× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্য প্রাণীর খামার

আইনের প্রতি অবজ্ঞা, শর্ত উপেক্ষা

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩০ পিএম

আইনের প্রতি অবজ্ঞা, শর্ত উপেক্ষা

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২-এর ৫২ ও ২৪ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২০ প্রবর্তন করে। এ বিধিমালা অনুযায়ী পোষা পাখি অর্থ সেসব আবদ্ধ পাখি যারা সাইটিস অ্যাপেনডিকস্‌ ২ ও ৩ ভুক্ত বা বহির্ভুক্ত এবং এদের মিউট্যান্টসমূহ যা আমদানি করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের আওতায় লালনপালন, প্রজনন, কেনাবেচা ও রপ্তানি করা হয়। আর পেট শপ বা পোষা পাখির দোকান বা বিক্রয়কেন্দ্র বলতে বোঝাবে যে স্থান থেকে শৌখিন পোষা পাখি পালনপালনকারী এক বা একাধিক পোষা পাখি কেনেন। শৌখিন পোষা পাখি লালনপালনকারী অর্থ কোনো ব্যক্তি যিনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা পাখি লালনপালন করেন না এবং যার কাছে কোনো প্রজাতির অনধিক ১০টি পাখি আছে।

বিধিমালা অনুযায়ী শৌখিনভাবে পোষা পাখি লালনপালন ও খামার পরিচালনার কিছু শর্ত আছে। খামারে প্রতিটি পোষা পাখি প্রজাতির খাঁচার মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার, খনিজ লবণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাতের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও সুষম খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খামারে প্রতিটি পোষা পাখির এবং খামার কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা নিশ্চিত করতে হবে। খামারে পোষা পাখির বাচ্চা জন্মাবার পর বাচ্চার পায়ে রিং পরাবার পর রিং নম্বরসহ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। পোষা পাখি কোনো অবস্থায়ই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না। মৃত পোষা পাখির দেহাবশেষ মাটিচাপা দিতে হবে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামারিরা রেজিস্টার্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বছরে এক বা একাধিক পোষা পাখি প্রদর্শন করতে পারবেন।

এ ছাড়া খামারিকে লাইসেন্সের হালনাগাদকৃত তথ্য সংরক্ষণ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ অগ্রিম নোটিস ছাড়া যেকোনো সময় খামার পরিদর্শন করলে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বা শেষ হওয়ার ৬০ দিন বা ক্ষেত্রমতে ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্যথায় তা বাতিল হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সিআইটিইএস-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও সম্প্রতি অবৈধ পাখি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বন্য প্রাণী আমদানি-রপ্তানি করায় বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২২ নভেম্বর জেনেভায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সাইটিসের পরিশিষ্ট ১ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা এমন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আমদানি করা যেতে পারে, কিন্তু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। পরিশিষ্ট ২-এ এমন উদ্ভিদ ও প্রাণী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেসব বিলুপ্তির হুমকির মধ্যে নেই তবে তাদের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পরিশিষ্ট ৩-এ রাখা হয়েছে এমন সব প্রজাতি যা টেকসই পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ বিক্রির উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্রেট সবুজ ম্যাকাও, নীল গলা ম্যাকাও, সামরিক ম্যাকাও, লাল মুকুট প্যারাকিট, গোল্ডেন প্যারাকিট আমদানি করেছে।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোট ৮২টি খামার রয়েছে। এরা বিধিমালা অনুযায়ী পোষা পাখির ব্যবসা করতে পারে। পোষা পাখির লালনপালন, খামার স্থাপন, কেনাবেচা ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স না নিলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর তাকে পজিশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো পাখি নিজ মালিকানায় বা দখলে নিতে পারবেন না। প্রতিটি পাখির পজিশন সার্টিফিকেটের জন্য বার্ষিক ফিও দিতে হবে। প্রতি বছর এটি নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স বাতিল হলে পজিশন সার্টিফিকেটও বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে পোষা পাখির খামারির ১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স করতে হবে। পেট শপের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও প্রসেস ফি লাগবে ৫০০ টাকা। বছরে পজিশন ফি দিতে হবে ২ হাজার টাকা।

সম্প্রতি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় পোষা পাখির দোকান মালিকদের পোষা পাখির দোকান স্থাপন ও পরিচালনাকারীদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২০-এর বিধি ৪ মোতাবেক লাইসেন্স ছাড়া কোনো খামারি পোষা পাখির উৎপাদন, লালনপালন, কেনাবেচা বা আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন না। ১৪ আগস্ট বন অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা রাজধানীর কাঁটাবনের পাখি মার্কেটের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে বলেন। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে পোষা পাখি লালনপালন, কেনাবেচাও একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২০ নিয়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কিছু বক্তব্য রয়েছে। পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২০ গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি। সে সময় অবশ্য এ গেজেটের বাতিল দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে এক্সোটিক বার্ড ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, এভিয়ান কমিউনিটি ও এভিকালচার সোসাইটি অব বাংলাদেশ। তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়ছে সেসব বিষয়ও আমাদের নজরে রাখতে হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন রিসোর্ট, পার্ক বা মিনি চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী অবৈধভাবে আটকে রাখার অভিযোগও রয়েছে। বাংলাদেশে হাতি, হরিণ, কুমির, ময়ূর-এ চারটি প্রাণী পালন করার অনুমতি দেওয়া হয়। এ চারটি ছাড়া অন্য কোনো বন্য প্রাণী পালন করলে অবৈধ হবে। হরিণ পালন করা যাবে। তবে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে হরিণ পালন করা যাবে না। হরিণ ও হাতি পালনের ক্ষেত্রেও লাইসেন্স লাগবে। হরিণ ও হাতি পালন বিধিমালা-২০১৭ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া হরিণ ও হাতি পালন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। এ ক্ষেত্রে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড গুনতে হবে। তবে সিটি করপোরেশনের জন্য লাইসেন্স ফি ২০ হাজার এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। হরিণ বা হাতির সংখ্যা বেড়ে গেলে ও বিক্রি করতে চাইলেও বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিয়ে এসব প্রাণী বিক্রিও করা যাবে। ব্যক্তিগতভাবে বা খামারে বন্য প্রাণী লালনপালনের ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

  • শিক্ষক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা