অলিউর রহমান ফিরোজ
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৩৮ পিএম
প্রকৃতির বোবাকান্না আমরা কেউই শুনছি না। প্রকৃতির ওপর প্রতিনিয়তই যে নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়ে তাকে উত্তপ্ত করে তুলছি, সে কথা কি আমরা ভাবছি? কেন প্রকৃতি আমাদের এ ধরণির সঙ্গে ভয়াল ও নিষ্ঠুর আচরণ করছে, তাও কি আমরা ভেবে দেখছি? প্রথমে যে কথাটি উঠে আসে- তাহলো কার্বন নিঃসরণ। আমরা এত এত কার্বন প্রকৃতিতে ছাড়ছি, যার জ্বালাময়ী উত্তপ্ততায় প্রকৃতির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। তাতেই আমাদের শরতের নৈসর্গিক পরিবেশ বিপন্ন করে তুলছে। আকাশ দাপিয়ে মেঘ তার জলের ধারা ভূপৃষ্ঠে নিক্ষেপ করছে। এত সুন্দর অনাবিল বৈচিত্র্যময় ঋতু আর বৈচিত্র্যময় থাকছে না। শরতের হালকা শীতের শিশির বিন্দু ঘাসের ডগায় পড়ছে না। পড়ছে ভয়াবহ জলের ধারা। যা আমাদের জনপদের পর জনপদ কখনও ডুবিয়ে মারছে, আবার কখনও পাহাড় ভেঙে বাড়িঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। এসবই প্রকৃতির সাথে আমাদের নিষ্ঠুরতার প্রতিফল। আমরা প্রকৃতির সাথে যেমনটা করব প্রকৃতিও সেভাবেই আমাদের ফিরিয়ে দেবে।
আবহমান গ্রাম-বাংলার জনপদ ছিল প্রকৃতির রূপ-ছন্দে ভরপুর। গ্রীষ্মে গরম, শীতে ঠান্ডা আর বর্ষায় জলের ধারা। কিন্তু সবকিছুই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, পাহাড়ধস, ভয়াল বন্যার থাবা আমাদের ঘিরে রাখছে প্রতিনিয়ত। তারপরও আমরা পরিবেশ রক্ষায় সবুজ বনায়নে প্রকৃতিকে সাজাচ্ছি না। কার্বন নিঃসরণে ধনী দেশগুলোকে চাপে ফেলে তা কমিয়ে আনতে সমর্থ হচ্ছি না। তাতেই আমাদের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়ে উঠেছে। তার রোষের অনলে পড়ে আমরা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি।
এবার বন্যার যে ভয়াবহতা আমরা দেখলাম, তার স্রোত এতটাই আগ্রাসী যে, মাকে নিরাপদে রেখে এসে দেখে ঘর নেই এবং ঘরে থাকা বৃদ্ধ বাবাও নেই। শুধু কি মানুষই আক্রান্তের শিকার? গবাদিপশু, বিড়াল-কুকুর থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি কেউই ভয়াবহ ছোবলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। জলের তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে। গত ত্রিশ বছরের মধ্যে বন্যার এমন তীব্রতা ও ভয়াবহতা দেখেনি মানুষ। তাই আগাম প্রস্তুতিও ছিল না। তাতেই সর্বনাশটা বেশি ঘটেছে। জীবন বাঁচানোই যেখানে দায়, সেখানে অন্য গৃহপালিত পশুপাখি কীভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে নেবে। তবে এবারের বন্যার চিত্র ছিল বহুমুখী। একদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মেঘের জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটেছে, অন্যদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে সমুদ্র ছিল ফুলেফেঁপে। তার ওপরই ভারতের সিকিমসহ কয়েক স্থানের ভারী বৃষ্টিপাতের পানি নামার রোডম্যাপ হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সে ঢলেই মূলত জলের মহাস্রোত বইতে শুরু করে। তার ওপর অনেকগুলো বাঁধ একসাথে ছেড়ে দেওয়া হয়। পানির বেগতিক দৃশ্যপট একাকার হয়েই এ ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এর আগেও কয়েক দফার বন্যা মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করেছিল। বারবার বন্যায় বিপদাপন্ন মানুষ বড় বিপর্যয় ও বিধ্বস্ত হয়েছিল।
ভারতের মন্ডরুবাঁধ এবং ফারাক্কার মনুষ্য সৃষ্ট কর্মকাণ্ডে এপার বাংলার মানুষের নাজেহাল অবস্থা নতুন কিছু নয়। একদিকে খরার সময়ে তাদের পানির অভাবে জীবন হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত, আবার বর্ষায় সব ডুবিয়ে ছাড়ে। তাই এখনই সময় এসেছে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে এবার উদ্ধার কাজ ছিল চোখে পড়ার মতো। সব শ্রেণির মানুষ বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। তবে খাদ্য ও পানীয় জোগান নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। দ্রুতই নিতে হবে পুনর্বাসনের কাজ।
প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠক, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ