× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রতিবেশী

কোন পথ বেছে নেবেন মমতা

মোস্তফা হোসেইন

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৩ এএম

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৪৬ এএম

কোন পথ বেছে নেবেন মমতা

এ মুহূর্তে বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে সম্পর্কটা আগের মতো নয়। সমাজমাধ্যমেও তিক্ততার চিহ্ন। এর মাঝেও একটা ক্ষেত্রে দারুণ মিল। ঢাকায় হয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের রেশ না কাটতেই কলকাতায়ও আন্দোলনের ঝড় বইছে। সময়ের প্রয়োজনে জনক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। ঢাকা ও কলকাতায় মিল রয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। দুটো আন্দোলনেই রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিরাপদ দূরত্বে। দুই স্থানেই তরুণদের বড় একটি অংশের রয়েছে রাজনীতির প্রতি অনাস্থা। আবার দুই স্থানেই হঠাৎ ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একক নেতৃত্ব ছিল না বাংলাদেশের গণআন্দোলনে। পশ্চিমবঙ্গেও তাই। দুটি স্থানের সূচনায় প্রাধান্য সাধারণ ইস্যুর। বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে একজন চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। দুটি আন্দোলনেরই শেষ ধাপ এক দফা। বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্য হলো, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্র নয়, রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ মানুষ।

বাংলাদেশের আন্দোলনে শুরু থেকেই রাজনৈতিক সমর্থন দৃশ্যমান হলেও অংশগ্রহণ ছিল শেষ পর্যায়ে এসে। যদিও এখানকার আন্দোলনে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেপথ্য অংশগ্রহণের কথা শোনা যায় আজকাল। তবে বড় দল হিসেবে বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর পর, এটা তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে। পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনে বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসকে পর্যবেক্ষণ করছে মানুষ। সিপিএম এবং অন্যদের বিষয়টিও ঘুরেফিরে আসছে এবং তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের অংশীজন করতে উৎসাহী নয় এটাও স্পষ্ট হয়েছে। যেমনটি বাংলাদেশের আন্দোলনেও নৌকা, ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লাকে একই পাল্লায় মাপা হয়েছে। যেহেতু নৌকার বিরুদ্ধে ছিল ক্ষোভ তাই বাকি দুটি দল ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলনে সক্রিয় সমর্থন দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো মুখিয়ে আছে নিজেদের আন্দোলনে যুক্ত করার জন্য। সে ক্ষেত্রে বিজেপি ও সিপিএমই মূলত আন্দোলনে ভাগ বসাতে চায়। তারা যতটা না আরজি কর ঘটনাকে প্রাধান্য দিচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মমতাবিরোধিতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। বসে নেই বুদ্ধিজীবীসমাজও। তারাও মাঠে নেমেছেন, তবে তারা সঙ্গত কারণেই ক্ষুব্ধ আরজি করের নৃশংসতা বিষয়ে। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে যতই নিরাপদ দূরত্বে রাখতে চাইছে আন্দোলনকারীরা, দলগুলোও ততটাই চাইছে আন্দোলনের ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে। যেমন সব দলই নিজেদের মতো বিশাল বিশাল মিছিলে নেমেছে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের শরিক কিংবা জোটবদ্ধ করার চেষ্টা করলে হয়তো আন্দোলনে বিভাজন তৈরি হতো। বিষয়টা যেভাবে গণবিক্ষোভের পর্যায়ে চলে গেছে, সেটুকু অর্জন হতো কি না সন্দেহ থেকেই যায়।

ভারতীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য রাজনীতির সংযোগ থাকা জরুরি। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি কলাকৌশলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাইনাস করতে পারলে নিজেদের ভিত্তিটা শক্ত করতে পারবে, এমনটা প্রত্যাশা করতেই পারে এবং সেটাই যে করছে তা-ও ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের সমান্তরালে মিছিল-সমাবেশ করছে। কলকাতায়ই শুধু নয়, এ আন্দোলনের রেশ এখন অন্য রাজ্যগুলোতেও কমবেশি বিস্তৃত। বিশেষ করে চিকিৎসকরা তাদের নিজেদের বিষয় হিসেবে গণ্য করছেন। শিল্পীসমাজ, লেখকদেরও আন্দোলনে একাত্ম হতে দেখা গেছে। কলকাতায় যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তা ধর্ষণ নামের সংক্রামক ব্যাধির ধারাবাহিকতাই যেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্ধৃত পরিসংখ্যানই বলে, দৈনিক ৯০টির মতো ধর্ষণ ঘটছে ভারতে, যাকে সহজেই কোভিডের চেয়ে ভয়াবহ বলা যায়। লক্ষণীয়, অন্য রাজ্যগুলোয় স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও কলকতায় আর স্বাভাবিক মাত্রাটা থাকেনি। ফুঁসে উঠেছে একটু বেশি মাত্রায়। মনে করাই যেতে পারে, পুরো ভারতে চলে আসা এ ধর্ষণের প্রতিবাদটা মিলেমিশে বিস্ফোরণ ঘটল পশ্চিমবঙ্গে।

পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন বিষয়ে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার সাবেক সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মানস ঘোষকে ৩১ আগস্ট সকালে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে। জানতে চেয়েছিলাম গতি কোন দিকে। তিনি স্পষ্ট বললেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে পরিস্থিতি। কারণ সম্পর্কে বললেন, পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি সাধারণ মানুষের ধারণা ইতিবাচক নয়। বিশেষ করে আরজি করের ঘটনার দায় স্বীকার করে হোক কিংবা চাপে পড়েই হোক অধ্যক্ষ পদত্যাগ করার ৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে যখন ন্যাশনাল মেডিকেলের মতো বিখ্যাত মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হলো, তখন বিক্ষুব্ধ অংশ তৃণমূল নেত্রীকে তাদের সরাসরি প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য করতে থাকে। অন্যদিকে আরজি করের অধ্যক্ষের অসত্য তথ্যও মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি মৃত চিকিৎসকের ব্যাপারে জানিয়েছিলেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। অথচ পোস্টমর্টেমে জানা গেল মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। জনমতের প্যারামিটারে এমনিতেই নিম্নগামী ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, সর্বশেষ মৃদু জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে আরজি কর মেডিকেলের ঘটনা।

এই যে ঘটনা ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, তাতেও মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। এতে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা স্ট্রাইকে চলে যেতে বাধ্য হন। চাপ পড়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয়। বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গে এখন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসুবিধা কার্যত বন্ধ। মানস ঘোষের কাছে জানতে চেয়েছিলাম আন্দোলনের শেষ কী হতে পারে এবং এখন কোন পর্যায়ে আছে বলে মনে করেন। তিনি বললেন, এখন আর এ আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির আন্দোলন নেই। যখন কোনো আন্দোলন আপামর জনগোষ্ঠীর আন্দোলনে রূপ নেয় তখন বুঝতে হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিণতি হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের মাধ্যমে। মনে হচ্ছে সেদিকেই পরিস্থিতি এগিয়ে যাচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ৫ আগস্টের কাছাকাছি চলে গেছে পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলন। প্রশ্ন হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন পথ বেছে নেবেন? তিনি পদত্যাগ করবেন নাকি শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করেছেন এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। আরজি কর মেডিকেলে তার রাজনৈতিক বাহিনী ঢুকে সমস্ত আলামত ধ্বংস করে দিয়েছে। কোথাও কোথাও আরও ব্যাপক হামলার অভিযোগও পাওয়া গেছে। সফল হননি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে। তাহলে কোন দিকে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সম্ভবত শিগগিরই শেষ হুইসেলটা বাজতে পারে এ খেলার। এমনটাও মনে করছেন কেউ কেউ।

  • সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা