× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রাণবৈচিত্র্য

অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে অনেক প্রজাতি

মো. অহিদুর রহমান

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:২২ এএম

মো. অহিদুর রহমান

মো. অহিদুর রহমান

৪ অক্টোবর বিশ্ব প্রাণ দিবস। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন পৃথিবীর প্রথম প্রাণী জলজপ্রাণী জেলিফিশ। আধুনিক পৃথিবীর মানুষের নানামুখী প্রয়োজন মেটানোর জন্য অসংখ্য প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে। শুধু কয়েকটি আলোচিত প্রজাতি বাঘ, হাতি রক্ষা করলেই প্রাণের বৈচিত্র্য রক্ষা হয় না। প্রাণের বৈচিত্র্য কমে যাওয়ার বিষয়টি পৃথিবীজুড়ে এখন আলোচনার বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দাবানল, খরা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট, প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, প্রাণীর খাদ্যসংকট, দুর্বল আইন, চোরা শিকারি, হাওর-জলাভূমি ও নদীর নাব্য হ্রাস, ভূমিতে অতিরিক্ত বিষপ্রয়োগ, বন্য প্রাণী নিয়ে বাণিজ্য, মানুষের নির্দয় ব্যবহারের কারণে প্রকৃতি ও মানবজাতির জন্য জরুরি এ প্রাণবৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমরা বাঘ, হাতি, হরিণ, কুমির এসব প্রাণীর কথা যত ভাবি; অন্যসব প্রাণীর কথা তত চিন্তা করি না।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, পৃথিবীতে প্রাণীর বিলুপ্তি শুরু হয়েছে ৭০০ বছর আগে। চেনাজানা ২০ লাখ প্রাণ ও উদ্ভিদের ৭ থেকে ১৩ শতাংশই হারিয়ে গেছে চিরতরে। আইইউসিএন ১৯৬৮ সাল থেকে নিয়মিত লাল তালিকা প্রকাশ করছে। তাদের মতে, পৃথিবীতে ৪০ হাজার প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এর মধ্যে ৪১ শতাংশ উভচর, ২৬ শতাংশ স্তন্যপায়ী, ১৩ শতাংশ পাখি, ৩৭ শতাংশ হাঙর ও ২১ শতাংশ সরীসৃপ জাতীয়। প্রাণের বৈচিত্র্যই আমাদের জীবন, উন্নয়ন, শান্তি, সমৃদ্ধি। বৈচিত্র্য আছে বলেই আমাদের জীবন এত সুন্দর। এ বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, শ্রদ্ধাবোধের জায়গা তৈরি এবং আমাদের জীবনের জন্যই টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বন ও বন্য প্রাণী। আইইউসিএনের সমীক্ষামতে, বাংলাদেশে ১১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬৩০ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচর, ২৬১ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী, ৩২৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৬৬ প্রজাতির কোরাল, অসংখ্য পোকামাকড়, ৫ হাজার প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ যার ভেতর ১৬০ প্রজাতির শস্য রয়েছে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘দেশি ধানের জাত’ নামে একটি বইয়ে ১২ হাজার ৪৮৭টি স্থানীয় জাতের ধানের নাম উল্লেখ রয়েছে।

বন হচ্ছে প্রাণীর জন্ম, বিচরণ, প্রজনন ও বসবাসের উপযুক্ত জায়গা। জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত ভান্ডার বন। বন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারকবাহক। বন আছে বলেই উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে আছে। বনে-পাহাড়ে সচরাচর বিচরণ করত বুনোহাঁস, সারস, প্যাঁচা, ময়না, ঘুঘু, চড়ুই, টুনটুনি, কোকিল, বেনেবউ, বউ কথা কও, টিয়া, বনমোরগ, মাছরাঙা, বক, কোয়েল, পাতিকাক, দাঁড়কাক, কাঠময়ূর, বালিহাঁস, চন্দনা, হরিয়াল, কাঠঠোকরা, ফেসকুল, বুলবুলি, ঈগল, বাজপাখি, শকুন, হারগিলা, কাইম, ডাহুক। এসবের মধ্যে অনেক পাখিই আজ বিলুপ্তির পথে। গভীর রাতে ডাহুকের মিষ্টি ডাক শোনা যায় না। গারো পাহাড়ে বাঘ, চিত্রা ও মায়া হরিণ, রামকুত্তা, ভোঁদড়, বন্যশূকর, খেকশিয়াল, মেঘলা চিতা, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বড় টিকটিকি, বাদুড়, প্যাঁচা, চিল, কৌড়াপাখি, ভল্লুক, হরিণ, বানর, চিতাবাঘ, বনবিড়াল, শজারু, বনরুই, বনগরু, গুইসাপ, উদবিড়াল, কালিম পাখি, সোনালি বিড়াল, রামকুকুর, কচ্ছপ, কাউট্টা, কাছিম, গেছোবাঘ, উল্লুক, সোনাগুইল, হনুমান, খরগোশ, গোয়াল, লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা বানর, বনছাগল, অজগর, বাঘ, নীলগাই, বন্যহাতি ইত্যাদির দেখা পাওয়া যেত। বর্তমানে এসব প্রাণীর সচরাচর বিচরণ লক্ষ করা যায় না। বাসস্থানের অভাবে অনেক প্রজাতির বেঁচে থাকা, প্রজনন করা এবং খাদ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন বন্য প্রাণীর ওপর নতুন বিপত্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া বন্য প্রাণীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি। জনসংখ্যার চাপ ও অর্থনৈতিক কারণে বনাঞ্চলে মানুষের মাত্রাতিরিক্ত বৈধ-অবৈধ হস্তক্ষেপের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমে যাচ্ছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। দেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ১১ প্রজাতি ইতোমধ্যে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ৪৫টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে লজ্জাবতী বানর, পারাইল্লা, বানর, কুলুবানর, উল্লুক, রামকুত্তা, গেছোবাঘ, চিতাবাঘ, উদবিড়াল, ভল্লুক, শুশুক, বনছাগল, সাম্বার, বনরুই , মুখপোড়া হনুমান, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, কাঁকড়াভুক বেজি, ভোঁদড়, কালো ভল্লুক, বাগডাশ, মায়াহরিণ। পাখির মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে লাল শির হাঁস ও ময়ূর। অতিবিপন্ন পাখির তালিকায় রয়েছে কালো তিতির, কাঠময়ূর, বাদিহাঁস, বাঞ্চাহাঁস, রাজধনেশ, পাহাড়ি ঘুঘু, হরিয়াল, কোরাল, লাল শির শকুন, হাড়গিলা, পাহাড়ি ময়না, মথুরা, কাওধনেশ, ঈগল, প্যাঁচা, হট্টিটি, সাদা ঈগল, মদনটাক প্রভৃতি।

বিলুপ্ত হয়েছে মিঠা ও লবণাক্ত পানির কুমির। মেছোকুমির অতিবিপন্ন অবস্থায় টিকে আছে। কচ্ছপ প্রজাতির মধ্যে বড় কাইটা, কাছিম, হলুদ পাহাড়ি কাছিম অতিবিপন্ন। সাপের মধ্যে নির্বিষ গুলবাহার অজগর, বিষধর সাপ চন্দ্রবোড়া অতিবিপন্ন এবং কালকেউটে, গোখরা, ভাইপার, কালনাগিনী, দুধরাজ, সবুজ ডোরা প্রভৃতি বিপন্ন সাপের তালিকায় রয়েছে। ডোরাকাটা হায়েনা রাজশাহী, ধূসর নেকড়ে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম, নীলগাই দিনাজপুর-পঞ্চগড়, বান্টিং বা বনগরু চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং বনমহিষ দেশের সব বনাঞ্চলেই দেখা যেত। এ ছাড়া তিন ধরনের গন্ডার ছিল বাংলাদেশেÑসুমাত্রা গন্ডার, জাভা গন্ডার ও ভারতীয় গন্ডার। বাদা বা জলার হরিণকে স্থানীয়ভাবে বলা হতো বারো শিঙা হরিণ। সিলেট ও হাওর এলাকায় দেখা যেত। কৃষ্ণষাঁড় নামে একটি প্রাণী ছিল রাজশাহী ও দিনাজপুর এলাকায়। মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি ও কালো ভল্লুক।

লালমুখ দাগি ডানা সিলেটে পাহাড়ি বাঁশঝাড়ে বাসা বাঁধত। বিশেষ জাতের পাহাড়ি বাঁশঝাড় প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় পাখিরাও এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ৫ থেকে সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার একেকটি সারস বাংলার নদীর ধারে ঘুরে বেড়াত। জলাভূমির শামুক ও ঝিনুক ছিল এদের খাবার। মূলত শিকারিদের কবলে পড়ে এ বিশাল পাখিটি হারিয়ে গেছে। বর্তমানে ২৬৮টির মতো দেশি শকুন আছে বলে সর্বশেষ তথ্যমতে জানা যায়। বাংলার বিখ্যাত বালিহাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিলা বা মদনটাক, ধলাপেট বক, সাদা ফোঁটা গগন রেড, রাজশকুন, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, লাল মাথা টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া, সবুজ ময়ূর চিরতরে এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

প্রাণের এ বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে আমাদের প্রয়োজনেই। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবনকে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বনের অভয়ারণ্য এলাকাকে ৭৯৮তম বিশ্বঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এ এলাকাটির মোট আয়তন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর।

  • পরিবেশকর্মী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা