। কোনো বিকল্প ছাড়াই লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইরাকে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর বিদেশি হস্তক্ষেপ দুটি দেশেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কারণ হয়েছিল। সমালোচকদের মতে, স্বৈরাচারী শাসকদের পতনের ফলে তৈরি হওয়া শূন্যতা পূরণ হয়েছিল লুটপাট, প্রতিশোধ, ক্ষমতার দখল এবং গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে। এমন প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা দেশটিকে ব্যাপক সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে; যা কেবল সিরিয়া নয়, পুরো অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। সিরিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী যে দুটি পতাকা পেছনে রেখে ভাষণ দিয়েছেন তার একটি ছিল ‘বিপ্লবের পতাকা’ এবং আরেকটি দেখতে তালেবানের পতাকার মতো; যা অনেককে হতবাক করেছে। এটি নির্দেশ করে যে, নতুন সরকার তালেবান মডেল অনুসরণ করে শরিয়া আইন দ্বারা পরিচালিত একটি ইসলামি রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, এটি দেশটির সংখ্যালঘু এবং বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং প্রশ্ন তৈরি করছে। এ ধরনের একটি গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটি আরও বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে, যা জাতীয় সংহতি এবং শৃঙ্খলা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ তিনটি সম্ভাব্য পরিণতি বিদেশি শক্তির কার্যক্রমের ওপরও নির্ভর করবে। আসাদ দীর্ঘ সময় ধরে ইরান এবং রাশিয়ার সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছেন। অন্যদিকে তুরস্ক, পশ্চিমা দেশ আর উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছে। শেষ কয়েক দিন ধরে ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো লক্ষ করে আক্রমণ করেছে এবং সিরিয়ার নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলের বাইরে গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের কার্যক্রমের কথা স্বীকার করেছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা আসাদের দেশত্যাগের পর থেকে সিরিয়ায় শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে এবং সিরিয়ার বেশিরভাগ কৌশলগত অস্ত্রভান্ডার ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে না দেওয়ার বিষয়ে সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীকে সতর্ক করেছেন। এর মাধ্যমে ইসরায়েল আসাদ সরকারের পতনের সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো। ফিলিপস সতর্ক করেছেন যে, ইসরায়েলের এ ধরনের কার্যকলাপ সিরিয়ার সরকারকে দুর্বল করে বা কঠোরপন্থিদের সাহস জুগিয়ে সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করতে পারে। ফিলিপস এবং দাহের উভয়েই এ বিষয়ে একমত যে, সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত যাতে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় এবং বিদেশি শক্তিগুলো সহজে মানবিক সহায়তা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন যেহেতু আসাদ সরকারের শাসন আর নেই তাই সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত এবং আমি মনে করি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং মানবিক সহায়তার মাত্রা ধরে রাখা, সম্ভব হলে তা আরও বাড়ানো।

  • ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের ব্যুরো চিফ, মিডল ইস্ট আই

মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা