× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

চালের বাজারে তদারকি বাড়ান

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৪ এএম

চালের বাজারে তদারকি বাড়ান

আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ফের ঊর্ধ্বমুখী। ২৩ অক্টোবর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারণ ছাড়াই বাড়ছে চালের দাম এবং শুধু রাজধানী নয়, দেশের প্রায় সব বাজারেই চাল নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের ফের চক্রান্তের বার্তা মিলেছে। সম্প্রতি চাল আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্কের বদলে ২০ শতাংশ ধার্য করেও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এর পরও সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। চিকন চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি। বিশ্লেষকদের অভিমত, এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণই নেই। তাদের অভিমত, এসবই ‘সিন্ডিকেট’-এর কারসাজি এবং বাজার তদারকিতে গাফিলতির মওকা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ী মহল।

ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে আমাদের সমাজে বহুল কথিত শব্দ ‘সিন্ডিকেট’-এর কারসাজি থেমে থেমে চলছেই। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো কোনোটি নিয়ে ঘটে যাচ্ছে তুঘলকি কাণ্ড। কিন্তু এই মৌসুমে চালের মজুদ পর্যাপ্ত এবং রেকর্ড ফলন হওয়া সত্ত্বেও দাম বাড়ার বিষয়টি সাধারণ ভোক্তার কপালে ফের দুর্ভাবনার ভাঁজ ফেলেছে। আমাদের সমাজে ‘মোটা ভাত, মোটা কাপড়’ প্রবাদটি বহুল প্রচলিত। কিন্তু আমরা দেখছি, দুই-ই মোট জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের পক্ষে জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাইলে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদকের কাছে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তা একেবারেই দায়সারা গোছের। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এমন বক্তব্য নতুন কিছু নয়। সর্বোচ্চ উৎপাদন সত্ত্বেও এবং আমদানি শুল্ক কমিয়েও কেন এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে নাÑ এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দেওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কেউই এড়াতে পারেন না। এনবিআরের তরফে বলা হয়েছিল-বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দাম ক্রয়সাধ্যের মধ্যে রাখতেই শুল্ক হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর কোনো সুফল পরিলক্ষিত হয়নি।

আড়তদার ও মিল মালিক চালের দাম নিয়ে বরাবরের মতোই নানারকম অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন। তাদেরই কেউ কেউ বলেছেন, গত কয়েক মাসের ব্যবধানে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে ‘সিন্ডিকেট’-এর অপতৎপরতা বন্ধ করতে না পারার বিরূপ ফল ভোগ করতে হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মজুদ আরও বাড়াতে সরকারি পর্যায়ে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির পরামর্শ বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑ আমদানি শুল্ক হ্রাস করে কিংবা সরবরাহব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রেখেও যেখানে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেখানে আমদানি বাড়িয়ে এর সুফল কতটা মিলবে। চালের আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটেও আড়তদার-মজুদদার এমনকি খুচরা ব্যবসায়ীদেরও খোঁড়া যুক্তি শোনা গেছে। সিংহভাগ মানুষ মোটা চাল কিনে থাকেন এবং যারা কেনেন, তারা সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ; যাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। তাদের পক্ষে এক লাফে কেজিতে চালের দাম চার টাকা বেড়ে যাওয়ার তাপ-চাপ সহ্য করা কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে এমনিতেই তারা নাকাল। তারা তাদের নিত্য চাহিদায় কাটছাঁট করেও জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখতে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন।

‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে এ পর্যন্ত কথাবার্তা কম হয়নি। কিন্তু ‘সিন্ডিকেট’-এর দাপাদাপি থামিয়ে যথাযথ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি এখনও আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাজার তদারকির নামে দৃশ্যত কখনও কখনও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর অভিযান পরিচালিত হয় বটে, কিন্তু এর কোনো সুফল কখনই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দৃশ্যমান হয়নি। অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের প্রতি কোনোরকম অনুকম্পা দেখানো যাবে না, এই কথাটি ইতঃপূর্বে বহুবার এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছি। আমরা মনে করি, চালসহ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল করতে নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করা জরুরি। আমরা দেখেছি, টিসিবির ট্রাকসেল বাড়িয়ে, ডিলারদের মাধ্যমে চালসহ ভোগ্যপণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের পরিসর বাড়িয়েও সুফল মেলেনি। আমরা মনে করি, বাজারে সুশাসনের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আমরা এও মনে করি, সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে স্বেচ্ছাচারীদের আস্ফালন বন্ধ করা মোটেও দুরূহ কোনো বিষয় নয়।

চালসহ নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি ফেরানো সরকারের অবশ্যই দায়। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম মূল্যস্ফীতির কশাঘাত যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। আসলে পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক লক্ষ করা যাচ্ছে না। উপরন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়টিই ফিরে ফিরে সামনে আসছে। বর্তমানে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ এমনিতেই পরিবারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। দরিদ্র পরিবারে অনেকে ঋণ করে ব্যয় মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় চালসহ নিত্যপণ্যের দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে সীমিত আয়ের ও দরিদ্র পরিবারে কী দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এ দুর্ভোগ দীর্ঘ সময় চললে এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন, অনেক পরিবারের শিশুদের শিক্ষাজীবনেরও অবসান ঘটে। এমন প্রেক্ষাপটে চালসহ নিত্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

বাজারে যারা কারসাজি চালিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করছেন তারা অস্পর্শিত থাকতে পারেন না। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অসাধু ব্যবসায়ীদের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। কার্যত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের সুফল কখনই মিলবে না, যতক্ষণ না উৎসে নজর দিয়ে অসাধুদের শিকড় উৎপাটন সম্ভব না হবে। এসব নিয়ে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে বিস্তর কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কাজের কাজ কতটা কী হয়েছেÑ এর উত্তর নিহিত রয়েছে বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যেই। আমরা দেখছি, অনেক ক্ষেত্রেই সরবরাহ ব্যবস্থায় নানাবিধ বিঘ্ন দেখিয়ে এবং যেকোনো সংকটকে পুঁজি করে নিত্যপণ্যের দাম অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামাফিক বাড়িয়ে দেন এবং বিশেষ করে চালের ক্ষেত্রে এমনটি তুলনামূলক বেশি ঘটে থাকে। খুচরা ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের সঙ্গে আড়তদার-মজুদদার কিংবা মিলারদের বক্তব্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আমরা আশা করি, যারা নানা অজুহাতে চালের দাম ফের আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করা হবে। চালের বাজার স্থিতিশীল করতে এবং ক্রয়সাধ্যের মধ্যে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণে সময়ক্ষেপণ উচিত হবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা