× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শব্দদূষণ

নিঃশব্দ ক্ষতির দীর্ঘ খতিয়ান

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৩৯ এএম

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

শব্দদূষণ হলো শব্দ বা শব্দের প্রচার, যা মানব বা প্রাণী জীবনের কার্যকলাপের ওপর বিস্তৃত প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ অতিরিক্ত শব্দ থেকে দূষণ ঘটে। গাড়ির শব্দ, হর্নের শব্দ, ইট ও পাথর ভাঙার শব্দ, মাইক বাজানো এসব থেকেই শব্দদূষণ ঘটতে পারে। এসব শব্দের অধিকাংশই বেশ ক্ষতিকারক। উচ্চমাত্রার এসব শব্দ মানুষের হৃৎপিণ্ড ও ধমনিতে ক্ষতি করে। বন্য প্রাণীদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। পরিব্রাজনের পথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এমনকি শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে করে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, অবসাদ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসÑ এসব লক্ষণও দেখা দিতে পারে। উচ্চ শব্দের কারণে মাথাব্যথা, রক্তচাপ, আলসার, হৃদরোগ এসব হতে পারে। এর ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মানসিক চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনিদ্রা বেড়ে যায়। বয়স্ক ও অসুস্থরা শব্দদূষণের বড় শিকার। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ধারা ২০-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ প্রবর্তন করে।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ২ ধারার সংজ্ঞা অনুযায়ী শব্দদূষণ বলতে তফসিল ১ বা ২-এ উল্লিখিত মানমাত্রা অতিক্রমকারী এমন কোনো শব্দ সৃষ্টি বা সঞ্চালন; যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বা ক্ষতির সহায়ক। হর্ন বলতে বোঝাবে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী নিউম্যাটিক, হাইড্রোলিক বা মাল্টি টিউনড হর্ন। শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানে ঢাকা। নানা কারণে শব্দদূষণ হতে পারে। যানবাহনের শব্দ থেকে শব্দদূষণ ঘটছে। প্রতি বছর গাড়ির সংখ্যা বাড়ছেই। বিমান ওড়া ও নামার সময় সৃষ্ট শব্দও দূষণের জন্য দায়ী। এ ছাড়া টিভি, টেপ রেকর্ডার, সাউন্ড বক্স থেকেও শব্দদূষণ ঘটে।

শব্দদূষণ রোধে শব্দদূষণ বিধিমালা সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। যেমন ৪ ধারা মতে, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা ও নীরব এলাকা চিহ্নিত করবে। ৮ ধারা হর্ন ব্যবহারের বিধিনিষেধ নিয়ে বলা আছে। এখানে বলা হয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন ব্যবহার করবে না। নীরব এলাকায় চলাচলকালে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীরব এলাকা ব্যতীত অন্য কোনো এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যাবে। এ ব্যাপারে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শব্দ দূষণের নিঃশব্দ ক্ষতি ঠেকাতেই হবে। যেমন বিয়ে বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হলে, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সভা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হলে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যাবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলা , যাত্রাগান, হাট-বাজারের বিশেষ কোনো দিনেও তা করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে। তিন দিন আগে দরখাস্ত দাখিল করে অনুমতি নিতে হবে। বনভোজনের ক্ষেত্রেও শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করে এমন যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে। ১১ ধারা নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহারের বিধিনিষেধ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে আবাসিক এলাকার শেষ সীমানার ৫০০ মিটারের মধ্যে ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মিশ্রণের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। এসব নির্মাণযন্ত্র ব্যতীত অন্যান্য যন্ত্র অনুমতিসাপেক্ষে ব্যবহার করা যাবে। এসব অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথম অপরাধের জন্য ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। পরবর্তীকালে অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এক্ষেত্রে কোনো জায়গায় কত ডেসিবেল শব্দ ব্যবহার করা যাবে অর্থাৎ এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা এই বিধিমালার তফসিল ২-এ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়ছে, নীরব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল, রাতে ৪০ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল। মিশ্র এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনের বেলায় ৬০ ডেসিবেল, রাতে ৫০ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনের বেলায় ৭০ ডেসিবেল, রাতে ৬০ ডেসিবেল। শিল্প এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনের বেলায় ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৭০ ডেসিবেল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া প্রয়োজন। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের বেলা ৬৫ ডেসিবেল ও রাতের বেলা ৫৫ ডেসিবেল হতে হবে। শিল্পাঞ্চলে দিনের বেলা ৭৫ ও রাতের বেলা ৬৫ ডেসিবেল হতে হবে। হাসপাতালে দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল হতে হবে। একটি তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের ২০ ভাগ মানুষ কানে শুনতে পায় না। এর মধ্যে ৩০ শতাংশই শিশু। ইউএনইপির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল। এটি স্বাভাবিক সহ্য ক্ষমতার চেয়ে বেশি। একটি তথ্যমতে, শব্দদূষণে ১১.৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়েছে। ১৫.৫ শতাংশ পুলিশের মোবাইলে কথা শুনতে অসুবিধা হয়। ১৯.১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের বেশি ভলিউম দিয়ে টিভি দেখতে হয়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৩ থেকে ২ গুণ বেশি শব্দ পায়। শব্দদূষণ প্রতিরোধে জোড়ালো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যেমন বাজি পোড়ানো বন্ধ করা, যানবাহনের পুরাতন যন্ত্রপাতি বাতিল করে নতুন ব্যবহার, জোরে জোরে মাইক বাজানো বন্ধ করতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন কম চালাতে হবে।

অক্টোবর ও নভেম্বরে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে এবং ডিসেম্বর জানুয়ারি থেকে সারা ঢাকা শহর হর্নমুক্ত করার কার্যক্রম চালনা করবে সরকার। নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে ৫০০ টাকা জরিমানাও ধরা হবে। এসব আইন প্রয়োগ করবেন ম্যাজিস্ট্রেট। ধীরে ধীরে হাসপাতাল ও সচিবালয় এলাকাও নীরব এলাকা ঘোষণা করবে সরকার। সম্প্রতি শব্দের মাত্রা পরিমাপ ও সচেতনতা বাড়াতে পরিবেশ অধিদপ্তরও কর্মশালা করতে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে শব্দদূষণ প্রতিরোধে সরকার বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

  • শিক্ষক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা