× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন করুন, অনিশ্চয়তার ছায়া সরান

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৫ এএম

কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন করুন, অনিশ্চয়তার ছায়া সরান

বিশ্বায়নের এই যুগে শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। বিশ্বের দেশে দেশে দেখা যাচ্ছে, এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের জানা আছে, সমগ্র বিশ্বে যে দেশ যত দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে; সে দেশ শিল্প ক্ষেত্রে তত উন্নত। আমাদের দেশেও সেই চিন্তা ধারণ করে বেকারত্ব কমাতে সরকার কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিল। কিন্তু এসবই যে ছিল প্রায় কাগজে-কলমে লিখিত প্রত্যয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই এ জরুরি বিষয়টি সম্পর্কে বিগত রাজনৈতিক সরকারের ‘শুভংকরের ফাঁকি’ ছিল, তা-ই প্রতীয়মান হয় ৩ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে। সিপিডির গবেষণা ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যে চিত্র উঠে এসেছেÑ তাতে এমন মন্তব্য মোটেও অত্যুক্তি বলে মনে হওয়ার কারণ দেখি না।

সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ৮৭ শতাংশই এই শিক্ষার মানে সন্তুষ্ট নন। ২ নভেম্বর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে যে গবেষণা প্রতিবেদনটি সিপিডির তরফে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে এও প্রতীয়মান হয়Ñ কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে বিগত সরকারের সব প্রতিশ্রুতি এবং গৃহীত প্রকল্প ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ মান উন্নয়ন পরিকল্পনা ও গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরিখে দেশের মোট বাজেটের অনুপাতে কারিগরি শিক্ষার বাজেট বরাদ্দ খুবই কম, এক কথায় বিস্ময়কর। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উদ্দেশ্যে নেওয়া ১১৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছেÑ যার মধ্যে বারোটি প্রকল্পের অধিকাংশই নেওয়া হয়েছে ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে। এই প্রকল্পগুলো শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের মধ্যে। কিন্তু সময় গড়িয়ে আরও প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে, অথচ প্রকল্পগুলো কবে শেষ হবে কিংবা এগুলোর ভবিষ্যৎই-বা কীÑ তাও অনিশ্চিত।

বিদ্যমান শিক্ষা কাঠামো উন্নত না করে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের নামে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, ভবন নির্মাণÑ এ সবকিছুই যেন নীতিনির্ধারকদের ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো পরিকল্পনা। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, প্রকল্প নেওয়ার আগে সঠিকভাবে সম্ভাব্য সমীক্ষা করা হয়নি এবং এর ফলে বেশিরভাগ প্রকল্পই ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই এ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এতসব অসঙ্গতির প্রেক্ষাপটে সংগত কারণেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো কি অদক্ষতায় ভুগছে না? আমরা এ প্রসঙ্গে আরও প্রশ্ন রাখতে চাইÑ বর্তমান বিশ্বে তো বটেই, একই সঙ্গে বাংলাদেশেও কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব যেখানে আরও আগেই অনেক বেড়েছে; সেই বাস্তবতায় বিদায়ি রাজনৈতিক সরকারের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের চিন্তায় এত অসংগতি রেখে মান উন্নয়নের আশা দুরাশা বৈ যে কিছু নয়, তা কি তাদের মনে আসেনি? কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রকল্প হলোÑ উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন। ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। অর্থাৎ একেবারে নিকটে। কিন্তু এক্ষেত্রেও যে চিত্র দৃশ্যমান তা শুধু হতাশাজনকই নয়, প্রশ্নবোধকও বটে। এসব ব্যাপারে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর তরফে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কারও কারও প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে তাদের তরফে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হচ্ছে তাও অত্যন্ত দায়সারা গোছের। নিকট অতীতে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছিলাম, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বিগত সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে দক্ষ জনশক্তি গড়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছেÑ তা যতটা আড়ম্বরপূর্ণ ছিল কার্যত এর প্রতিফলন সে রকম কিছুই ঘটেনি। আমরা বিস্মিত, একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ মোট জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কার্যত কাগজে-কলমে যে অসংগতিপূর্ণ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তাতে প্রকৃতার্থে কোনো লাভ তো হয়ইনি, উপরন্তু রাষ্ট্রের অর্থ নাশ হয়েছে।

আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, বিগত রাজনৈতিক সরকারের আমলে এমন অনেক প্রকল্পই হাতে নেওয়া হয়েছেÑ যেগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে এবং রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্য দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভের বিষয়টি অগ্রগণ্য ছিল। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এও দেখেছি, কোনো কোনো প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় দ্বিগুণ করে একই সঙ্গে বরাদ্দও সেই অনুপাতে বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সেই প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখেনি। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও কি সেই পথেই হাঁটছে? কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত অনেক প্রকল্পের এখনও ভূমি অধিগ্রহণ শুরুই হয়নি, যেগুলো হাতে নেওয়া হয়েছিল অন্তত আরও ৫-৭ বছর আগে। এসব প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি যেন কচ্ছপ গতির সমান্তরাল। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এও দেখা যাচ্ছে, কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা কাগজে-কলমে সংরক্ষিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে! অথচ কারিগরি শিক্ষার বিকাশ না ঘটলে বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় দেশে এবং বিদেশের শ্রমবাজারে জনশক্তিকে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা কঠিন। আমাদের নীতিনির্ধারকরা জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার অতীতে অনেক প্রত্যয়ই ব্যক্ত করেছেন, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কাজের কাজ কতটা কী হয়েছে কারিগরি শিক্ষার দুরবস্থা এরই একটি খণ্ডিত চিত্র মাত্র। উপযুক্ত ও কর্মমুখী শিক্ষা না থাকলে কোনো দেশে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেও অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করা যায় না। আমাদের শ্রমশক্তির পরিসর ক্রমাগত বাড়ছে বটে, কিন্তু তা সময়ের চাহিদার নিরিখে কতটা উপযুক্তÑ এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমাদের কারিগরি শিক্ষায় আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিতÑএই প্রস্তাবনা বিভিন্ন মহল থেকে ইতঃপূর্বে বহুবার উত্থাপিত হয়েছে। আমরা এও দেখছি, কর্মমুখী শিক্ষা না থাকায় অনেকেই শিক্ষাজীবন শেষ করেও চাকরি পাচ্ছেন না।

বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের জরুরি প্রয়োজনেই কারিগরি শিক্ষাকে শিক্ষার মূলধারায় পরিণত করা সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি। ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ১৭ প্রকল্প নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এবং কারিগরি শিক্ষার মান নিয়ে অসন্তুষ্টির যে বিষয়টি উঠে এসেছে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এদিকে বিশেষ নজর দিয়ে এর সমাধান করার উদ্যোগ নেবেÑ আমরা সে প্রত্যাশাও রাখি। বেকারত্ব কমাতে এবং দক্ষ জনসম্পদ গড়তে কারিগরি শিক্ষার মানউন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সময়ক্ষেপণেরও অবকাশ নেই। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, ইতোমধ্যে সময় অনেক ক্ষেপণ হয়েছে, আর যদি তা হয় তাহলে আমাদের সম্ভাবনার আকাশ মেঘে ঢাকা পড়বে। এমনটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা