বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট সিরিজ
ইকরামউজ্জমান
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২৬ এএম
ইকরামউজ্জমান
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা বাড়তি আত্মবিশ্বাস
এবং নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে ভারতে দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি
খেলার জন্য সফর করছে। উল্লেখ্য, দুটি টেস্ট বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। বাংলাদেশের
বাড়তি আত্মবিশ্বাসের কারণ, পাকিস্তানের মাটিতে তাদের দুটি টেস্টে হারানো। দুটি টেস্টেই
পাকিস্তানের মতো দলকে সেরা ক্রিকেট খেলে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে
টেস্ট সিরিজ জেতা চাট্টিখানি কথা নয়। সবাই মিলে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ক্রিকেট খেলেছে
বলেই এমন অর্জন সম্ভব হয়েছে। অসাধারণ একটি সিরিজ বিজয়ের সাক্ষী হয়েছে দর্শক।
ক্রিকেটের একটি চোখ সব সময় পেছনের দিকে থাকে,
আর পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় সিরিজ জয়ের কথাও সূচনাপর্বে তাই উল্লেখ করলাম। আরেকটি
বিষয় বলতে চাচ্ছি, দেশের বাইরে ভিন্ন কন্ডিশনে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ও বোলিং পারফরম্যান্সের
গ্রাফ এখন উৎসাহব্যঞ্জক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। বাংলাদেশ সীমাবদ্ধতা থেকে বেরোতে সক্ষম
হয়েছে। ভিন্ন কন্ডিশনে যেকোনো দলের বিপক্ষে জয়ের কথা তারা ভাবতে পারছে। এই মনোবল-ভাবনা
দলের জন্য নিশ্চয় অনেক শক্তি সঞ্চারক।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ এখনও টেস্ট ম্যাচে
জয়ের স্বাদ পায়নি। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট অনুষ্ঠিত
হয়। ভারতের বিপক্ষে এরপর অনেকবার টেস্ট খেলা হয়েছে। আগে কোনোবার জিততে পারেনি বলে এবারও
জিততে পারবে নাÑতা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আবার পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে দুটি টেস্ট
হারিয়েছে বলে ভারতের সঙ্গেও জেতা অনেকটা সহজ হবেÑএমনটিও ভাবার কোনো কারণ নেই। সবকিছু
নির্ভর করছে খেলোয়াড়দের প্রত্যয়, মানসিক শক্তি, মাইন্ডসেট এবং নির্ভার মনে ক্রিকেট
খেলার সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটানোর মধ্যে। সম্মিলিতভাবে সবাই মিলে দায়িত্বশীল ক্রিকেট
খেলে জয়ের শর্তপূরণও অনেকটা নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ ১৬ সদস্যবিশিষ্ট স্কোয়াডটি সেরা বাছাই।
এর বাইরে আর খেলোয়াড় বোধ হয় দুয়েকজন। এ দুয়েকজন বাদে সবাই ছন্দে আছেন। এ দলটি দীর্ঘদিন
ধরে প্রস্তুতি নিয়ে পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসে যতটুকু সম্ভব হয়েছে
প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্রিকেট প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতি কম হলে নির্ভার ক্রিকেট
খেলা সম্ভব হয় না । খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের লেভেলটি ওপরের দিকে থাকলে এর সুফল মেলে।
ক্রিকেট দলীয় খেলা। সবাই মিলে খেলতে হবে ‘টিম
গেম’। টেস্ট একদম ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট। এখানে দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেশন বাই সেশন
খেলতে হয়। ধৈর্য এবং দায়িত্বশীলতার বড় পরীক্ষা দিতে হয়। টেস্ট ক্রিকেটের চরিত্র দারুণভাবেই
পাল্টে গেছে। আমাদের ক্রিকেটাররা এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন, এটিই
অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। সময়ের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার শক্তি তারা রপ্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
ক্রিকেটে তো আসলে কাজ করার শেষ নেই। তা সব সময় চলমান প্রক্রিয়া। সব সময় ভালো করার চিন্তা
মাথায় রাখতে হবে।
পাকিস্তানে বাংলাদেশ টেস্টে যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে
তাতে পুরো দলই নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত এবং এটুকু ধারণ করে তারা ভারতে মাঠে নামছে। আশা
করি এ প্রেরণা তাদের বাড়তি শক্তি জোগাবে। তা ছাড়া টেস্টে বাংলাদেশ নতুনভাবে শক্তির
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে পাকিস্তানে টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে। এটুকু ক্রিকেটের জন্য বড়
বেশি প্রয়োজন। এ সময়ের টেস্ট দলটি সবচেয়ে পরিপূর্ণ। আজ চেন্নাইয়ে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট
সিরিজের প্রথমটি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন অবধি ১৩
টেস্টের ১১টিতেই জিতেছে ভারত। বাকি দুটি ড্র। একটি কথা সত্য, শক্তি-সামর্থ্যে বেশ এগিয়ে
ভারত। তা ছাড়া নিজ দেশের মাটিতে ভারত বাড়তি শক্তি পাবে। নিজেদের মাঠে ভারত সর্বশেষ
টেস্ট সিরিজ হেরেছে ২০১২ সালে। চার টেস্টের ওই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জেতে ইংল্যান্ড।
তবু শান্তরা রোহিতদের হারানোর স্বপ্ন দেখছেন সঙ্গত কারণেই।
কোনোরকম রাখঢাক না করেই বলছি, পাকিস্তানের
তুলনায় ভারতীয় টেস্ট দল অনেক শক্তিশালী এবং ভারসাম্যপূর্ণ। বাংলাদেশ দলকে তারা মোটেই
সহজভাবে দেখছে না এর প্রতিফলন হলো তাদের স্কোয়াড। টেস্ট ক্রিকেটে ভারত ২ নম্বর র্যাংকিংয়ে
অবস্থান করছে। সেই ১৯৩২ সাল থেকে টেস্ট খেলছে। টেস্ট ক্রিকেটে তাদের সুমহান ইতিহাস
রয়েছে। একটি সময় ভারত দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য লড়াই করেছে। বর্তমানে তারা
ওই প্রতিবন্ধকতা এড়াতে সক্ষম হয়েছে।
দেশের মাটিতে পরিচিত দর্শকের সামনে ভারত খেলবে
এটি তাদের বাড়তি সুবিধা। সব দেশই হোম অ্যাডভান্টেজ নেয়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ আজ
চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ২৭ সেপ্টেম্বর। ভারত তার
ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটে পরিবর্তন এনেছে। আর এ পরিবর্তন তাদের বিদেশ থেকে ডেভিডেন্ট
নিশ্চিত করছে। আর এজন্যই এখন ভারতের উইকেট আর একপেশি আচরণ করে না। এভাবে বাংলাদেশের
পেস এবং স্পিন আক্রমণ উভয়ই চেন্নাই ও কানপুরের উইকেটে কার্যকর না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
চেন্নাই এবং কানপুরের কন্ডিশনে বাংলাদেশ দল খাপ খাইয়ে নিতে পারবে বলে মনে করি।
আবারও করে বলি, ভারত সব সময় নিজ দেশে টেস্ট ক্রিকেটে শক্তিশালী। ২০১২ সালে নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারার পর গত ১২ বছরে কোনো সফরকারী দলের বিপক্ষে সিরিজ হারেনি। বাংলাদেশ শেষবারের মতো ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেছে এবং বড় ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে। আগেই উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশ সবল পর্যায়ের ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে গুণগত মানের দিকে পাল্টে গেছে। গত আটটি টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশ পাঁচটি জিতেছে। বাংলাদেশ দল এখন বিদেশে খেলতে যায় জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য। টেস্ট ক্রিকেটের বাস্তবতায় খেলোয়াড়দের উপলব্ধি পরিষ্কার। পার্টনারশিপ গড়ে অনেক সময় ধৈর্য ধরে ব্যাট করা ছাড়া আর উপায় নেই।