× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পোশাক শিল্পে যৌথ ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩০ এএম

পোশাক শিল্পে যৌথ ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই

দেশের তৈরি পোশাক খাতে বিদ্যমান অস্থিরতা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা পর্যালোচনা কম না হলেও সংকটের নিরসন হচ্ছে না। আমরা দেখছি, বিগত রাজনৈতিক সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের বিভিন্ন খাতে অস্থিরতা শুরু হয় এবং এর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প খাত অন্যতম। এ খাতে বিরাজমান অস্থিরতার পেছনের কারণগুলোও আমাদের অজানা নয়। নিম্নতম মজুরি, হাজিরা বোনাস, মামলা প্রত্যাহারসহ ১৮টি বিষয়ে তৈরি পোশাক খাতের মালিক-শ্রমিকরা যে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন প্রায় দেড় মাস অন্তিমেও সেগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এই শিল্পের ছোট সমস্যাও বড় সংকটে পরিণত হচ্ছে। ১২ নভেম্বর ‘ছোট ইস্যু বড় সংকট’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে প্রতীয়মান হয়Ñ বিদ্যমান অস্থিরতার পেছনে তৃতীয় পক্ষের উস্কানির অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয়। আমরা জানি গাজীপুর, আশুলিয়া, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশে দেশের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা অবস্থিত। গত ৫ আগস্ট পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট সূচনার পরপরই এ খাতে নতুন করে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এর উৎসে নজর দেওয়ার তাগিদ এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা কিছুদিন আগে দিয়েছিলাম। সরকারের তরফে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর কেন সমাধান খুঁজে বের করা যাচ্ছে নাÑ এটি বড় প্রশ্ন।

প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে, ঢাকার আশপাশের শিল্প কারখানার শ্রমিকরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করছেন। এর ফলে শুধু উৎপাদন ব্যবস্থাতেই বিরূপ অভিঘাত লাগেনি, শ্রমিক-মালিকপক্ষের বহুমাত্রিক ক্ষতির চিত্রও স্ফীত হয়ে উঠছে। মধ্যে কিছুদিন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রচেষ্টায় শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ থাকলেও এর যে কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি, বিগত দুই-তিন দিনের পরিস্থিতি এরই সাক্ষ্য বহন করছে। দেশের অর্থনীতিতে রিজার্ভের পারদ ঊর্ধ্বমুখী হয় তৈরি পোশাক রপ্তানির মধ্য দিয়ে। রপ্তানি পণ্যের তালিকার অগ্রভাগে রয়েছে তৈরি পোশাক এবং এই পণ্যের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। এ খাতে অতীতেও অস্থিরতার বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে বটে, কিন্তু এবার দেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এই শিল্পে ইতোমধ্যে দফায় দফায় যে শ্রমিক অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়েছে তাতে নিরুদ্বিগ্ন থাকার কোনো উপায় নেই। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদনে বিজিএমইএ-এর সাবেক জনৈক পরিচালক বলেছেন, ‘একটা দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সেটাকে কেন্দ্র করে পঞ্চাশটা কারখানার শ্রমিকদের রাস্তায় নামানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ আমরা তার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। কারণ এই শিল্পের বিকাশের সঙ্গে শুধু মালিকপক্ষের স্বার্থই নয়, শ্রমিকদের স্বার্থও জড়িত। এ খাত কর্মসংস্থানের বড় একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে এবং বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যখন সাপ্লাই অর্ডার সময়মতো দেওয়া যাচ্ছে না, তখন বিদ্যমান পরিস্থিতি গোটা শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক উদ্যোক্তার অভিমত, কোনো কোনো কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে বটে, কিন্তু এই সমস্যাকে পুঁজি করে অন্যান্য কারখানায় দাবানলের মতো তাপ ছড়িয়ে দিয়ে যে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছেÑ তা গোটা শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। আমরা মনে করি, এত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই খাতকে এগিয়ে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে কারখানা পরিচালনায় মনোযোগ বাড়াতে হবে এবং নিরাপত্তার পাশাপাশি যথাযথ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মালিক-শ্রমিকরা যে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন এবং যৌথ ঘোষণা দিয়েছিলেনÑ এর বাস্তবায়ন কেন সম্ভব হলো না, আমরা এই প্রশ্নটি রাখতে চাই। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় শ্রমিক-মালিকপক্ষের এই যৌথ ঘোষণা এসেছিল এবং তাতে তারা ১৮টি বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। আমরা জানি, শ্রমিকদের বঞ্চনা নতুন নয়। গত বছর ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো নিয়েও তাদের অসন্তোষ ছিল। এরপর আবার কোনো কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা না দিয়েই কারখানা বন্ধ করে দেন। এর ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় এবং বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়।

আমাদের স্মরণে আছে, পোশাক শিল্পে বিদ্যমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অতীতে হতাহতের মতো মর্মস্পর্শী ঘটনাও ঘটেছে। আবার কখনও কখনও দেখা গেছে তৃতীয়পক্ষের তরফে এক্ষেত্রে উস্কানি দিতে। বিগত সমঝোতা বৈঠকে শ্রমিকদের জন্য রেশনব্যবস্থা চালু করতে মালিকদের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাশাপাশি সব কারখানায় শ্রমিকের হাজিরা বোনাস, টিফিন ও নাইট বিল বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু এসব কোনো কিছুরই অগ্রগতি হয়নি। শ্রমিকের ওপর দায়েরকৃত মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। ফলে সব মিলিয়ে ওই সমঝোতা বৈঠক ভেস্তে গেছে এটিই প্রতীয়মান হয়। আমরা বরাবরই বলেছি, শ্রমিক-মালিকপক্ষের হৃদ্য সম্পর্কের মধ্য দিয়েই বিদ্যমান সব সমস্যার সমাধান সম্ভব এবং একই সঙ্গে উৎপাদনব্যবস্থা সচল রেখে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথটি সুগম রাখাও কঠিন কিছু নয়। শ্রমিক শিল্প কারখানার প্রধান শক্তি। তাদের ক্ষুধার্ত কিংবা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শিল্পের বিকাশ অথবা কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক রাখা দুরূহ। আমরা মনে করি, এই খাতে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধসহ ১৬ দফা যৌথ ঘোষণা অবিলম্বে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের তেমন দাবিদাওয়া নেই, যা ছিল ইতোমধ্যে তা পূরণ হয়ে গেছে। তবে দুয়েকটি কারখানায় আন্দোলনের কারণে বাধ্য হয়ে আশপাশের কারখানাগুলোয় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে। অধিকাংশ শ্রমিক আন্দোলন চান না। তারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে চান এবং তারা মনে করেনÑ আন্দোলনে এ খাতের যে ক্ষতি হচ্ছে এর ভুক্তভোগী তারাও। কিন্তু এরপরও কেন দফায় দফায় শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসছেন, এর উৎসে নজর দেওয়া উচিত। আমরা মনে করি, কয়েকটি কারখানার অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার জন্য গোটা শিল্পে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে না। বিষয়টি সরকার এবং তৈরি পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে আমলে নেওয়া জরুরি বলেও আমরা মনে করি। সংকট যত দীর্ঘায়িত ও জটিল হবে, আমাদের অস্বস্তি-দুঃসংবাদের তালিকাও তত দীর্ঘ হবে।

মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থ জড়িত এবং শ্রমিক অসন্তোষসহ নানাবিধ কারণে ক্ষতির তালিকা ইতোমধ্যে কম দীর্ঘ হয়নি। ছোট ইস্যু যাতে বড় সংকটে রূপ না নেয় এ জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষকে সজাগ ও সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। সংখ্যানুপাতে বিশ্বে সর্বোচ্চসংখ্যক পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক কারখানা এখন বাংলাদেশে। এ খাতের টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা