× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পরিবহন খাতের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৯ এএম

পরিবহন খাতের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শাসনামলে অন্যান্য খাতের তুলনায় অধিকতর নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয় পরিবহন খাতে। আমরা যদি আরও একটু পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে স্পষ্টতই দেখতে পাই, প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলেই পরিবহন খাতে অশুভ শক্তির থাবা বিস্তৃত হয়েছে। ১২ অক্টোবর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে সেই পুরোনো চিত্র উঠে এসেছে নতুন রূপে। ‘পরিববহনে নতুন রূপে পুরোনো সিন্ডিকেট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এখনও স্বার্থান্বেষীদের আগ্রাসী থাবা বিস্তৃত রয়েছে। পরিবহন খাত এরই একটি অংশ মাত্র। আমরা দেখছি, দখলদারত্ব ও বলবানদের দৌরাত্ম্যের অন্যতম ক্ষেত্র পরিবহন খাতে এখনও রয়ে গেছে অন্ধকারের ছায়া।

এই খাতটিতে চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অর্থ আদায় করে ভাগবাটোয়ারার বহুমাত্রিক চিত্র বিগত সরকারের শাসনামলে অনেকবারই উঠে এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কিংবা অরাজনৈতিক সরকার অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেও কী করে সেই পুরোনো চিত্রই আবার দৃশ্যমান হলো। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি টার্মিনালেই পুরোনোদের সঙ্গে নিয়ে চলছে নতুন মুখের নেতাকর্মীদের দাপট। যাদের নতুন নেতাকর্মী বলে অভিহিত করা হয়েছে, তারা আসলে নতুন নয় ,পুরোনোদেরই বিকৃত চেহারা। বিগত বিএনপি সরকারের শাসনামলে এই নেতাদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই খাতটিতে। কিন্তু ১৫ বছরেরও বেশি সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত নানা সংগঠনের নেতাদের দাপটে তারা ছিলেন কোণঠাসা। নতুন প্রেক্ষাপটে তারা ফের আবির্ভূত হয়েছেন ভিন্ন রূপে এবং এই দুই পক্ষের যোগসূত্রে এখন যে বাহিনী পরিবহন খাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা অধিকতর শক্তিশালী। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে বলবান চাঁদাবাজদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও চাঁদাবাজির আধিপত্য বিস্তার কিংবা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। রাজধানীর চারটি বাস টার্মিনাল নিয়ে চাঁদাবাজ-দখলদারদের আধিপত্য বিস্তারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠার অভিযোগও মিলেছে।

বিআরটিএ সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল অনেকের বিরুদ্ধেই অস্বচ্ছতা এবং প্রভাব বিস্তার করে দল-উপদল সৃষ্টি করার অভিযোগও আছে। পরিবহন খাতে সারা দেশে সড়ক পরিবহনে মালিক-শ্রমিকদের ৯৩২টি সংগঠনের মধ্যে ৬৮৬টিই অবৈধ। নামসর্বস্ব এসব সংগঠনের কারণে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো কিংবা নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা দুরূহÑ এই অভিযোগ নতুন নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরিবহন খাতে মালিক-শ্রমিকদের যত সংগঠনই থাকুক না কেন; মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ঢাকা পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনÑএমন কয়েকটি সংগঠন। পরিবহন মালিকদের প্রায় ৯২ ভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তাদের ঘাড়ের ওপর ক্ষমতাধর অনেক রাজনৈতিক নেতার গজানো মাথা রয়েছে। এখানেও রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধ আছে বটে, কিন্তু চাঁদাবাজিসহ নানারকম দুষ্কর্ম তাদের মধ্যে কোনো মানসিক দূরত্ব নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের আশীর্বাদপুষ্ট প্রভাবশালীদের ইশারা ইঙ্গিতে চলে পরিবহন খাত। বিগত ১৫ বছর এই খাতটিতে চলছিল আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টদের একচ্ছত্র আধিপত্য। এখন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এক্ষেত্রে কৌশল পাল্টেছে মাত্র, কিন্তু চাঁদাবাজিসহ নানারকম দুষ্কর্মের ছায়া তো সরেইনি, উপরন্তু তা আরও গাঢ় হয়েছে। পরিবহন খাতে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ৯ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়Ñ এই তথ্যই প্রমাণ করে কতটা আধিপত্যবিলাস খাতটিকে কেন্দ্র করে আসন গেড়ে বসেছে।

আমরা জানি, আমাদের সমাজে কিছু ব্যাধি আছে যে ব্যাধিগুলো শুধু সামাজিক পরিসরেই নানারকম অশান্তির কারণ নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনেও এর বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান হয়। পরিবহন খাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট প্রেক্ষাপটে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং কোনোভাবেই এমনটি মেনে নেওয়া যায় না। এও আমাদের অজানা নয়, রাজনৈতিক অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি থেকে সৃষ্ট অপরাধের বহুমাত্রিক চিত্র রাষ্ট্র ও সমাজে ফিরে ফিরে বৈরী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমরা কোনোভাবেই এর পুনরাবৃত্তি তো চাই-ই না, বরং প্রত্যাশা করি চাঁদাবাজি ও দুষ্কর্মের হোতাদের মূলোৎপাটনের পাশাপাশি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা দুষ্কর্মের দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিবিধান দৃশ্যমান করা যায়নি বলেই অপশক্তির ছায়া এখনও জিইয়ে আছে। আমরা দ্রুত এর নিরসন চাই। আমরা আরও মনে করি, নানামুখী সংস্কারের প্রবাহের মধ্যে পরিবহন খাতটি এর বাইরে থাকা ঠিক নয়। এই খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সব রকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, এই প্রত্যাশাই আমরা রাখি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা