যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন
মেলানি ম্যাসন
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৩ এএম
মেলানি ম্যাসন
১০ সেপ্টেম্বর
পেনসিলভানিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যকার বিতর্কের
পর অনেকটা কোণঠাসা অবস্থানে ট্রাম্প। তবে ১২ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের ক্লিফসাইড
গলফকোর্সে তিনি এক সমাবেশ করেন। সেখানে আবারও বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা জয়ী হলে
গোটা দেশের অর্থনীতি ধসে পড়বে। শুধু তাই নয়, হোয়াইট হাউসেও নানা সংকট দেখা দেবে। অনেকেই
মনে করছেন, বিতর্কে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর ট্রাম্প নিজেকে কোণঠাসা অবস্থানে রাখলেও এখনও
পুরোপুরি মানসিকভাবে সামলে উঠতে পারেননি। অবশ্য এবারের বিতর্কে অনেকেই ধারণা করছিলেন,
ট্রাম্প হারবেন। সে রেশ এখনও রয়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লিফসাইডে ট্রাম্প ফান্ডরেইজ
করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে এ বিষয়ে কিছু না করে তিনি কমলা হ্যারিসকে সরাসরি
আক্রমণ করেন।
কমলা হ্যারিসকে
বিতর্কের পরও আক্রমণ করতে গিয়ে ট্রাম্প তার গঠিত রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি ধারণা দেন।
কনজারভেটিভদের জন্য আদর্শ জায়গা ক্যালিফোর্নিয়া। সঙ্গত কারণেই ট্রাম্পের এ বক্তব্য
হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের জন্য একটি সংকট হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিতর্কের দিনের
ঝাঁজ ঝাড়তেই ক্যালিফোর্নিয়ায় হ্যারিসের প্রসিকিউটর হিসেবে রেকর্ড উপস্থাপন করেন ট্রাম্প।
তিনি অভিযোগ করেন, এখানে অপরাধের ক্ষেত্রে হ্যারিস বরাবরই নমনীয় অবস্থানে ছিলেন। বিশেষত
২০০৪ সালে সানফ্রান্সিসকো পুলিশ অফিসার আইজ্যাক এসপিনোজা হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও তিনি
দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। ট্রাম্পের অভিযোগ, এসপিনোজাকে সামধিস্থ করার আগেই
কমলা অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার সুপারিশ করেন। ওই সময় ডেমোক্র্যাটরাও এ ঘটনায়
বিস্মিত হয়েছিল এবং এ ঘটনাই রাজনীতিতে তার অবস্থান পোক্ত করে।
কমলা হ্যারিসের
নির্বাচনী প্রচারাভিযান ওইদিনই ট্রাম্পের এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে। তারা জানায়,
ট্রাম্প গোটা সপ্তাহই বাজে কাটিয়েছেন। তিনি এখন আর কমলার সঙ্গে কোনো বিতর্কে জড়াবেন
না। কিন্তু বিভিন্ন সমাবেশে বিতর্কের মতোই অভিযোগ উত্থাপন করে চলেছেন। রিপাবলিকান কার্ল
রোভ জানান, ‘ট্রাম্পের ভূমিধ্স ওই বিতর্কের মঞ্চেই ঘটে গেছে। এখন ধসটি তাকে ক্যালিফোর্নিয়ায়
নিয়ে গেছে।’ তার মতে, ট্রাম্প যে আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তারই প্রমাণ এ সম্মেলন।
ট্রাম্পের কথা অবশ্য ভুল নয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় অপরাধের মাত্রা গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ
বেড়েছে। তবে এও সত্য, অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি
বছরের জুলাই পর্যন্ত ফৌজদারি অপরাধের মাত্রা ১৬ শতাংশ কমেছে। অপরাধের মাত্রা বাড়লেও
তা নব্বইয়ের দশকের মতো হয়নি। ট্রাম্প বোধহয় বিষয়টি পরে বুঝতে পারেন। তাই তিনি অভিযোগের
আঙুল তোলেন গভর্নর নিউস্কামের বিরুদ্ধে।
তবে তার আলোচনায়
তিনি এমন কিছু নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন যা মুহূর্তেই অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়। নিউজমম
নামে একটি সংবাদমাধ্যম অনলাইনে তার একটি ক্লিপ পোস্ট করে জানায়, ‘ট্রাম্প নিজেই স্বীকার
করে নিলেন তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দুর্যোগকালীন জরুরি অর্থ আটকে দিতেও
দ্বিধা করবেন না।’ ওই সংবাদমাধ্যমে এও বলা হয়, ‘এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বেড়েই চলেছে। আজ দাবদাহ তো কাল বন্যাÑএসব সমস্যায় রাজনৈতিক এজেন্ডাই প্রধান হতে পারে
না। ট্রাম্প শুধু নিজের দিকটাই ভাবেন।’
ট্রাম্প তার সভায়
শুধু কমলা নয়, রাষ্ট্রের বর্তমান নীতিনির্ধারকদেরও আক্রমণ করেন। তিনি এও জানান, ক্যালিফোর্নিয়াকে
শাসন করা সবচেয়ে সহজ কাজগুলোর একটি। কিন্তু এ মুহূর্তে ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থা কী তা-ই
জানেন না। ফলে তার এ সমাবেশ কমলার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ক্যালিফোর্নিয়ার
প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও নিশ্চয়তার বিষয়ে তিনি আলোচনা করেননি। বরং ইলন মাস্কের
সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথাই বলে গেছেন। এসব আলোচনা অনেকের মনেই বিরক্তি বাড়িয়েছে। উচ্চ
কর আদায় এবং উদারনৈতিকতার আলাপ তাকে সমাধান দেবে না। ফলে ক্যালিফোর্নিয়ায়ও ট্রাম্প
বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। ফলে কমলা ও বর্তমান নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা করেও মনে
করলেন বিতর্কের প্রসঙ্গটি টানা দরকার। তিনি আলোচনার মাঝেই তুলে ধরেন, ‘আমি বিতর্কে
যথেষ্ট ভালো করেছি। কিন্তু আমাকে একসঙ্গে তিনজন মানুষের সঙ্গে তর্ক করতে হয়েছে। এবিসির
বামপন্থিগুলো আমাকে বারবার বাগড়া দিয়েছেন।’
বিতর্ক মঞ্চে
সঞ্চালকদের ওপর ট্রাম্পের রাগ রয়েছে। এমনকি বেশ কজন তারকার প্রতিও তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন।
জর্জ স্টেপানোফোলাসের মতো তারকাকেও তিনি সমালোচনা করেন। তবে তার রাগ বেশি পড়েছে ডেভিড
মুইরের ওপর। দুই সঞ্চালকের একজনকে তিনি তুলাধুনা করতে ছাড়েননি। তিনি মুইরকে বোকার হদ্দ
বলে অভিহিত করেন। বিশেষত সাবেক প্রেসিডেন্টকে অপরাধবিষয়ক সমীক্ষা উপস্থাপনে বাধা দেওয়া
এবং সংশোধন করে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও তার ভালো লাগেনি। উল্লেখ্য, মুইর জানিয়েছিলেন
যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের মাত্রা হ্রাসমান এবং তিনি এফবিআইয়ের সাম্প্রতিক জরিপ উপস্থাপন
করেছিলেন।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযান বিতর্কের খণ্ডিত অংশ নিয়েই প্রচার চালাচ্ছে। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বড় শহরে শুধু সমীক্ষা চালিয়েছে। এ পরিসংখ্যান বাস্তব কোনো চিত্র দেখায় না। ট্রাম্প অবশ্যই কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছেন। তবে তিনি যে এখনও হার মানেননি তা স্পষ্ট। বিশেষত এ বিতর্কে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি যে তর্ক উপস্থাপন করেও তার পক্ষে কিছু উপস্থাপন করতে পারেননি এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনও সচেতন হতে পারেননি। অন্তত ট্রাম্পকে দেখলে তা-ই মনে হয়। কিন্তু ট্রাম্প এখনও তার সেই পুরোনো আলোচনাতেই আটকে আছেন। কমলা হ্যারিসের জন্য অবশ্য এ বিষয়টি এত জটিল আকার ধারণ করবে না। কিন্তু শঙ্কা রয়ে যায়। অপরাধের সমীক্ষা এবং এ বিষয়ে কমলাকেও নির্বাচনী প্রচার কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে এখন দৃষ্টি সবার। কোন নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে তা-ই দেখার বিষয়।
পলিটিকো থেকে
সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন