× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

রেললাইন প্রকল্পে অনিয়মের প্রতিকার হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০১ এএম

রেললাইন প্রকল্পে অনিয়মের প্রতিকার হোক

দেশে রেল চলাচলের পরিসর বিস্তৃতকরণের জনদাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক স্বার্থে এ জনদাবির প্রতি দৃশ্যত গুরুত্ব দেওয়া হলেও এর আড়ালে অনিয়ম-দুর্নীতির অনেক ঘটনাই ঘটেছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। ২৫ নভেম্বর ‘রেলের আইকনিক প্রকল্প, অনিয়মেও আইকনিক’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছেÑতা বিস্ময়কর যুগপৎ প্রশ্নবোধক। ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এক লাফে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে যা হয়েছে তা এককথায় বেশুমার লুটপাট বৈ কিছু নয়। শুধু অডিটেই ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আপত্তি উঠে এসেছে। একদিকে বিপুল আর্থিক অনিয়ম, অন্যদিকে এই প্রকল্পের কাজের নিম্নমান আমাদের ক্ষুব্ধ না করে পারে না। স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রকল্পের অবকাঠামোগত ত্রুটি দৃশ্যমান হচ্ছে স্তরে স্তরে।

এত বড় একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা কিংবা স্টাডি দরকার ছিলÑ তা করা হয়নি। মেগা প্রকল্প মানে মেগা বেনিফিট, বড় উন্নয়ন। কিন্তু দোহাজারী-কক্সবাজার মেগা প্রকল্পে ক্ষতের ওপর ক্ষত দৃশ্যমান। এই আইকনিক প্রকল্পের স্টেশনের স্থাপনাগুলোয় ফাটল দেখা দিয়েছে। তিনটি স্টেশন এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে কোনো সংযোগ সড়ক নেই, অর্থাৎ যাত্রীদের স্টেশনে আসার পথ রুদ্ধ। এতগুলো স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে বটে, কিন্তু কোনো স্টেশনেই থামে না স্পেশাল ট্রেন! এমনকি সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত স্টেশনেও স্পেশাল ট্রেনের বিরতি নেই! নয়টি স্টেশনের মাত্র তিনটিতে লোকাল ট্রেন থামে। এত বড় প্রকল্পে জনপ্রত্যাশার কথা চিন্তা করে যে স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হয়, এর ফল যেন এখন ‘অশ্বডিম্ব’।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অডিট অধিদপ্তর ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প ঘিরে অনিয়মের যে দীর্ঘ খতিয়ানের সন্ধান মিলেছে এর যথাযথ প্রতিবিধান হওয়া জরুরি। একটি মাত্র লোকাল ট্রেন ওই লাইনে চলছে বটে এবং সেটিও সব স্টেশনে থামছে না; এমনটি তো কোনোভাবেই জনআকাঙ্ক্ষা কিংবা প্রত্যাশা পূরণের নজির হতে পারে না। এই প্রকল্পের প্রয়োজনের নিরিখে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ হলেও প্রকৃতার্থে মানুষ কোনো সুফল পায়নি। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের লাগোয়া একটি ভবনে যে বিপদজ্জক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে তাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেলস্টেশন নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যও প্রশ্নবোধক। তিনি বলেছেন, ‘স্টেশন তৈরি করা আমাদের কাজ, সড়ক নির্মাণের কাজ এলজিইডির। তারা যদি তা না করে, তাহলে কিছু করার নেই।’ তার এই বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়Ñ এত বড় একটি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কতটা সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান।

আমরা জানি, বাংলাদেশ রেলওয়ের পুরোনো কিছু ব্যাধি আছে। এসব ব্যাধির কারণে রেলওয়ে লোকসানি খাতে পরিণত হয়েছে এবং অনিয়মকারী-দুর্নীতিবাজরা এসব ব্যাধির অন্যতম অনুষঙ্গ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে অসঙ্গতির শেষ নেই। গত বর্ষা মৌসুমে বন্যার সময় পানির তোড়ে এই লাইনে কী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তাও সচেতন মানুষ মাত্রই জানা। অদূরদর্শিতা-পরিকল্পনা ত্রুটি-বাস্তবায়নে অসঙ্গতি এসব নানাবিধ কারণে এত বড় একটি মেগা প্রকল্প প্রশ্নের মুখে পড়ার উৎসে নজর না দেওয়ার বিকল্প নেই। প্রকল্প মানেই যেন নয়ছয়ের ক্ষেত্র এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প এরই ফের সাক্ষ্য তুলে ধরেছে। স্টেশন আছে অথচ সংযোগ সড়ক নেইÑএটি কতবড় অসঙ্গতি, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন।

প্রকল্প নেওয়ার আগে যে সম্ভাব্য সমীক্ষা করা হয়েছে, সেটা তাহলে কীভাবে করা হয়েছিলÑআমরা এ প্রশ্ন রাখি। এই প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধিসহ ত্রুটিপূর্ণভাবে কার্যসম্পাদনের বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানক্রমে দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকারের দাবি জানাই। আমরা মনে করি, আমাদের যে বহুমাত্রিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতে সবার আগে সেটা বিবেচনায় রেখেই ফিজিবিলিটি স্টাডি করা বাঞ্ছনীয়। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপ্রকল্পের স্তরে স্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি-অদূরদর্শিতার ছাপ স্পষ্ট। আমরা মনে করি, ভবিষ্যতের বৃহৎ স্বার্থে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে প্রতিকার নিশ্চিত করা জরুরি। এই রেললাইন প্রকল্পটি জনচাহিদা-প্রত্যাশার অগ্রভাগে সংগত কারণেই ছিল। পর্যটনের বৃহৎ স্বার্থে তো বটেই, আনুষঙ্গিক আরও বহুবিধ প্রয়োজনেই নিখুঁত পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন যেখানে ছিল অপরিহার্য; সেখানে এ নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। কঠোর প্রতিকারই এর একমাত্র প্রতিবিধান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা