× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অনন্য অর্জন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২০ এএম

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অনন্য অর্জন

‘বলো ভাই মাভৈঃ মাভৈঃ/নবযুগ ওই এলো ওই/এলো ওই রক্ত-যুগান্তর রে।/বলো জয় সত্যের জয়/আসে ভৈরব বরাভয়/শোন অভয় ঐ রথ-ঘর্ঘর রে…’; বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘যুগান্তরের গান’ কবিতার সূচনা পঙ্‌ক্তিগুলো বড় বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রে। ক্রিকেটের তৃপ্ততা, রোমাঞ্চ কিংবা শৈল্পিকতা সবটাই নিহিত টেস্ট ক্রিকেটে। টেস্ট ক্রিকেটেই খুঁজে পাওয়া যায় ব্যাট-বলের লড়াইয়ের আসল সৌন্দর্য, যেখানে পরতে পরতে রয়েছে রহস্য আর স্থৈর্যের উপমা। ক্রিকেট যদি একটি নাটক হয়, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট সেই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র, যার প্রকাশ প্রতিটি গল্পকথায় আর দৃশ্যকল্পে। ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এক নতুন ইতিহাস রচিত হলো। সিরিজ জিতে টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। আমাদের ক্রিকেট যোদ্ধাদের নিয়ে আমরা গর্বিত এবং ইতিহাসে সিরিজ জয়ী অর্জনের জন্য তাদের আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।

লাল-সবুজ ‘বিপ্লব’ পাকিস্তানেÑ ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনের শিরোনাম প্রতীকী অর্থে নয়, প্রকৃতই দেশের ক্রিকেটে একটি গৌরবোজ্জ্বল বিপ্লবের স্বাক্ষর। এই অর্জন নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়, কিন্তু অবিশ্বাস্য নয়। কারণ, সিরিজের প্রথম টেস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে ‘টিম টাইগার্স’ যে ঔজ্জ্বল্যের দ্যুতি ছড়িয়েছিল ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ের প্রত্যেকটি পর্যায়েÑএরপর প্রত্যাশা সঙ্গতই তুঙ্গে উঠেছিল। পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিকদের ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারিয়ে যে দুর্লভ কীর্তি অর্জন করেছে ‘টিম টাইগার্স’ তা গর্বের তো বটেই, একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যাশার পথরেখা আরও চওড়া করেছে।

ক্রিকেটে বিজয় হচ্ছে টিমওয়ার্ক এবং আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত ফল। দলের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাসের ছাপ দেখা গেছে সিরিজ জুড়ে। ব্যাটার এবং বোলাররা কৌশল-নৈপুণ্যের সবটুকু দৃশ্যমান করে এবং ফিল্ডিংয়ে অনবদ্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে যে জয় ছিনিয়ে এনেছেন বাংলাদেশ, তা টিমওয়ার্কেরই ফসল। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা সাফল্যের যে বর্ণালি ছবিগুলো সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে তা যেন মেহেদি রাঙা। ইতিহাস গড়া পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, তাসকিন, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানাসহ প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। ক্রিকেট-বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো অনেক কিছুই করেছেন তারা। তাদের এই সাফল্য শুধু দেশের জন্যই গর্বের বিষয় নয়, ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের জন্যও অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা দেখেছি, এক সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রত্যেকেই যেন অবতীর্ণ একেকজন ক্রিকেট নায়ক হিসেবে। সাকিব আল হাসানের অভিজ্ঞতার পূর্ণ ঝুলি অন্যদের আরও অনুপ্রাণিত করেছে। নায়ক আছেন, অথচ পার্শ্ব নায়ক নেই, এমন সিনেমার গল্প দর্শকদের খুব একটা টানে না। এজন্যই সিনেমার গল্পে যেমন নায়ক থাকে, পাশাপাশি থাকে পার্শ্ব নায়ক ও আরও অনেক চরিত্র এবং সবটা মিলেই গড়ে ওঠে একেকটি সফল গল্প। বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরে সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে সেই গল্পের খতিয়ানই হয়েছে আরও বিস্তৃত।

সব মিলিয়ে পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশ যেন হয়ে উঠেছে একটি আদর্শ ক্রিকেট দল, যে দলের যোগ্য নেতৃত্ব দৃশ্যমান করেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার নেতৃত্ব গুণ দিয়েই তিনি দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কাকে রেখে কার অবদানের কথা বলবেন তিনি, সিরিজ শেষে এমন ধন্দেই যেন পড়েছিলেন। অধিনায়ক বললেন, ‘এই সাফল্য আমাদের জন্য বিরাট একটি ব্যাপার। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা পাকিস্তানে জিততে চেয়েছিলাম। আনন্দ এই কারণে আরও বেশি যে, দলের সবাই এ সাফল্যের জন্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন শতভাগ।’ সংবাদমাধ্যমেই আমরা জেনেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোনালাপের বার্তা। তিনি অধিনায়ককে বলেছেন, ‘আমরা ও সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন। পুরো জাতি তোমাদের নিয়ে গর্বিত।’ দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ দলকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মাঠে দাঁড়িয়েই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন উচ্ছ্বসিত নাজমুল।

এই সিরিজে বাংলাদেশের পেসাররাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। পেসারদের দেশ পাকিস্তান অনেক কিংবদন্তি ফাস্ট বোলারের জন্ম দিয়েছে। সেই পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাদেশের পেসারদের এমন দাপট অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তার সতীর্থদের নিয়ে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের নন্দিত গল্প লিখলেন পাকিস্তানের মাটিতে। এই গল্প হয়তো আরও অনেক গল্প রচনার অনুষঙ্গ হয়ে উঠবে। শাবাশ বাংলাদেশ। শাবাশ বাংলাদেশের ক্রিকেট যোদ্ধারা। সাফল্যের গল্পগুলো অনবদ্যই হয়। আত্মবিশ্বাসে ভর করে অপ্রতিরোধ্য ‘টিম টাইগার্স’ যে চমক দেখিয়েছে পাকিস্তানের মাটিতে তা বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা কীর্তি হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। কোনো কোনো জয়ের গল্প লিখতে গিয়ে উপমা খুঁজে পাওয়া ভার হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের গল্পটা সে রকমই বটে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করে টেস্ট ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে বিরল সম্মান অর্জন করেছে তাতে দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী উদ্বেলিত না হয়ে পারেনি। আমরা দেখেছি, সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের প্রদর্শিত নৈপুণ্যের খবর বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে তো বটেই, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ উঠে আসে ‘টিম টাইগার্স’কে ঘিরে। পরিসংখ্যান বলে, এই অর্জন অনেক বিশাল। বিদেশের মাটিতে ৩৪ সিরিজের মধ্যে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় জয়। এর আগে দুটি টেস্ট সিরিজ জয় করেছিল বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রায় দুই যুগের অপেক্ষার পর পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে অসাধারণ টিমওয়ার্কের নৈপুণ্য উপস্থাপন করেছে।

আনন্দের বার্তা আছে আরও। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর আইসিসি থেকে সুখবর পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ‘টিম টাইগার্স’। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পরেই এখন বাংলাদেশের নাম। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জয়ের বিশেষত্ব শুধু অভিনন্দনের মাধ্যমে যেন শেষ হওয়ার নয়। এ কোনো রূপকথা নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। বলা হয়ে থাকে, আত্মবিশ্বাস জীবনে বেশি শক্তি সঞ্চারক। তারুণ্যের ডানায় চড়ে সিরিজ জয়ের মুকুট অর্জন করে টিম টাইগার এরই সাক্ষ্য দিয়েছে। নিকটেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভারতে যাচ্ছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্ট সিরিজ খেলার জন্য। আমরা আশাবাদী ওই সিরিজগুলোতেও আত্মপ্রত্যয়ের শক্তি প্রতিভাত হবে। আমরা মনে করি, পাকিস্তানে সিরিজ জয়ের প্রেরণা ভারতে খেলতে যাওয়া সিরিজে অন্যরকম আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আমরা সেই সিরিজগুলোতেও আলোর ঝলকানি দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা