× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

চাঁদাবাজির উৎসে দৃষ্টি দিতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২৬ এএম

চাঁদাবাজির উৎসে দৃষ্টি দিতে হবে

গত মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর সঙ্গতই জনমনে প্রত্যাশা জাগে, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির পরিবর্তনের ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও লক্ষ করা যাচ্ছে, শাসনব্যবস্থায় পটপরিবর্তনের কিছু দিনের ব্যবধানে আগের মতো শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশব্যাপী চাঁদাবাজির যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কৌশল পাল্টেছে বটে, কিন্তু চাঁদাবাজির মতো দুষ্কর্ম পুরোমাত্রায় চলছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চাঁদাবাজদের সবচেয়ে বড় টার্গেট পয়েন্ট হচ্ছে শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্যিক এলাকা, বাস ও নৌ টার্মিনাল, বালুমহাল ও হাটবাজার।

রাজধানী ঢাকা তো বটেই, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং অন্য বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত চাঁদাবাজদের কালো থাবা প্রসারিত হয়েছে। চাঁদাবাজিতে এখন যে নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে তা অতীতের ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, বিগত দিনের রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তনের পর কেউ কেউ দল পাল্টে কিংবা ক্ষমতাসীন দলের অনেকে দাপটের সঙ্গে অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি নেতাকর্মী সেজে অনেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় হতে এ ব্যাপারে বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও এর কোনো সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে না, এমন অভিযোগও আছে। সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশ, ইতোমধ্যে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে, রাস্তাঘাটে সরকারি জায়গা কিংবা জনসম্পত্তি দখল করে আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের অঙ্গ-সংগঠনের কার্যালয় যেসব জায়গায় গড়ে উঠেছিল, বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নাম এখন সেসব জায়গায় শোভা পাচ্ছে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। তারা বরাবরই সমাজবিরোধী এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধী যেই হোক, তার প্রতি কোনো অনুকম্পা প্রদর্শন না করে সরাসরি আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। আমরা জানি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশ তৎকালীন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তাদের ওপর থেকে জনআস্থা হ্রাস পায়। অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীর অনেক ক্ষেত্রে রদবদল ঘটিয়ে বাহিনীটিকে সক্রিয় করার নানারকম পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে।

পুলিশ যেকোনো রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং মুখ্যত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু দেশে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পুলিশের অবস্থান নতুন করে নির্ণয়ের যে জনদাবি রয়েছে তা চলমান সংস্কার কার্যক্রমের বাইরে থাকার কথা নয়। আমরা মনে করি, পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়ে অধিকতর সক্রিয় করার পাশাপাশি তাদের স্বচ্ছতা-দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ চাঁদাবাজিসহ নানা রকমের দুষ্কর্মের যে খতিয়ান উঠে এসেছে এর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে বিশেষ করে পুলিশকে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে। মনে রাখতে হবে, সবার আগে জননিরাপত্তা। চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকাই প্রধান। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, এর উৎস অনুসন্ধান জরুরি বলে আমরা মনে করি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, রাজনীতি আর চাঁদাবাজি একসঙ্গে যায় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিগত এবং এর পূর্ববর্তী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলেই আমরা চাঁদাবাজিসহ সমাজবিরোধী নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের হোতাদের হাতবদল হতে দেখেছি।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপতে সংস্কারের দাবি যেহেতু সবক্ষেত্রেই মুখ্য হয়ে উঠেছে, এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সংস্কার জরুরি বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে কলুষতার ছায়া এমনিতেই অনেকটা দূর হবে। আমাদের অভিজ্ঞতায় এও আছে, অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়েই সামাজিক দুষ্কর্ম ঘটে থাকে এবং চাঁদাবাজিও এর বাইরে নয়। চাঁদাবাজি যেহেতু একটি সামাজিক অপরাধ সেহেতু এর সঙ্গে সঙ্গত কারণেই জননিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িয়ে যায়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়। আমরা এও মনে করি, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজির কৌশল ও ধরন পাল্টে যাওয়ার উৎসে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে কালক্ষেপণের কোনো অবকাশ নেই। ইতোমধ্যে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বের হয়ে এসেছে। তারা যাতে পুনরায় সক্রিয় না হয়ে উঠতে পারে সেদিকেও গভীর মনোযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। চাঁদাবাজিসহ যেকোনো ধরনের সামাজিক দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো প্রয়োজন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা