প্রেক্ষাপট
অলিউর রহমান ফিরোজ
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৯ এএম
২০২১ সালে শিক্ষাকার্যক্রমে পরিবর্তন সার্বিকভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধসের
মুখে ঠেলে দেয়। চলতি বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ এক মাস
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে আকস্মিক বন্যা-পরবর্তী অবস্থায় দেশের বিভিন্ন
জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রথম
থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যসূচি পরিবর্তন এবং নিয়মিত পরীক্ষা পদ্ধতির বাতিল হওয়ায় শিক্ষাকার্যক্রমে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস টেস্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা
পেশাদারত্বের পরিচয় দিচ্ছেন না। পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাকার্যক্রম
থাকার পরও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচির অবস্থা খুব ভালো ছিল না। বর্তমানে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাওয়ায় স্কুলে যাওয়া অনেকটা নিয়মসর্বস্বতা
হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে ওঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই শিক্ষক
ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বন্যার কারণে ১১ জেলার ২ হাজার ৭৯৯টি সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের অবকাঠামো,
আসবাবপত্র ও বইপুস্তক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে এখনও সংস্কার কার্যক্রম করার জন্য কোনো আলাদা বরাদ্দ নির্ধারণ করা
হয়নি। বন্যাদুর্গত এলাকায় শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করার নিমিত্তে দ্রুত
বিদ্যালয় অবকাঠামোর সংস্কার করতে হবে। কিন্তু এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য
প্রকৌশল অধিদপ্তর,
উপজেলা প্রকৌশল এবং শিক্ষা অধিদপ্তর এখনও সম্পূর্ণ
ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উদ্ধার করতে পারেনি। অর্থাৎ বন্যাকবলিত এলাকার প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে সচল হওয়ার জন্য সময়
প্রয়োজন। ফলে এসব অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার সকল কার্যক্রমই অচল হয়ে
রয়েছে। এসব এলাকায় কীভাবে দ্রুত এবং বিকল্প পদ্ধতিতে
শিক্ষাকার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায় তার পদ্ধতিগত কোনো ব্যবস্থার নির্দেশিকা দেয়নি
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
তা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা রূপরেখায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আবারও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হবে। শিক্ষার পটপরিবর্তনের বিষয়টি প্রশংসা পেলেও প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের জন্য তা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষার একটি শ্রেণির পাঠের সঙ্গে তারা ভালোভাবে পরিচিত না হয়েই পরের বছর নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে গেলে ঝামেলায় পড়বে। এ ক্ষেত্রে যেসব ছাত্র-ছাত্রী ভীত ও দুর্বল হয়ে গড়ে ওঠে পরবর্তী শিক্ষায় তাদের দুর্বলতা এবং ঝরে পড়া পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষার সকল স্তরের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। বিশেষত, পরবর্তী বছর পাঠ্যক্রমের রূপরেখা কেমন হবে, ক্লাসে কীভাবে পড়া তৈরি করবে কোমলমতি শিশুরাÑ এ বিষয়ে এখন সচেতন নয়। এই বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে ক্লাসে ফিরলে তারা বিপাকে পড়বে। উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা অফিসের রুটিন পরিদর্শন ওয়ার্কে চরম ঘাটতি ও অবহেলার দরুন শিক্ষকরা যেমন-তেমনভাবে ক্লাস নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক সময় স্কুলে এলাকার উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের নিয়োগ দিয়ে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ রয়েছে। তদারকির অভাবে তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে অনিয়মের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না। অনেক স্কুল আবার শিক্ষক সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে না, বিধায় কোচিং বা প্রাইভেট টিউশননির্ভর হচ্ছে। এসব অনিয়ম, গাফিলতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং শিক্ষা অফিসের তদারকির অভাব দূরীভূত করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠুনকো বিদ্যা নিয়েই ভবিষ্যৎ গড়তে হবে, যা উজ্জ্বল জীবন গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।