× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্তঃসীমান্ত নদী

আমাদের দুঃখ-কষ্টের প্রেক্ষাপট

মো. অহিদুর রহমান

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১৯ এএম

মো. অহিদুর রহমান

মো. অহিদুর রহমান

সাম্প্রতিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি কাবু হয়েছিল ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেট শহর। ২০১৭ সালে একইভাবে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে নেত্রকোণা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি, শেরপুর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, ধোবাউড়া, নেত্রকোণা সদর আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির কারণে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ‘২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোনো না কোনো এলাকায় আন্তঃসীমান্ত নদীতে আকস্মিক ঢল নেমেছে, ইউনিয়ন বা উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ফসল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, প্রাণিসম্পদ, অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এসব বন্যার জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদী, দুর্বল প্রতিরক্ষা বাঁধ ও হাওর অব্যবস্থাপনাকে অভ্যন্তরীণ কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছেÑ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলা নদী নির্যাতন ও অবাধ বৃক্ষ নিধনে সৃষ্ট ভূমিক্ষয় এ অঞ্চলের সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্যতায় নদ-নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। আবার বর্ষা মৌসুমে আকস্মিক ঢলে ব্যাপক সম্পদহানি হচ্ছে।

নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩২টি আন্তঃসীমান্ত নদী আছে। যে নদী বর্তমানে আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি কৃষিফসল জীবনযাত্রা প্রাণিসম্পদ, যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির বড় কারণ। নদীগুলো হলোÑ ব্রহ্মপুত্র, বরাক, সুরমা, গণেশ্বরী, মহাঢেউ, সুমেশ্বরী, নিতাই, ধলাই, চিতল, কোরাঙ্গী চিলানদী, ধনুনদী, ভোগাই, জুরি, উবদাখালি, কালাপানিঝরা, উমিয়াম, সোনাই, বরদল, পিয়াইন ও সারি-গোয়াইন, যাদুকাটা, জালুখালী-ধামালিয়া, নয়াগাং (খাসিয়ামারা), সুরমা ও কুশিয়ারা মনু, লংলা, খোয়াই, সুতাং ও সোনাই নদী ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে দুই দেশকে সংযুক্ত রেখেছে। আন্তঃসীমান্ত নদী বরাক ও তার উপনদীতে ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন বলে জানা গেছে। ছোট-বড় এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বরাক অববাহিকায় একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য বরাক নদীর সঙ্গে যুক্ত একাধিক নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম ও ত্রিপুরায় মজুদ করা হচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এই নদীর পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২০১৭ সালের বন্যায় হাওরে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়। মড়কের জন্য উজান থেকে ধেয়ে আসা রাসায়নিক বর্জ্যকে দায়ী করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে তারা যত্রতত্র বাঁধ না দেয়; পানি সরিয়ে নিয়ে না যায় কিংবা উজানে যাতে কলকারখানার রাসায়নিক দূষণ, নদীদূষণ না করে। বস্তুত উত্তর-পূর্ব ভারতে নদীদূষণ, বৃষ্টি, বন্যা হলে বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে দেশটির মণিপুর রাজ্যের জিরিবাম জেলার জিরি নদীতে ব্যাপক মাছের মড়ক দেখা দিয়েছিল মূলত দূষণের কারণে। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ছয় জেলায় মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে ৩২টি আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবেশ করেছে। মেঘালয় থেকে সুনামগঞ্জে প্রবেশ করেছে যাদুকাটা, জালুখালী-ধামালিয়া, নয়াগাং (খাসিয়ামারা), চলতি-উমিয়াম এবং সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে ধলা, পিয়াইন ও সারি-গোয়াইন নদী। আসাম থেকে সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। ত্রিপুরা থেকে মৌলভীবাজার জেলায় প্রবেশ করেছে সোনাই-বরদল, জুরী, মনু, ধলাই, লংলা নদী এবং হবিগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করেছে খোয়াই, সুতাং ও সোনাই নদী, নেত্রকোণা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে সুমেশ্বরী, মহাঢেউ, গণেশ্বরী, শেরপুরে চেল্লাখালি, নিতাই নদী। জেআরসি তথা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের তালিকাভুক্ত এই ১৬টি নদীর বাইরেও অন্তত ৩০টি নদী বা ছড়া মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা থেকে সিলেট বিভাগে প্রবেশ করেছে, যেগুলো জিআরসি তালিকাভুক্ত নয়।

আগে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করা উচিত, কারণ ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ করতে গিয়ে দেশটা এখন পঙ্গুত্বের পথে; রাষ্ট্রের কথা না ভেবে বন্ধুদের কথায় কান দিতে গিয়ে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সম্ভাবনাময় দেশটা যেন সব দিক থেকে বঞ্চিত, শোষিত, লাঞ্চিত। ভারত তাদের প্রয়োজনে তাদের সীমানায় বাঁধ দিয়েছে, তাদের প্রয়োজনে খুলবে, তাদের প্রয়োজনে বন্ধ করবেÑ এটাই স্বাভাবিক কারণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃত্রিম দুর্যোগ, গুজব দুর্যোগ ও রাজনৈতিক দুর্যোগ সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ মহাদুর্যোগে পড়ে ফিরে ফিরে। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে শেয়ার করা ৫৪টি নদীর ৩০টির ওপরই বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত! এতে নদী তার নাব্যতা ও ধারণক্ষমতা হারাচ্ছে। প্রতিবছর যখনই তারা পানির জন্য ডুবে যায় তখনই উজান থেকে পানি ছাড়ে। নতুন সরকারকে বলব, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা নদী, খাল খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাহলে শুকনো মৌসুমে খাল থেকে পানি নিয়ে ফসল উৎপাদন করতে পারবে আবার বর্ষার মৌসুমে পানি গিয়ে নদী-সাগরে পড়বে। সাধারণ মানুষের আর ক্ষতি হবে না।

আন্তঃসীমান্ত নদী, খাল, বিল, হাওরকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে এ এলাকার মানুষের জীবন, পেশা, কৃষি, ব্যবসা ও সংস্কৃতি। কিন্তু দিন দিন নদীগুলো বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ভরাট, দখল ও দূষণে সকল নদ-নদীই মৃতপ্রায়। জলাভূমির অন্যায় ইজারা, ভূ-প্রাকৃতিক ও জলবায়ু বিপর্যয়, করপোরেট কৃষির দ্রুত বিস্তার, উজানে বাঁধ ও কয়লাখনি প্রকল্প, লোভ ও লাভের বাণিজ্যিক আগ্রাসন, প্রতিবেশীয় নীতি ও সনদের লঙ্ঘন, হাওর প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশকে বিবেচনা না করে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, সব মিলিয়ে হাওর আজ আর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিকশিত নয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বইতে ১০০৮টি নদ-নদীকে তালিকাভুক্ত করেছে। ৫৪টি নদীর উৎস ভারতে এবং তিনটি মিয়ানমারে। হাওর নীতিমালা তৈরি, হাওরের নদী, বিল খনন করা, ফসলরক্ষা বাঁধ তৈরিকে দুর্নীতিমুক্ত করা, পাহাড়ের ছড়াগুলো খনন করা, হাওরের কৃষিজমি সুরক্ষায় আলাদা নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা, পানির সংকট নিরসনে প্রাকৃতিক জলাধার লিজ দেওয়া বন্ধ করা উচিত। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার জন্য অভ্যন্তরীণ একাধিক কারণ রয়েছে। এসব কারণ চিহ্নিত করে এ অঞ্চলের পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে তা সমাধানের দাবিও জানিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে পরিবেশবাদীরা সরকারকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ প্রদান করেছেন। আন্তঃসীমান্ত নদীর ব্যাপারে কূটনৈতিক পর্যায়ে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

  • পরিবেশকর্মী ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বারসিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা