× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্বস্বাস্থ্য

কমাতে হবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার

ড. ফ্রান্সিস মুতাপি

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৬ এএম

কমাতে হবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার

স্বাস্থ্য খাতে একটি বড় সমস্যা, সংক্রমণের ক্ষেত্রে এখন অনেক ওষুধই আর কার্যকর নয়। এমনটি তখনই হয় যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা ফাংগাসজনিত সংক্রমণ ওই ওষুধের প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্বাস্থ্য খাতের একটি বড় অংশ, যেখানে মাইক্রোবস যেমন ব্যাকটেরিয়া, ফাংগি, ভাইরাস কিংবা প্যারাসাইট নিয়ে গবেষণা হয়। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক এমন এক ধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, যা কার্যকর। কিন্তু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ যখন আর কাজ করতে পারে না তখন সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার কাজ অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ায় পাবলিক হেলথ কার্যক্রম নানাভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষত যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা হারানোয় ইনফেকশন, সার্জারি, সিজারিয়ান অপারেশন এমনকি ক্যানসার চিকিৎসায় সংক্রমণ ঠেকানোও কঠিন হয়ে যায়।

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারিয়ে যাওয়ার পেছনে ওষুধের অহেতুক ব্যবহারের দায় রয়েছে। বিশেষত মানুষ, প্রাণী এমনকি উদ্ভিদেও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতায় আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৯ সালে মহাদেশটিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতায় ২১ শতাংশ মানুষ মারা যায়। বিষয়টি আগামীর জন্য ভয়াবহ অশনিসংকেত। শুধু আফ্রিকাই নয়, গোটা বিশ্বেই অ্যান্টিবায়োটিকে নির্মূল সম্ভব এমন রোগ বা ক্ষত দূর করার সফলতার হার কমতে শুরু করেছে। সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্রে জানা গেছে, ই. কোলি ইনফেকশন এখন আর সেফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিকে নির্মূল করা যাচ্ছে না। আর এই সমস্যা দূর করতে হলে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতে হবে।

আফ্রিকা মহাদেশে মৌসুমি কিছু সংক্রমণকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এনটিডি তার একটি। এই সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে চিকিৎসাক্ষেত্র ব্যাপক উন্নতি করেছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দ্রুত চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার করা হয়। ফলে একসময় এই সংক্রমণ তাদের দেহে নিজস্ব প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ওষুধে আর কাজ হয় না। আমি নিজেও মৌসুমি সংক্রমণ রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এই সংক্রমণগুলো চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়েই আমার মত। কিন্তু এজন্য সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। সুষ্ঠু চিকিৎসাব্যবস্থা, ওষুধ, সুপেয় পানি এবং সংক্রমণ যাতে ছড়াতে না পারে তেমন স্যানিটেশন নিশ্চিত করা জরুরি। যেসব দেশে সংক্রমিত রোগ বেশি ছড়ায় যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে যক্ষ্মার মতো রোগের ক্ষেত্রেও এমন পদক্ষেপ জরুরি। এসব দেশে সচরাচর যক্ষ্মার সুস্থতার জন্য নির্দিষ্ট কোর্স অনুসরণ করলেই হয়। কিন্তু আসলে যক্ষ্মার সংক্রমণ থামানো সম্ভব হয় না।

মৌসুমি সংক্রমণ মূলত ২১টি ভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। আর প্রতিটি কারণেই সংক্রমণগুলো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। এমনটি যেকোনো রাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মৌসুমি সংক্রমণ সচরাচর কৃমি, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগি কিংবা ভাইরাসের মতো প্যাথোজেনের মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগগুলোর মধ্যে বুরুলি আলসার, লেইসমানিয়াসিস, লেপরোসি, অংকোসেরিয়াসিস, ট্রাকোমা, যক্ষ্মা ও ইয়াও অ্যান্টিবায়োটিকে সুস্থ হয়। সারা বিশ্বের অনেকেই এসব সংক্রমণকে গুরুত্ব দেয় না, ফলে স্বাস্থ্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অবহেলিত মৌসুমি সংক্রমণের ফলে অনেক সময় রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ ক্যানসার রোগীর এমন সংক্রমণ থাকলে কেমোর সময় ভারি ওষুধ তার শরীরে দেওয়া সম্ভব না। তা ছাড়া এক্ষেত্রে খরচও অনেক বেড়ে যায়। আবার যত্রতত্র কেমোথেরাপির মাধ্যমে অনেক সংক্রমণ রোধ করা গেলেও তা ক্ষত ও রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও কমায়। ২০১২-১৯ সালে জিম্বাবুয়ে কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ফর স্কিস্টোসোমিয়াসিস পরিচালনার সময় লক্ষ করেছি ৫০ লাখ শিশুর ওপর আমরা কেমোথেরাপি দেওয়ায় এই রোগের সংক্রমণ ৩২ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও এই রোগের সংক্রমণ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, গোটা বিশ্বে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মানুষকে প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি দেওয়া গেলে সংক্রমিত রোগ হ্রাস করা সম্ভব। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া সচরাচর কম ক্ষতিকর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের চিকিৎসায় ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ায় সমস্যা বেড়েছে। যেমন এজিথ্রোমাইসিন ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া কিংবা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ানো রোগ নির্মূলে ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে এমন ছয়টি অ্যান্টিবায়োটিকের পাঁচটিই কার্যকারিতা হারিয়েছে। আগামী দিনে তা আরও বাড়বে। অর্থাৎ সমস্যা উত্তরণে আমাদের প্রতিটি ট্রপিক্যাল সংক্রমণকে গুরুত্ব দিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা জরুরি। সুসংবাদ হলো এসব রোগ নিয়ন্ত্রণের আলাদা ব্যবস্থা এখনই আছে। গত এক দশকে ৫১টি রাষ্ট্র মৌসুমি সংক্রমণ নির্মূল করতে পেরেছে। তারা এজন্য সমন্বিত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এজন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। বিশেষত প্রাণীদের থেকে যেসব পরজীবী বা প্যারাসাইট শরীরে সংক্রমণ ঘটায় তাদের শনাক্ত করার প্রযুক্তি রয়েছে এবং তাদের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া ছাড়াই মেরে ফেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। এভাবে ওষুধের মাধ্যমে মানবদেহে বাড়তি চাপ পড়বে না।

সুপেয় পানি নিশ্চিত করার মাধ্যমে পানিবাহিত সংক্রমণ আরও সহজে নির্মূল করা যায়। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক করতে পারলে এমন সংক্রমণ থাকে না। আমরা লক্ষ করেছি, অধিকাংশ জীবাণুই যা পরবর্তী সময়ে বড় সংক্রমণ হয় তা মলে দীর্ঘদিন টিকে থাকে। তাই পয়োনিষ্কাশন সুবিধা বাড়ানো জরুরি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্তত ১০০টি দেশে এমন সংক্রমণ পুরোপুরি নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এমনটি করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্র লাভবান হবে। বিশেষত যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সমস্যাও অনেকাংশে দূর হবে। স্বাস্থ্য খাতে বাড়তি চাপ কমবে এবং সংক্রমণের কারণে প্রচুর মানুষ মারা যাবে না।

  • অধ্যাপক, গ্লোবাল হেলথ ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ

দ্য কনভার্শেসন থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা