প্রজন্মের ভাবনা
পাভেল সারওয়ার
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩০ এএম
আমি একটি সাধারণ পরিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আমার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা পড়াশোনা শেষে আলোকিত জীবনের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি কি এর অনুকূলে ? এর উত্তর নিশ্চয় প্রীতিকর নয়। আমরা অবিরাম স্বপ্ন দেখি আর অহরহ এর অপমৃত্যু ঘটে। আমরা অন্ধকারে তলিয়ে যাই এবং আবার জেগে উঠে সেই স্বপ্নই দেখি। এভাবেই কাটছে দিন। এক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ যেন শিক্ষাঙ্গন নয়, রণাঙ্গন। এর বিস্তর নজির আমাদের সামনে রয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় যা ঘটেছে তা এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
অভিযোগ আছে এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ২৫ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় কলেজটির তিনটি বহুতল ভবনের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় কম্পিউটারসহ মূল্যবান আসবাব। লুটপাট হয়েছে টাকা; তছনছ করা হয়েছে কাগজপত্র। এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল। আরও অভিযোগ আছে, মোল্লা কলেজে হামলার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। দলবদ্ধ হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলে পড়ে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পিঠে ব্যাগসহ কলেজের পোশাকপরা বেশ কয়েকজনকে রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী, কবি নজরুল, ঢাকা কলেজ এবং সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের মঙ্গলবারের চূড়ান্ত পরীক্ষা।
এটি একটিমাত্র উদাহরণ। রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটেছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। এরপর আমরা নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখলাম রাষ্ট্র সংস্কারের এবং সব কদাচার-দুরাচার-অনাচারের ছায়া সরাতে। কিন্তু বিগত ১০০ দিনেরও বেশি সময়ে কতটা পূরণ করা গেছে কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ কতটা কণ্টকমুক্ত এই প্রশ্নের উত্তরও কি জটিল নয়। দেশের তরুণ সমাজ নাকি দেশ নিয়ে আর ইতিবাচক কিছু ভাবে না ! এই বার্তা কি কোনোভাবেই প্রীতিকর ? এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কতটা অন্ধকার তা কি বলার অপেক্ষা রাখে ? কোন পথে চলেছে জাতি ?
আমরা স্বপ্নের অপমৃত্যু চাই না। আমরা আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাই। রাজনীতিকদের ইতিবাচক, দেশপ্রেমমূলক ভূমিকা দেখতে চাই। তাদের অনেকের স্ববিরোধিতার নিরসন চাই। আশা করতে চাই, তারা অতীতের ভুল স্বীকার করে নতুন করে প্রত্যয় ব্যক্ত করে দেশ-জাতির কল্যাণে যথাযথ ভূমিকা রাখবেন। এভাবে চলতে পারে না। নিজেদের কিংবা দলীয় এজেন্ডা বাদ দিয়ে দেশের, দেশের মানুষের কথা ভাববেন এবং ছাত্রদের হীনস্বার্থে ব্যবহারের পথ পরিত্যাগ করবেন। রাজনীতিকরা যদি সত্যিকার অর্থে প্রত্যয়ী না হন তাহলে অন্ধকার দূর করা কঠিন।
২৫ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরায় সংঘাতে আহতের সংখ্যা অনেক। সরকারের দায়িত্বশীলরা অনেক রকম কথা বলছেন। আমরা এতকিছু শুনতে চাই না। আমরা চাই নিরাপত্তা, শান্তি। আমরা চাই, আমাদের অধিকারের পথ কণ্টকমুক্ত হোক। দূর হোক বৈষম্য। প্রজন্ম বেড়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। বন্ধ হোক রক্তারক্তি। বর্তমানে দেশে যা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে স্বস্তিতে থাকার কোনো অবকাশ নাই। অনেক তরুণ নাকি দেশ ছেড়ে যেতে চায় ! যারা ভবিষ্যতের কর্ণধার তাদের এই মনোভাব নিশ্চয় জন্ম নিয়েছে হতাশা থেকে। রাষ্ট্রের ও রাজনীতির নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি ভাবুন। এই পরিস্থিতির নিরসন করুন দ্রুত। সময় অনেক বয়ে গেছে আর যেন সময় নষ্ট না হয়।