সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩০ এএম
বছরের শুরুতে
ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে এর ঊধ্বগতির প্রবণতা দেখা
যায় জুলাই মাসে। আর চলতি মাসে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর
প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে প্রাণ
হারিয়েছে ১১৩ জন। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে
বাড়ছে ঢাকার বাইরেও। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হওয়া রোগীর ৫৫ শতাংশই ঢাকার বাইরের। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে সেই প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গু
মোকাবিলায় যূথবদ্ধভাবে কার্যক্রম চালানো ছাড়া গত্যন্তর নেই।
জুলাই থেকে আগস্টের
প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ভাটা
পড়ে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত সরকারকে
রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রমে মনোযোগ বেশি রাখতে হচ্ছে বিধায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে
সেভাবে মনোনিবেশ করা সম্ভব হচ্ছে নাÑ এমন অভিযোগ কোনো কোনো মহল থেকে উঠেছে। তবে স্বাস্থ্য
বিভাগের যে কার্যক্রম আমরা লক্ষ করছি তাতে বলা যায়, চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে
এমন কোনো কিছু দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে মুখ্য কাজ হলো এডিস মশার
বংশ ও প্রজননক্ষেত্র নির্মূল করা। সেই দিকটায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলোর কতটা নজর
রয়েছে, তা অবশ্য প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন হাসপাতালে
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
গত ৭ জুলাই প্রতিদিনের
বাংলাদেশ-এ একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছিল, ‘ফের ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি, সতর্ক না
হলেই বিপদ।’ ওই প্রতিবেদনে জুলাইয়ের শেষ থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতপক্ষে হয়েছেও তাই। আমাদের দেশে সাধারণত জুলাই, আগস্ট
ও সেপ্টেম্বরÑ এই কমাস যথেষ্ট পরিমাণ বৃষ্টি হয় এবং এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত
তাপমাত্রা থাকে। উল্লিখিত সময়টি ডেঙ্গুর জন্য উচ্চঝুঁকির। এজন্যই যথাসময়ে প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে বলে যে আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছিল,
এখন দেখা যাচ্ছে তা অমূলক নয়।
আমরা মনে করি,
এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি যা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি
মহলকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতেই হবে। প্রতিকারের
চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম, তা ভুলে গেলে চলবে না। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই জনস্বাস্থ্যের
জন্য বিপর্যয় ডেকে না আনতে পারে, সেজন্য সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে
সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। আর এই সাবধানতা বা সতর্কতার দায় শুধু দায়িত্বশীল মহলগুলোরই
নয়, সাধারণ মানুষেরও। বাসাবাড়িসহ পরিপার্শ্ব পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ডেঙ্গুর বাহক এডিস
মশা যাতে বংশবিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে স্ব-স্ব ক্ষেত্র থেকে প্রত্যেকের জোরদার
ভূমিকা পালন করা বাঞ্ছনীয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো স্বীকৃত টিকা এখন পর্যন্ত না থাকলেও
সতর্ক থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়। তাই আতঙ্ক নয়, বরং প্রয়োজন সচেতনতা।
ডেঙ্গুর বাহক
এডিস মশা আগেও ছিল, এখনও আছে। আমরা চাই, প্রাণঘাতী এই মশা নিয়ন্ত্রণে সুসংহত পরিকল্পনা
ও এর বাস্তবায়ন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনের কারণগুলো অচিহ্নিত নয়। আমাদের স্মরণে
আছে, গত বছর সতর্কতার অভাব এবং অকালে ডেঙ্গুর বিস্তার কীভাবে ঘটেছিল, সেই চিত্র সংবাদমাধ্যমে
উঠে এসেছিল। কিন্তু আমরা দেখছি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলো এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি।
পরিবেশের সুরক্ষার পাশাপাশি এডিস মশার প্রজননস্তর সৃষ্টির পেছনে নাগরিক সমাজের বৃহদাংশেরই
অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
ও কীটতত্ত্ববিদদের সতর্কবার্তা আমলে নিয়ে এডিস মশার উৎসস্থল নির্মূলে সময়ক্ষেপণ না
করে প্রতিরোধে যূথবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবাও সহজলভ্য করার বিকল্প
নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির
বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি
হতে বিলম্বের কারণেও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
সরকারি পর্যায়
থেকে শুরু করে বেসরকারি পর্যায়ের সব স্তরে অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রাণঘাতী
ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রয়াস জোরদার করতেই হবে। এডিস মশার বংশবিস্তার কীভাবে রোধ করা সম্ভব
এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর উপসর্গগুলো কী ও এই প্রেক্ষাপটে করণীয়ইবা কীÑ এসব বিষয়ে
অনেকেই কমবেশি জ্ঞাত। তার পরও আমরা মনে করি, জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমসহ সরকারি-বেসরকারি
পর্যায়ে সব স্তরে ব্যাপক কার্যক্রম চালানো জরুরি। একইসঙ্গে জরুরি ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাও।