প্রজন্মের ভাবনা
নুরুল্লাহ আলম নুর
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৩৭ এএম
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের অবাধ সুযোগের জন্য শিশুদের জন্য নতুন এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
শিশুরা না বুঝেই ইন্টারনেটের নানা ফাঁদে পা দিচ্ছে। তারা না বুঝেই যাকে-তাকে ছবি
পাঠাচ্ছে,
যেখানে-সেখানে ছবি পোস্ট করছে এবং এসব ছবি অপরাধীরা
সম্পাদনা করে পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার করছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে শিশু যৌন নিপীড়ন
সম্পর্কিত এমন ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৬৮টি রিপোর্ট অর্থাৎ অভিযোগ
পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড
এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি)।
বিশ্বের যেসব দেশ থেকে শিশুদের যৌন হয়রানি সম্পর্কে রিপোর্ট
পাঠানো হয়েছে,
তার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। এনসিএমইসিতে সন্দেহজনক শিশু যৌন
নিপীড়ন সম্পর্কে বাংলাদেশের পুলিশ, বেসরকারি সংস্থা, মানবাধিকার
সংগঠন, ব্যক্তিগত উদ্যোগসহ নানা উৎস থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এনসিএমইসি
বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও শিশু যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত ৩ কোটি ২০ লাখ রিপোর্ট
পেয়েছে। বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র,
থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স
ও ডমিনিকান রিপাবলিক। শিশুরা অনলাইনে ছবি পোস্ট করছে এবং অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে
যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই অপরাধীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
ডিজিটাল যোগাযোগ শিশুদের অবাধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও
অনলাইন গেমের জগতে বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছে। শিশুরা নিজেদের অজান্তেই এসব ফাঁদে
পড়ছে। তারা নিজেদের ছবি অনলাইনে পোস্ট করছে এবং অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ
করছে। অপরাধীরা এসব ছবি সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার করছে। গত বছর
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন ইন্টারনেট থেকে শিশুর যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি-সংক্রান্ত ২
লাখ ৭৫ হাজার ৬৫২টি ইউআরএল অপসারণ করার জন্য কাজ করেছে।
শিশুদের অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন
পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, পরিবারের সদস্যদের শিশুদের
সঠিক ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। পিতামাতাকে
শিশুর ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর রাখতে হবে এবং অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ
না করার নির্দেশনা দিতে হবে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ফিল্টার এবং
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নজর
রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ইন্টারনেট সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালা আয়োজন
সময়ের দাবি।
শিশু যৌন নিপীড়ন রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর
ভূমিকা পালন করতে হবে। অপরাধীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শিশুদের যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের
সবাইকে শিশুদের নিরাপত্তায় সচেতন হতে হবে। শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপত্তা নিশ্চিত
করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার
এবং পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। আমাদের
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ ও উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দিতে হবে। এমন
পরিস্থিতিতে শিশুদের সুরক্ষার জন্য শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করাই যথেষ্ট নয়, বরং
এই বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করতে সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করাও
প্রয়োজন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও সরকারের সম্মিলিত
প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে
শিশুরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র ভীত না হয়ে নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে।
শুধু আইন প্রয়োগ নয়,
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের শিক্ষাদান, অভিভাবকদের
সক্রিয় ভূমিকা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধও অত্যন্ত জরুরি। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে
এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব, যেখানে শিশুরা নিজেদের
সৃজনশীলতা ও সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারবে এবং কোনো রকম হুমকি বা
বিপদের সম্মুখীন না হয়ে নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়