× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২৫ পিএম

বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে

বাজার সামলাতে অন্তর্বর্তী সরকারও যে হিমশিম খাচ্ছে তা ফের উঠে এসেছে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে। ১৩ নভেম্বর পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানো হলেও বাজারে বিশৃঙ্খলার কারণে দাম কমছে না। বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে এবং এটাই স্বাভাবিক।’ নিত্যপণ্যর দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, এ কথাও তিনি বলেছেন। ১৪ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ সহযোগী সংবাদমাধ্যমগুলোয় তার বক্তব্যের আরও কিছু অংশ উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেছেন, বাজারে গিয়ে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে দুই আঁটি শাক ও অন্য কিছু কিনলেই টাকা শেষ।

আমরা অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। তিনি যথার্থই বলেছেন, পণ্যের শুল্কছাড়ের সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অর্থাৎ অতিমুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে। আমরা জানি, ২ অঙ্কে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে সরকার আমদানি পর্যায়ে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু, ডিম ও ভোজ্য তেলের শুল্ক হ্রাস করে। কিন্তু এর কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক প্রভাব খুচরা বাজারে দৃশ্যমান নয়। বরং গত এক মাসে আলু, চাল, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ আরও কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই, নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্তদেরও জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। মানুষ দৈনন্দিন চাহিদায় কাটছাঁট করেও চলতে পারছে না। 

বাজারে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে থাকার পেছনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর নজরদারি-তদারকিতে ঘাটতি রয়েছে এমন অভিযোগ বহুলচর্চিত। আমরা দেখছি, বাজারে এখনও সিন্ডিকেটের অপচ্ছায়া রয়ে গেছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য সময় মানুষ মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে নাকাল হয়েছে। অনেকাংশেই দেখা গেছে, যেসব পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয় না এবং উৎপাদনও চাহিদার নিরিখে উদ্বৃত্ত, সেসব পণ্যের দামও সিন্ডিকেটের হোতারা দফায় দফায় বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তার পকেট কেটে নিজেদের উদরপূর্তি করেছেন। এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বহুবার বলেছি, সুশাসনের ঘাটতির কারণে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে আর অতিমুনাফাখোরদের রমরমা অবস্থা দৃশ্যমান। আমরা এও দেখেছি, ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার বাজারে স্বস্তি ফেরাতে দফায় দফায় পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি জোরদার করেছে নজরদারি-তদারকি ব্যবস্থা, গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। কোনো কোনো বাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঝটিকা অভিযানও পরিচালনা করেছে। তার পরও বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। অযৌক্তিকভাবে বাড়তি দাম দিয়েই নিত্যপণ্য ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে। বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর তাগিদও ইতোমধ্যে নানা মহল থেকে কম আসেনি। আমরাও বলেছিলাম, বাজারে যে চেইন রয়েছে তা ভাঙতে হবে, উৎপাদক বা আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরাÑ এসব পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা সুচারু করতে হবে। আমরা মনে করি, পণ্যের দাম কমাতে কিংবা ভোক্তার ক্রয়সাধ্যের মধ্যে আনতে শুধু শুল্কছাড়ই যথেষ্ট নয়, শুল্কছাড়ের সুফল ভোক্তারা প্রকৃতই পাচ্ছেন কি না এর অনুসন্ধান জরুরি। পণ্যের দাম কমাতে যে সুবিধা সরকার দিচ্ছে তা ভোক্তা পর্যায়ে না পৌঁছার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে বরাবরের মতোই অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন, ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন সুফল থেকে। আমরা জানি, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শেষ দিকে প্রায় টানা দুই বছরের বেশি সময় মূল্যস্ফীতির হার ছিল অধিকতর ঊর্ধ্বমুখী। অন্তর্বর্তী সরকারকেও সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের বাড়তি সুবিধা দিয়েও। এ সরকারের প্রথম দুই মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল অনেক বেশি।

টাকার প্রবাহ হ্রাস, শুল্কহ্রাস, সুদের হার বৃদ্ধি, বাজারে তদারকি ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েও কেন তার সুফল মিলছে না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সর্বাগ্রে জরুরি। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতে অর্থের জোগান বাড়ানোও সমগুরুত্বপূর্ণ। সরবরাহব্যবস্থায় সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা আরও জরুরি। অসাধুদের কারসাজির যে অদৃশ্য হাত বাজারে নাটাই ঘোরায় এর যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। স্বেচ্ছাচারী কিংবা অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিশৃঙ্খলার জাল ছিন্ন করতে হবে। এজন্য নজর দিতে হবে উৎস থেকে উৎসে। সরকার শুল্কপণ্যে ছাড় দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর চাপ বাড়িয়েও ভোক্তার সুফল প্রাপ্তির পথ সুগম করতে না পারার পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধান জরুরি। আমাদের বাজার অর্থনীতি ধ্রুপদি নিয়মে চলে না, এ কোনো নতুন কথা নয়। বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের হাত কোনোভাবেই আইনের হাতের চেয়ে লম্বা হতে পারে না। বাজারে কোথায় ও কীভাবে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে আইনি প্রতিবিধান নিশ্চিত করতে না পারলে ভোক্তার স্বস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা দুরূহই থেকে যাবে। মানুষ সঙ্গতই প্রত্যাশা করেছিল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু কার্যত সে রকম কিছুই হয়নি। সিন্ডিকেটের থাবা বিস্তার হয়েছে প্রায় সব ক্ষেত্রে।

অতীতে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে এও লক্ষ করেছি, ব্যবসায়ীরা বারবার অজুহাত দাঁড় করিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমাদের স্মরণে আছে, কিছুদিন আগে একজন উপদেষ্টা বিশেষ ক্ষমতা আইনে অসাধু ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। আমরাও মনে করি, বিদ্যমান পরিস্থিতির নিরসন ঘটাতে হলে সর্বাগ্রে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা যাতে পার পেতে না পারেন তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমদানিনির্ভরতা কাটাতে মনোযোগ গভীর করতে হবে যাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়। ঘাটে ঘাটে, বাজারে বাজারে চাঁদাবাজি এ-ও এক গুরুতর সামাজিক ব্যাধি। তা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বত্র শ্যেনদৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি অশুভ শক্তির মূলোৎপাটনে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সরকারের জন্য যে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা মোকাবিলা করতে হলে সরকারের দায়িত্বশীল সব পক্ষকে যূথবদ্ধ হতে হবে। বস্তুত চাহিদা ও সরবরাহে ধ্রুপদি নিয়মের কারণে নয়, বরং আড়তদার-আমদানিকারক-পাইকার ও খুচরা অসাধু ব্যবসায়ীরা কীভাবে পণ্যমূল্য নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চালাতে পারেন, তা আমাদের অভিজ্ঞতায় মূর্ত। এ সবকিছুর নিরসন ঘটিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায় সরকারেরই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা