× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রেক্ষাপট

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের হুমকি

মো. তাহমিদ রহমান

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩৬ এএম

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের হুমকি

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুসারে তৎকালীন সরকার ২০০২ সালে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। পরবর্তী তিন বছর পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন প্রায় বন্ধই ছিল। বাংলাদেশই একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে আইন করে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আইনটি প্রত্যাহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন বলেন, ‘৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের প্রতি গ্রাম টিস্যুতে আমরা ৪ হাজার ৮০০ মাইক্রোগ্রাম (১ গ্রাম সমান ১০ লাখ মাইক্রোগ্রাম) প্লাস্টিক কণা পেয়েছি। এটি মস্তিষ্কের মোট ওজনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত পলিথিনের ব্যবহারের ফলে এটি খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে যার ফলে প্রজননপ্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ্যত্ব, ক্যানসারসহ ত্বকের নানানরকম রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাস্টিককণা উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষের ভেতর অবস্থিত ডিএনএ ও আরএনএ অণুর মধ্যে মিউটেশন ঘটিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করছে।

মানুষের রক্তেও এখন প্লাস্টিককণা পাওয়া যাচ্ছে। বেশির ভাগ শিশুখাদ্য পলিইথাইলিন, পলিস্টেরাইন দিয়ে তৈরি প্লাস্টিক প্যাকেটে মোড়ানো থাকে। অবুঝ শিশুরা এসব প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার সময় খাবারের কোনো অংশ প্যাকেটে লেগে থাকলে চেটে খায় ফলে এসব যৌগের প্রভাব সরাসরি তাদের শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের ভবিষ্যৎ নাগরিকের কথা ভেবে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশে পলিথিনের যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে প্লাস্টিকের পলিমার ছাড়াও থাকে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থÑ বিসফেনল-এ, থেলেট, থেলেট এস্টার, পলিভিনাইল ক্লোরাইড ইত্যাদি। প্লাস্টিককে নমনীয় করার জন্য এসব যোগ করা হয়। এসব বিষাক্ত পদার্থ মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

 অপচনশীল এবং নন-কম্পোস্টেবল হওয়ায় এটি মাটির উর্বরতা হ্রাস করে। পাহাড়ের চূড়া থেকে গভীর সমুদ্র সর্বত্রই পলিথিন তথা প্লাস্টিক দৃশ্যমান। নগর পেরিয়ে প্লাস্টিক-পলিথিন ছাড়িয়ে পড়েছে দুর্গম গ্রাম ও জনপদে। যত্রতত্র প্লাস্টিকজাত ব্যাগ, বোতল, মোড়ক এবং একবার ব্যবহার উপযোগী পলিথিন ব্যাগ ফেলার জন্য আমরা নাগরিকরাই দায়ী। প্লাস্টিক বর্জ্যে নদীর অবস্থাও এখন বেহাল। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, বংশী, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী। বরিশালের কীর্তনখোলা। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর পড়েছে। ফলে এসব নদ-নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণে মাছের জীবনচক্র হুমকির মুখে পড়ছে।

পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আইন থাকা সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করছে। যারা উৎপাদন করছে এবং আমরা যারা ব্যবহার করছি তারা সবাই এ দেশের নাগরিক কিন্তু আমরা আমাদের জীবনব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে সচেতন নই। পলিথিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় শহর এলাকায়। ফলে শহর এলাকার নদ-নদীগুলোই পলিথিন দূষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিগত দেড় যুগে দেশে পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ৯৯৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। প্রতিদিন প্রায় এ পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য ঢাকার পরিবেশের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। প্রতি বছর নদীপথে বঙ্গোপসাগরে প্রায় ২৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষক প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য কাজ করছেন। প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের রিসাইক্লিং কৌশল উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সুপার শপগুলোয় পলিব্যাগ ব্যবহার না করার জন্য যেভাবে জোর দিয়েছে সেভাবেই কাঁচাবাজার, মুদির দোকান, মাছবাজারসহ মাঠ পর্যায়ের সব ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের তদারকি বাড়াতে হবে। সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে। সবাইকে পলিথিন ব্যবহারের আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

  • প্রভাষক , নূরুল আমিন মজুমদার ডিগ্রি কলেজ, কুমিল্লা
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা