× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

মাদকের উদ্বেগজনক বিস্তার থামাতেই হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১১ এএম

মাদকের উদ্বেগজনক বিস্তার থামাতেই হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের সঙ্গে প্রশাসনিক সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সংস্কার চলছে পুলিশ প্রশাসনেও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভেঙে পড়ে এ বাহিনীর প্রশাসনিক কার্যক্রম। প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠনের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। রাজনীতিকীকরণের অপচ্ছায়ায় পুলিশ প্রশাসনের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে এই বাহিনী এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখছি, পুলিশ বাহিনীর এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলার শিথিলতায় সারা দেশেই চুরি, ছিনতাই, গণপিটুনি, খুনের মতো অপরাধ বেড়েছে। সেই সঙ্গে নেশার খরচ জোগাড়েও বেড়েছে অপরাধমূলক কাজকর্ম। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে থানাগুলোতে রাজনৈতিক মামলার তদন্তে পুলিশ সদস্যদের যতটা সময় যাচ্ছে, তাতে সামাজিক অপরাধ দমনে তারা ততটা সময় দিতে পারছে না। ফলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধীরা। সমাজের নানা স্তরে অপরাধীরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে অপরাধীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে মাদক কারবারিরাও। দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ও উপস্থিতি আগেও ছিল। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর পুনর্গঠনের সময়ে মাদক কারবারিরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মাদক-জাল যে সর্বত্রই ছড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট। ২২ জুলাই ‘মাদক কারবারের বিরোধে মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন সে দিকটিই স্পষ্ট করে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পুলিশের দাবি, নিহত দুজনই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। প্রাথমিক ধারণা থেকে নিহত দুজন সম্পর্কে মোহাম্মদপুর থানার ওসির বক্তব্য অনুসারে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেই প্রতিপক্ষ গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহত মুন্নার বিরুদ্ধে মাদক, নাশকতার অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে এবং নিহত নাসিরের বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি মাদক মামলা।

এ কথা তো স্পষ্ট যে, মাদকের নেশায় কম বয়সিদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। তরুণদের ভবিষ্যৎ মাদকের পাল্লায় পড়ে নষ্ট হয়ে যাক, তা কারোই কাম্য নয়। আমরা দেখেছি, করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং সামাজিক অনিশ্চয়তায় কিশোর-যুবকদের একাংশ নেশার জালে জড়িয়েছে। এবার দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। মাদক প্রতিরোধে পুলিশ-প্রশাসনেরও দায় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় যেমন অপরাধ বেড়েছে, তেমনি ছড়াচ্ছে মাদকের জালও। অতীতে বিভিন্ন সময়ে নানা মহল থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ চাইলেই মাদক কারবার বন্ধ করতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে তাদের সদিচ্ছা দেখা না যাওয়ার কথাই আলোচিত হয়েছে।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের ঢেউকে মানুষ স্বাগত জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নতুন সরকারের কাঁধে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের দায় অনেক বেশি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। সেক্ষেত্রে বাড়াতে হবে প্রশাসনের সক্রিয়তা। মাদক কারবার থামাতে প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি প্রয়োজনে সরকারকে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন করেই থেমে গেলে হবে না, আমরা মনে করি এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের নেটওয়ার্ক ধ্বংসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানেও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, প্রয়োজনে সংস্থাগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশপাশি আধুনিকীকরণেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, যেভাবেই হোক সর্বনাশা মাদকের সহজলভ্যতা বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের সঙ্গে প্রয়োজন জনসচেতনতা বাড়ানো। সমাজের প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে হবে, মাদক মৃত্যুরই সমার্থক। এক্ষেত্রে সব ধরনের গণমাধ্যমকেও সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। অতীতে গণমাধ্যমের খবরেই বিভিন্ন সময়ে মাদকের বিস্তারের পেছনে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। আমরা এমন অভিযোগ আর শুনতে চাই না। অতীতে মাদক কারবারি ধরা পড়লে তাদের ছাড়াতে রাজনৈতিক পরিচয়ে অনেকের সক্রিয় ভূমিকার কথা জানা গেছে। এ ধরনের অনৈতিকতাও যেন আর প্রশ্রয় না পায় সেদিকেও নজর দিতে হবে। মাদকের ভয়াবহতা থেকে তরুণসমাজকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে পুলিশ-প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে। মাদকদ্রব্যের উদ্বেগজনক বিস্তার থামাতেই হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা