× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তারুণ্যের জাগরণ

পরিবর্তনের বার্তা

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৩০ পিএম

পরিবর্তনের বার্তা

আমি পরিবর্তনের পক্ষে। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় দার্শনিক পল এস বার্ক বলতেন, চেঞ্জ চেঞ্জ চেঞ্জ ইস লাইফ। জীবন পরিবর্তনশীল। আমরা যারা মধ্যষাটে আমরা কত যে পরিবর্তন মেনে নিয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের পিতারা সাতচল্লিশের অন্যায্য দেশভাগ মেনে নিয়েছিলেন। আমরা একাত্তরে যৌক্তিক মুক্তিযুদ্ধ মেনে নিয়েছি। আমরা পঁচাত্তরের পট পরিবর্তন ও মিলিটারি শাসন মেনেছি। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এরশাদের পতন মেনেছি। মুক্তিযুদ্ধ মানা-না মানার সহাবস্থান মেনেছি। রাষ্ট্র শাসনব্যবস্থায় জাঁকিয়ে বসা শেখ হাসিনার পলায়ন, দেশত্যাগও মেনেছি। কারণ রাজনীতি হচ্ছে মানা-না মানার একটা সমীকরণ।

আজ বাংলাদেশে তারুণ্যের যে জোয়ার তার সঙ্গে দুনিয়ার অনেক দেশের জোয়ারের মিল আছে। যারা ভুলে গিয়েছিল এটি ডিজিটাল দুনিয়া, যাদের কথা শুনলে মানুষ মনে করত কাউয়া কা কা করছে তারা তারুণ্যের ভাষা বুঝতে পারেনি। ফলে পরিবর্তন দরকার হয়ে পড়েছিল। কথায় বলে, হামবড়া ভাব পতনের মূল। অহংকার যে কত রাজা-বাদশাহর গদি কেড়ে নিয়েছে তার প্রমাণ ইতিহাসের অধ্যায় হয়ে রয়েছে। খোদ আমেরিকা হারানো ইংল্যান্ডের মনে ছিল না যে মানুষ বিদ্রোহপ্রিয়। জর্জ ওয়াশিংটন নামে এক সেনাপতির কাছে যে মার খেয়ে আমেরিকাকে স্বাধীনতা দিতে হবে তা তারা ভাবতেও পারেনি। কিন্তু সেটাই ঘটেছিল। ১৭৭৬ সালের ২২ আগস্ট নিউইয়র্কের এক যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাদের হাতে আমেরিকানরা পরাজিত হয়। ব্রিটিশ সেনারা নিউইয়র্ক দখল করে শুরু করে অত্যাচার আর লুটতরাজ। এ সময় তারা ঘোষণা করলÑযেসব বিদ্রোহী ষাট দিনের মধ্যে অস্ত্র পরিত্যাগ করবে, তাদের ক্ষমা করা হবে।

এ রকম চরম হতাশার মধ্যে আমেরিকানদের কাছে একমাত্র আশার প্রদীপ ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। তার অধীন স্বাধীনতাকামী আমেরিকান সেনাদের দুর্গতির শেষ ছিল না। তাদের পেটে খাবার, পায়ে জুতা পর্যন্ত ছিল না। ফ্রান্সের সঙ্গে ইংরেজদের শত্রুতা তখনও চলছিল। কানাডা হারিয়ে ফরাসিরা ইংরেজদের ওপর ভীষণ চটে রয়েছে। ফলে আমেরিকানরা ফরাসিদের সাহায্য চাইতেই তারা রাজি হয়ে গেল, কিন্তু এই সঙ্গে তারা দাবি করল যে, তাদের সাহায্য নিতে হলে আমেরিকাকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে হবে। আমেরিকানরা সহজেই এ শর্ত মেনে নিল এবং ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকার পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলো। দুই দিক আক্রমণাত্মক যুদ্ধে অবশেষে হেরে গেল ইংল্যান্ড। এরপর ১৭৮৩ সালে ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে এ সংগ্রামের হলো অবসান। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা স্বীকার করে নিল ইংল্যান্ড। আর ওভাবেই জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে সৃষ্টি হলো বিশ্বের বুকে একটি অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রের।

এবার আসি চার্চিলের কথায়। তির্যক মন্তব্য এবং চার্চিলের রাজনীতি বিষয়ে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভালো রাজনীতিবিদের যোগ্যতা কী হওয়া উচিত। চার্চিল বলেছিলেন, ‘বিশেষ কিছু নয়। শুধু তাকে দূরদর্শী হতে হবে; সে যেন ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা ঠিকমতো বলতে পারে। আর যখন সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলবে না, তখন যেন ব্যাখ্যা দিতে পারে, কেন মিলল না।’ এবার চার্চিল সম্পর্কে একটি পরিচিত গল্প বলি। চার্চিলের আশি বছরের জন্মদিনে এক তরুণ ফটোগ্রাফার তার ফটো তুলতে গিয়েছিল। সে মাতব্বরি করে বলেছিল, ‘আমি আশা করি আপনার জন্মশতবর্ষেও এসে এমনিভাবে ছবি তুলে নিয়ে যেতে পারব।’ তরুণ ফটোগ্রাফারের উৎসাহে এক কলসি ঠান্ডা জল ঢেলে দিয়ে চার্চিল তার পিঠ চাপড়িয়ে বললেন, ‘কেন নয় ছোকরা? তোমার স্বাস্থ্য তো বেশ ভালোই দেখছি। নিশ্চয়ই তত দিন বেঁচে থাকবে।’

দূরদর্শী না হলে রাজনীতি না করাই ভালো। কারণ এরপর যা থাকে তার নাম অপমান। আমাদের দেশে সদর্থক পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। এখন আশার পালা। একটা জাতি কেবল তোষামোদী বা তেলের ওপর চলতে পারে না। বলছিলাম আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সুশাসনের সমাজ চাই। সুশাসন ফিরে এলে জাতিকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। যেসব উপরি ঢেউ বা অপবিষয় মাথা চাড়া দিয়েছে সেগুলো অচিরেই বন্ধ করা দরকার। যতকাল পানি ঘোলা থাকবে ততকাল জাতি তার চেহারা ঠিকভাবে দেখতে পাবে না। ঠিকভাবে চেহারা দেখা না গেলে কিছু বোঝাও যাবে না।

পজিটিভ হওয়ার সময়ে এ গল্পটি মনে পড়ছে। একবার একদল ব্যাঙ বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় এ ব্যাঙের দল থেকে দুটি ব্যাঙ গভীর গর্তে পড়ে গেল। গর্তটি এতটা গভীর ছিল যে সেটি থেকে উঠে আসা খুবই কঠিন। তবু ব্যাঙ দুটি তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছিল। দলের অন্য ব্যাঙগুলো বলাবলি করছিল, এদের এ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার কোনো আশা নেই। কিন্তু অদম্য ব্যাঙ দুটি চেষ্টা করতেই থাকল, তারা প্রাণপণে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদটির ঢালু জায়গা পার করে শেষের দিকের খাড়া অংশের কাছে এসে এসে আবার উল্টো নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছিল। তখন ওপরে থাকা ব্যাঙগুলো চিৎকার করে তাদের বলছিল, ‘তোমরা কিছুতেই ওপরে উঠতে পারবে না, এটি খুবই বড় গর্ত, এখান থেকে উঠে আসা কোনোভাবেই সম্ভব না।’ তাদের কথাগুলো এমন ছিল যেন তারা বলতে চাইছে-শুধু কষ্ট করে লাভ নেই, আশা ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও; কষ্ট থেকে মুক্তি পাও।

দুটি ব্যাঙের মধ্যে একটি তাদের কথায় কান দিল এবং গর্তের ওপরের দিকে ওঠা বাদ দিয়ে আরও গভীরের দিকে লাফিয়ে পড়ে মরে গেল। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাঙটি আরও উদ্দম নিয়ে লাফাতে লাগল, আর ওপরে থাকা ব্যাঙেরা আরও জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলÑ‘এ বৃথা কষ্ট কোরো না, মৃত্যুকে সহজ করো।’ কিন্তু ব্যাঙটি অবশেষে ওপরে উঠে এলো। ওপরে ওঠার পর ব্যাঙটি যা বলল তাতে দলের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ব্যাঙটি বলল, ‘ওপর থেকে তোমরা চিৎকার করে করে আমাকে উৎসাহ দেওয়ার কারণেই আমি মনোবল ফিরে পেয়ে ওপরে উঠে এলাম। তোমরা না থাকলে আমি হয়তো হাল ছেড়ে দিতাম। আমি কানে শুনতে পাই না, শুধু চোখে দেখেছি তোমরা গলা ফাটিয়ে আমাকে ওপরে উঠে আসতে বলছ।’ আশপাশের মানুষের একটু উৎসাহ মানুষকে কঠিন বিপদেও সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে এবং নেতিবাচক কথায় কান না দিয়ে নিজ লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সফলতা আসে। দেশ ভালো থাকুক। ভালো থাকুক আমাদের মানুষজন।

  • সিডনিপ্রবাসী লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা