× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

বন্যা : শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৯ এএম

বন্যা : শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

প্রকৃতি বিরূপ হলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। সেই অসহায়ত্বের অসহনীয় নজির দেখা গেল এবারের বন্যায়। ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে প্লাবিত হয় দেশের ১১টি জেলার ৭৭টি উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। বন্যায় অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। একটু আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়ি ছাড়েন কয়েক লাখ মানুষ। সেই বিপন্নতায়, নজিরবিহীন প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক লাখ শিশু ও তাদের পরিবার। আশার কথা, দুর্যোগ শুরুর পর যেভাবে দেশের নানাস্থান থেকে মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তা অভাবনীয়। অতীতেও দেশের মানুষ যেকোনো স্থানে দুর্গতদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন, সাহায্যের জন্য ছুটেছেন। তবে এবারে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ এবং তাদের স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব বন্যার্তদের বাড়তি সাহস জুগিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও দ্রুততার সঙ্গে সহায়তা তহবিল তৈরি এবং অসহায় মানুষের পাশে পর্যাপ্ত সাহায্য নিয়ে দাঁড়ায়। তারপরও অনেক স্থানে বিশেষত, দুর্গম এলাকায় সবার কাছে ত্রাণ না পৌঁছানোর হাহাকার সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ চালিয়ে গেলেও দুর্গম অনেক স্থানেই সাহায্য পৌঁছেনি। আবার মৌসুমি বৃষ্টিও অব্যাহত রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। শিশুদের ঝুঁকির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল- ইউনিসেফের প্রতিবেদনেও। ‘বন্যায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু’ শিরোনামে ৩১ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইউনিসেফকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, চলমান বন্যায় বাড়িঘর, স্কুল ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ২০ লাখের বেশি শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে। ৩০ আগস্ট ইউনিসেফ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিগত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়ংকর এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ৫৬ লাখ মানুষ। বন্যাদুর্গত মানুষ বর্ণনাতীত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দীর্ঘসময় বন্যার পানি জমে থাকায় এসব এলাকার খাবার পানিও দূষিত হয়ে পড়ছে। আমরা জানি, বন্যাকবলিত এলাকায় সুপেয় পানির উৎস সংক্রমিত হলে ডায়ারিয়াসহ পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বন্যার পানি বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে মিশে বা খাবারবাহিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করলেই ডায়ারিয়াসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ বাড়ে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় তুলনামূলক আরও অনেক বেশি।

সরকারি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকদের বাড়ানো সহায়তার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে ইউনিসেফও। তবে সংস্থাটি বলছে, এসবের বাইরে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও শিশুদের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানীয়জল, স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ (হাইজিন কিট), জরুরি ল্যাট্রিন তৈরি, স্যানিটারি প্যাড, মুখে খাওয়ার স্যালাইন এবং জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রয়োজনীয়তা কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং গর্ভবতী মায়েরা যেন নিরাপদে তাদের সন্তান জন্ম দিতে পারেন তার জন্যও প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম অবিলম্বে চালুর ওপরও জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে সংস্থাটি শিশুদের ভবিষ্যতের ওপর চলমান এই সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব রোধ করতে আরও তহবিলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও জোর দিয়েছে।

আমরা জানি, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে জীবন এখনও স্বাভাবিক হয়নি। সুপেয় পানিসহ নানান সংকটে আশ্রয়স্থলগুলো এখনও দুর্বিষহ হয়ে রয়েছে। অনেক স্থানেই ঢেউ খেলছে নোংরা পানি। দীর্ঘসময় পানিবন্দি থাকায় চর্মরোগের সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রকোপও বাড়ে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। যা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তার। বন্যা-পরবর্তী সময়ে শিশুদের ডায়রিয়ার ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি। এজন্য বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যায় নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে আমরা জোর দেই। সেইসঙ্গে যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম এবং বারবার সংক্রমণে ভুগছে তাদের বিষয়ে বাড়তি নজর ও যত্ন নিশ্চিতের জন্য বলি। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি সুপেয় পানির বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্যও বলি। বন্যা-উপদ্রুত এলাকায় জীবন ও জীবিকার যে সংকট সেখানে সবার সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।

যেসব এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে সেসব এলাকার মানুষের চাহিদা বিবেচনায় সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে হবে। উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি স্বাস্থসেবায় মেডিকেল টিম গঠন ও প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী পৌঁছানোর প্রক্রিয়া জোরদার করা জরুরি। প্রয়োজনে রোগীর দ্রুত উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ সুরক্ষা নিশ্চিতের উপাদানগুলো পৌঁছাতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকারের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। যাতে করে শিশুসহ বন্যাদুর্গত এলাকার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা