× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিপার্শ্ব

অস্তিত্ব সংকটে শকুন

প্রকাশ ঘোষ বিধান

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২১ এএম

অস্তিত্ব সংকটে শকুন

প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত পাখি শকুন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পাখিটি মহাবিপন্ন বলে চিহ্নিত হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করা বর্জ্যভুক প্রাণী শকুন। বিভিন্ন রোগের জীবাণু যেমন অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মাসহ অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষ ও পশুপাখিকে রক্ষা করে। সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ছয় প্রজাতির শকুন রয়েছে। চার প্রজাতি স্থায়ী আর দুই প্রজাতি পরিযায়ী। এগুলো হলোÑ রাজ শকুন, গ্রিফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। সব প্রজাতির শকুনই সারা বিশ্বে বিপন্ন। স্থায়ী প্রজাতির মধ্যে রাজ শকুন অতিবিপন্ন।

পাখি শুমারী অনুযায়ী ছোট ছোট উদ্যোগে এখনও প্রায় ১১ হাজার শকুন টিকে আছে। আশির দশকে এ অঞ্চলে শকুন ছিল প্রায় চার কোটি। মাত্র দুই দশকে শকুন হারিয়ে গেছে ৯৯ ভাগ। এখন বেশিরভাগ বাংলা শকুন টিকে আছে ভারতে। বাংলাদেশে আছে মাত্র ২৬০টি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিক থেকে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শকুন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। একইভাবে আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ায় শকুন বিপন্ন।

কৃষিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক, ইঁদুর ও পোকামাকড় জাতীয় জীবজন্তু মারার জন্য বিষমিশ্রিত খাদ্য প্রয়োগ, বায়ুশক্তি উৎপাদনের যন্ত্র এর পাখার সঙ্গে সংঘর্ষে এবং উঁচু গাছ ক্রমাগত কেটে ফেলায় প্রজননের স্থানের মারাত্মক হ্রাস পাওয়ার কারণসহ মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মের জন্য শকুন বিপন্ন প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। শকুন ডাইক্লোফেনাক বিষক্রিয়ার কারণে কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। ডাইক্লোফেনাক হলো একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ, যা ট্রমা এবং সংক্রামক রোগের কারণে প্রদাহ কমাতে দক্ষিণ এশিয়ায় গরু এবং মহিষের ওপর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

পশু চিকিৎসায় বিশেষ করে গরুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত দুটি ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধের বহুল ব্যবহারের ফলেই মূলত শকুন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়া থেকে। এ দুটি ওষুধ খাওয়া প্রাণীর গোশত খেলে তিন মিনিটের মধ্যে কিডনি বিকল হয়ে মারা যায় শকুন। কারণ শকুন এ ওষুধের বিক্রিয়া হজম করতে পারে না।

২০১২ সালে শকুন রক্ষায় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও পাকিস্তান সরকার মিলে একটি জোট গঠন করা হয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ছাড়া তিনটি দেশে একযোগে পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ওষুধ নিষিদ্ধ করে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় ২০১০ সালে। পশু চিকিৎসার জন্য ব্যথানাশক নিরাপদ ওষুধ মেলোক্সিক্যাম আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই ওষুধ ব্যবহারে শকুনের কোনো ক্ষতি হয় না। সম্প্রতি টলফামেনিক অ্যাসিডও শকুনের জন্য ভালো ওষুধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। শকুন রক্ষায় দুটি ওষুধ নিষিদ্ধ করা ছাড়াও সরকার ২০১৩ সালে জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি গঠন করে। ২০১৪ সালে দেশের দুটি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা হয়। প্রথমটি সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু অংশ এবং দ্বিতীয়টি খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ।

আইইউসিএনের সঙ্গে সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালীন দুটি ফিডিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। একটি রেমা-কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে ও অপরটি সুন্দরবন। শুধু স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শকুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না, মারাত্মক রোগজীবাণুসহ দূষিত বস্তু খেয়ে মানবস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক ঝাড়ুদারকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। শকুনের খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। শকুনের আবাসস্থল, বাসা খুঁজে বের করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত প্রাণীটিকে বাঁচাতে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

  • সংবাদমাধ্যমকর্মী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা