× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বৈশ্বিক সম্পর্ক

কূটনীতির ছক কষে এগুতে হবে নতুন পথে

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৯ এএম

কূটনীতির ছক কষে এগুতে হবে নতুন পথে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক নতুন বাংলাদেশের মুখোমুখি আমরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভ্যুত্থানে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল এবং গণমানুষের সমর্থন পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন সরকারকে ঘিরে দেশের মানুষের গড়ে উঠেছে নানা প্রত্যাশা। আর এমন সময়ে আন্তর্জাতিক মহলেও এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। বিশ্বের শক্তিশালী বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে সবরকম সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই নতুন সময়ে আমাদের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়েও ভাববার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বর্তমান সময়ে মূলত অর্থনৈতিক কাঠামোকে সক্রিয় করাই আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আর বড় পরিসরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের অর্থনীতিকে সচল করার জন্য কী কী করণীয় তাও ভাবতে হবে। বহির্বিশ্বে অন্য দেশগুলো আমাদের কী কী বাণিজ্যিক সুবিধা দিতে পারবে তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষত, যেসব দেশের কাছে আমাদের ঋণ নেওয়া আছে, সেসব দেশের কাছে অতিরিক্ত সময় চাওয়া প্রয়োজন। ঋণের মেয়াদ আরও কিছুদিন বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ঋণশোধের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি সুদহার কমানোর বিষয়েও আলোচনা করতে হবে। এসব এখন আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়।

দেশের অর্থনীতি কিছুটা শ্লথ। এমন সময়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দেশে এখন বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কিছু সামাজিক সমস্যাও দূর করা সম্ভব। আমাদের যদি উন্নয়নমুখী যাত্রাপথে পরিচালিত হতে হয় তাহলে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। যেকোনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় বাণিজ্য বাড়তি গুরুত্ব পাবে। আমাদের স্বার্থের বিষয়টিও সেখানে যেন ব্যাপক গুরুত্ব পায় তা দেখতে হবে। সেজন্য প্রায় সব দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক রাখা দরকার। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক সম্পর্ক যত বেশি উন্নত করা যায় ততই ভালো। বিদেশিরা এখন আমাদের পর্যবেক্ষণ করছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা গড়ে উঠেছে কি না তারা তা দেখতে চাইবে। যদি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় সংগত কারণেই তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। বিশেষত, নতুন বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি শঙ্কায় থাকবে। এই শঙ্কা দূর করার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। একই কথা পুরোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অনেক বিনিয়োগ ইতোমধ্যে দেশে রয়েছে। সেগুলো যদি কোনো কারণে থেমে যায় বা দেখা যায় সেগুলো কাজ করতে পারছে নাÑ তখন আমরা এসব বিনিয়োগ হারাব। আইনশৃঙ্খলা কিংবা নিরাপত্তাহীনতাজনিত কারণে যদি তাদের বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীরা সরে যাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে আমরা কীভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারি তা ভাবতে হবে।

অর্থনীতির কাঠামোর দিকে তাকালে আমাদের জন্য বেশ কিছু শঙ্কা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি এখনও বড় সংকট। রিজার্ভ সংকট এখনও কাটেনি। অর্থাৎ আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জ ভেবে রেখেই আসলে এগোতে হবে। সরকারকে সময় দিতে হবে। অন্তত ৬ মাস যাওয়ার পর আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে বিনিয়োগ আছে কি না, বিভিন্ন ধরনের সাহায্য কি আসছে? দেশের অবস্থা একটু স্থিতিশীল হলে আমরাও এ ব্যাপারে বিদেশিদের বলতে পারব যে, তারা আমাদের কী ধরনের সাহায্য করতে চাচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে আমরা দ্রুত উদ্যোগ নিতে পারি। দেশের মানুষ একটু অল্পতেই অধৈর্য হয়ে যায়। তাই কিছু কিছু বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে হবে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য নতুন সরকারকে শিগগির কিছু অগ্রগতি দেখাতে হবে। মুদ্রাস্ফীতি কত তাড়াতাড়ি কমানো যায় এবং অর্থনীতির কাঠামো কত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেÑ সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে দ্বিতীয় যেটা বিষয়, সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ কত তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবো।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বনেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তারা সহযোগিতা দিতে নিজেদের প্রস্তুতির কথাও ব্যক্ত করেছেন। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত, যে মৃত্যু ও সহিংসতা ঘটেছে, তার জবাবদিহি নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেশের গণতান্ত্রিক পথ এবং বাংলাদেশের জনগণ ও যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নে উভয় দেশের জনগণের যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এই মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে কিছু বিষয়ে আমাদের টানাপড়েন চলছে।

ভারতের জনগণের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে প্রতি বছর অনেক মানুষ মারা যায়। বাণিজ্য ঘাটতিও একটি বড় ব্যবধান তৈরি করে রেখেছেন। এসব কারণে ভারতের প্রতি দেশের মানুষের এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠেছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবে এজন্য তাদেরকে আমাদের জন্য নতুন কোনো কূটনৈতিক কৌশল অনুসরণ করতে হবেÑ ব্যাপারটি এমন নয়। মুখ্যত ভারতের সঙ্গে সাবেক সরকারের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া ভারতমুখী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের ধাত থেকে তারা বেরোতে পারেনি। মুখ্যত ভারতকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এদেশের জনগণের সঙ্গে কী রকম সম্পর্ক গড়ে তুলবে। কারণ এই দীর্ঘদিন তারা একটি অংশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিল কিংবা ওই অংশের দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল।

এদেশের বিরাট একটি অংশ ভারতের থেকে দূরে সরে গেছে এবং তাদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণাও গড়ে উঠেছে। কারণ যে বিষয়গুলো আমাদের প্রাপ্ত ছিল সেগুলো আমরা পাইনি। আবার দুই দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা ছিল, যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। অথচ ভারত এখান থেকে অনেকগুলো সুবিধা নিয়ে গেছে। এজন্যই ভারতের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে। আর এ নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে হলে ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ উদ্যোগ তারা কবে নিবে সে সিদ্ধান্তও তাদেরই নিতে হবে। সেইসঙ্গে আমাদের দিক থেকেও বর্তমান সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। তাদের সঙ্গে আমাদের বর্তমান সম্পর্কের অবস্থা যাচাই করতে হবে। সেই নিরিখে গড়ে তুলেতে হবে তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। যদি ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা প্রকল্প থাকে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয়তা নেহাত কম এবং মিল নেইÑ তাহলে সেসব চুক্তি বাদ দেওয়াই ভালো বলে মনে করি। বাদ দেওয়া না গেলে এগুলোকে নতুনভাবে দেখা জরুরি অবশ্যই।

ভারতের পাশাপাশি কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের বিকল্পও ভাবা উচিত। ভারতের সঙ্গে কিছু বিষয়ে সম্পর্ক বা চুক্তি না করে অন্য দেশের সঙ্গে করা গেলে তাও আমাদের খুঁজে দেখা জরুরি। যেমন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে নিজেদের চাওয়ার কথা সরকারকে জানিয়েছে ওয়াশিংটনরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ একাধিক সংকট সমাধানে তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা রয়েছে। এখন প্রয়োজন আমাদের আসলে লাভ কোথায় সেই দিকটি খুঁজে বের করা এবং এজন্য আমাদের স্বার্থের ভিত্তিতেই কূটনীতি পরিচালনা করতে হবে। কূটনীতিকে পরিচালনা করতে হবে পর্যবেক্ষণ এবং তার ভিত্তিতে নেওয়া মূল্যায়নের ওপর। এর বাইরে গেলে আমাদের লাভ হবে না। আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে বাজার বাড়াতে হবে। এদিকেও মনোযোগ বাড়াতে হবে।

  • রাজনীতি-কূটনীতি বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা