প্রেক্ষাপট
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩০ পিএম
‘একসাথে শক্তিশালী : ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতার জন্য ইউনাইটেড’Ñ এই স্লোগান সামনে রেখে এবার পালিত হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতা মাস। বিশ্বজুড়ে ক্যানসার সচেতনতার এই মাসের শুরু ২০০০ সালে আমেরিকান ফুসফুস অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকার ফুসফুস ক্যানসার ফাউন্ডেশনের মতো একাধিক সংস্থার উদ্যোগে। ফুসফুস ক্যানসারের প্রতি মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস থেকেই অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এবং পেশাদার চিকিৎসকরা মাসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। এ মাসের উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। শুধু ধূমপান করলেই নয়, কীভাবে অধূমপায়ী ব্যক্তিও এই ক্যানসার আক্রান্ত ছড়াতে পারে, তা জানানোর উদ্দেশ্যেই নভেম্বর মাসে ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতা মাস উদযাপন হয়।
অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে যেকোনো বয়সেই ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে। অধূমপায়ী ব্যক্তিও ধূমপায়ী ব্যক্তির সংস্পর্শে ক্যানসার আক্রান্ত হতে পারেন। ধূমপান ছাড়াও ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম কারণ পরিবেশ দূষণ। মানবদেহের যেকোনো স্থানেই ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যানসারের সংখ্যাই বেশি। এ ক্যানসার থেকে নিজেকে রক্ষার প্রধান উপায় শারীরিক পরিশ্রম। সেই সঙ্গে এড়িয়ে চলতে হবে বায়ুদূষণ। এ ছাড়া নিজে তো ধূমপানমুক্ত থাকতে হবেই, সঙ্গে ধূমপায়ীদেরও ধূমপান থেকে বিরত রাখতে উৎসাহিত করতে হবে। বায়ুদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ অসুখের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
ফুসফুস ক্যানসার মারাত্মক ব্যাধি। প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করাও বেশ কঠিন। কারণ অন্যান্য ক্যানসার শনাক্তকরণে যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। ফুসফুসে ক্যানসার যখন শুধু ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে তখন সাধারণত কাশি, জ্বর, গলার স্বর পরিবর্তন, কাশির সঙ্গে রক্ত কিংবা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। অন্যদিকে ফুসফুস ক্যানসার যখন ফুসফুসে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে; যেমন হাড়ে ছড়িয়ে পড়লে প্রবল ব্যথা অনুভব হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যানসার মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে যেতে পারে, এমনকি অনেক সময় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করতে অজ্ঞান অবস্থাতেও নিয়ে আসতে হতে পারে। এটি লিভারে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এক্ষেত্রে পেটে ব্যথা কিংবা জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রোগটি কোন স্তরে আছে সেটির ওপর নির্ভর করেই চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ধূমপান না করা ও তামাক সেবন থেকে বিরত থাকা। এমনকি ধূমপায়ীর নিকট অবস্থান করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। শিল্পকারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া নির্গমন গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা জরুরি। ফুসফুসের নিরাপত্তা অনেকাংশেই নিজের হাতে। সতর্কতার সঙ্গে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এই ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যায়। আর ফুসফুসকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে খাবার। বয়স বৃদ্ধি, পরিবেশদূষণ এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের কারণে যাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাদের খাবারের তালিকায় বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। পানি পান শরীরের জন্য উপকারী। এটি ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কাঁচা হলুদে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কারকিউমিন, যা ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়।
মানব জীবনে যত দুরারোগ্য ব্যাধি আছে তার মধ্যে ফুসফুসে ক্যানসার একটি। তবে ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চললে ও জীবন চলায় স্বাস্থ্যবিধি মানলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসারের চিকিৎসা করাটা সহজ। ফুসফুসের ক্যানসার জটিল রোগ হলেও সচেতনতা এবং প্রতিরোধের জন্য চেষ্টাই ব্যক্তিকে সুরক্ষা দিতে পারে।