সাধারণ্যে
নাইম এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এরই মাঝে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজের শিক্ষার্থী কিউএস নাইমও যুক্ত হয়েছিলেন আন্দোলনে। আন্দোলন চলাকালীন অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে।
আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন?
টাঙ্গাইলে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর ফেসবুকেই সব খবর পেতাম। তবে যখন পুলিশি নির্যাতন শুরু হয় তখন বন্ধুদের ডাকে ১৬ জুলাই প্রথম বের হই। ওই দিন পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ওই দিন আমরা কর্মসূচি সেরে ফিরে আসি। সেদিন কিছু না হলেও ১৮ জুলাই ছিল টাঙ্গাইলের জন্য বিভীষিকাময়। আমাদের প্রেসক্লাবে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। পুরাতন বাসস্টান্ডে মিছিল পৌঁছালে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। আমরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতেই লাঠিচার্জ শুরু করে। একসময় শুরু হয় গুলিবর্ষণ। একজন নিহত হয়। চোখের সামনে ১২ বছর বয়সের শিশুটির গায়ে গুলি লাগতে দেখেছি। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। স্মোক গ্রেনেডে আমি সামান্য আহত হই। পরে আমরা বাইপাসে অবস্থান নিই। ওই দিন দুপুর ২টায় আমরা বাড়ি ফিরি। কিন্তু সন্ধ্যার পর শুনি অনেককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
এর পরও আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন?
হ্যাঁ। এরপর আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিই। তবে ৩১ জুলাই দিনটিও অনেক ভয়ংকর ছিল। আমরা অল্প কজন শিক্ষার্থী ছিলাম। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ঘিরে রেখেছিলেন। তারা আমাদের হেলিপ্যাডে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু যাওয়ার সময় বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে আমরা ৬০-৭০ জন হেলিপ্যাডে পৌঁছাই। মূলত পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছিল তাদের মুক্তির জন্য আমরা হেলিপ্যাডে অবস্থান নিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে প্রেস ব্রিফিং করে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরি। তারপর আমরা শামসুল হক তোরণের নিচে থেকে মিছিল বের করে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগোই। সেখানেও পুলিশ আমাদের বাধা দিলে আমরা অবস্থান কর্মসূচি সফল করি।
আপনাদের আন্দোলনে সাড়া জাগে কবে?
২ আগস্ট থেকে টাঙ্গাইলে আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। আগের দুই দিন টাঙ্গাইলের পরিস্থিতি দেখে বাবা-মা অনেক বাধা দিয়েছিলেন। আবার আমাদের অনেকের অভিভাবকই আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন। আমাদের মিছিল টাঙ্গাইল আশেকপুর বাইপাসে গিয়ে পৌঁছায়, সেখানে আমরা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান করি। ৪ আগস্ট আমাদের দাবি ছিল এক দফা। টাঙ্গাইলে এত মানুষ আগে কখনও দেখিনি। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর শহর যে টাঙ্গাইল সেটা টাঙ্গাইলের মানুষ ওই দিন প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে। শহরজুড়ে স্লোগান চলতে থাকে। রাস্তার আশপাশের বাড়িগুলো থেকে সাধারণ মানুষের জন্য পানি ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে থাকে। বৃষ্টির ফোঁটার মতো রাস্তায় পড়তে থাকে মানুষের মাথার ঘাম।
৫ আগস্ট সরকার পদত্যাগ করে। আপনারা কি লিংমার্চ করছিলেন?
আসলে বিজয় ঘোষণার আগ পর্যন্ত সারাটা দিন কেটেছে ভয়ে ভয়ে। যখন শুনি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন তখন গতদিনের মতো শহরের সব মানুষ রাস্তায় নেমে আসে বিজয়োল্লাস করার জন্য। আতশবাজি ফুটতে থাকে। গতদিন মানুষ যেভাবে পানি ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছিল ওই দিনও ঠিক তেমনিভাবে বিজয়োল্লাস করার জন্য সবাই মিষ্টি বিতরণ করছিল।