× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো সূত্রই কাজে আসছে না কেন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:২৮ এএম

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো সূত্রই কাজে আসছে না কেন

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় নিকট অতীতেও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেখানে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল বিয়োগাত্মক বা ঋণাত্মক দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের দেশে একটানা দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে-তাপে সাধারণ মানুষ নাকাল। ক্রমেই তা ঊর্ধ্বমুখী পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২৫ অক্টোবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মূল্যস্ফীতির আরেক দফা যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। লক্ষণীয় এ অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত পাকিস্তানেও এখন মূল্যস্ফীতির হার আমাদের চেয়ে কম। সুদহার বৃদ্ধি, পণ্য আমদানি ও বাজার তদারকির মতো ব্যবস্থা নিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতি। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বৃদ্ধি মৌলিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশও সেই পথই অনুসরণ করছে। বাজারে অর্থ সরবরাহের লাগাম টেনে ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে নীতি সুদহার। সম্প্রতি তা আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই মিলছে না সুফল।

আমরা জানি, সম্প্রতি ভোজ্য তেল ও চিনির দাম কমাতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তার পরও এই পণ্য দুটির দাম তো কমেইনি, উল্টো বাড়ছে। গত সপ্তাহে ডিম ও সবজিতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও পেঁয়াজসহ আরও কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। সহযোগী একটি সংবাদমাধ্যমে এও বলা হয়েছে, বাজারে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। সম্প্রতি নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে ফের বিপাকে পড়া নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের পাশাপাশি সর্বস্তরের ভোক্তার স্বস্তির লক্ষ্যে টিসিবির ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সচিত্র প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যায়, ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে লাইন ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে এবং কিছুটা সাশ্রয়ের খোঁজে এমন সব মানুষও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন যারা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার মুখে পরিচয় গোপন রাখছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য অধিদপ্তর, টিসিবি এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু হলেও তা চাহিদার নিরিখে অপ্রতুল বলা যায়। অর্থাৎ এ যেন সিন্দুর মাঝে বিন্দুর মতো। যে তিনটি মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, সেসব মাধ্যমে সরবরাহ ঠিক রাখা সরকারের নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এও সংবাদমাধ্যমেরই তথ্য।

আমাদের অজানা নয়, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনা নিয়ে অধিকতর মনোযোগী। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকারের সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি হতে পারেÑ এমন বক্তব্য অনেক অর্থনীতিবিদের। সম্প্রতি মোটা চালের দাম প্রতি বস্তায় বেড়েছে ১০০ টাকারও বেশি। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তসহ মোট জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের কাছে আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য মোটা চালের চাহিদাই বেশি। মোটা চালের পাশাপাশি অন্যান্য জাতের চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। সরকারি তিন দপ্তরের উদ্যোগে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সাধ্যের মধ্যে রাখতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এর পরিসর আরও বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। অনেক ভোক্তাই সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তারা চাহিদামতো পণ্য পাচ্ছেন না। সুলভ মূল্যে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা পেঁপে ও বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজিসহ প্যাকেজ আকারে ১০টি কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। গত ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু করা এ কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে কৃষি ওএমএস কর্মসূচি। কিন্তু এর পরিসর এখন পর্যন্ত বলতে গেলে গণ্ডিবদ্ধ। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এর বাইরে অন্যান্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলার বাজার চিত্রও প্রায় একই বলা যায়। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি ভোজ্য তেল, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রির পাশাপাশি এখন চালও বিক্রি করছে। আপাতত তাদের পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বটে, কিন্তু পরিবার কার্ড না থাকলেও অন্যরা টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। সার্বিকভাবে বাজারের যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে এককথায় প্রায় সব শ্রেণির মানুষের কমবেশি নাভিশ্বাস উঠেছে।

২৪ অক্টোবর শ্রম কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে এবং বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকার বিকল্প কৃষি বাজার চালু করবে।’ তিনি সেদিন রাজধানীর বেগুনবাড়ি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। আমরা তার এই প্রত্যয়কে সাধুবাদ জানাই, তবে একই সঙ্গে এ প্রশ্নও রাখতে চাই, বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ে ইতোমধ্যে কথাবার্তা কম না হলেও কাজের কাজ কতটা কী হয়েছে? সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যর প্রেক্ষাপটে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছিলাম, সিন্ডিকেটের হাত নিশ্চয়ই আইনের হাতের চেয়ে লম্বা হতে পারে না। একই সঙ্গে আমরা এও বলেছিলাম, আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফিরে ফিরে যে তুঘলকি কাণ্ড চালাচ্ছেন এর নিরসনে শুধু তাদের মূলোৎপাটনই যথেষ্ট নয়, একই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। নিয়মিত তদারকি-নজরদারি আরও বাড়াতে হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনায় যে অনিয়ম ও দুর্নীতির ছায়া এখনও বিস্তৃত, তা দূর করে প্রতিযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন ভোক্তাদের বৃহৎ স্বার্থে।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন বিনিয়োগের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে, যা বেসরকারি খাতে তারল্য সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হয়ে তা স্থবির হয়ে আছে। আমরা মনে করি, এমতাবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার রাজস্বনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, করজালের আওতা বাড়লে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয়ের পরিমাণ কমে যায়। একই সঙ্গে আমরা আরও মনে করি, সরকারের বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ কমিয়ে উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আমরা দেখেছি, বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন নীতিসূত্র প্রয়োগ করা হলেও এর কোনোই সুফল মিলছে না। যৌক্তিক হারে আমদানি শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি চাহিদার নিরিখে সরবরাহ ব্যবস্থায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, এ ব্যাপারেও মনোযোগ অধিকতর গভীর করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ স্বস্তি চায়। কিন্তু অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম মূল্যস্ফীতির অভিঘাত মানুষের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম যেহারে বাড়ছে তাতে অধিকাংশ মানুষ চাহিদায় কাটছাঁট করেও পণ্য কেনার পর সঞ্চয়ের সুযোগ থাকছে না, বরং সঞ্চয় ভেঙে ব্যয় সংকুলানের মতো অবস্থায়ও পড়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাগলা ঘোড়ায় যেকোনো কৌশলে লাগাম জুড়তেই হবে। ভোক্তার স্বার্থরক্ষাই জরুরি। এসব নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর, এবার মানুষ কাজের কাজ দেখতে চায়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা