× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আসামির সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৫:১৮ পিএম

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৫:১৮ পিএম

আসামির সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে

দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আটক মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের আদালত প্রাঙ্গণে জনরোষের শিকার হয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। গ্রেপ্তারকৃত যে কাউকে আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আদালতে হাজির করা পুলিশের আইনানুগ দায়িত্ব। কিন্তু আমরা দেখছি, পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সময় আদালত প্রাঙ্গণেই তাদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণ তো বটেই, যেকোনো ক্ষেত্রে আসামি কিংবা বন্দির ওপর এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা জানি, রাষ্ট্রের সুরক্ষিত স্থানগুলোর মধ্যে আদালত এবং কারাগার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সম্প্রতি আদালত চত্বরে আসামিদের ওপর যে হামলা হচ্ছে তা কোনো অবস্থাতেই যে গ্রহণযোগ্য নয়, এটা স্বীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টাও। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, এমন ঘটনা যাতে না হয়, সে বিষয়ে তারা বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণের চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে যথাযথ নিষ্ঠার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক কারণেই আসামি কিংবা বন্দির সুরক্ষার বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উঠছে। কোনো কোনো আইন বিশেষজ্ঞ এ ধরনের ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে এমন অস্বাভাবিক অনেক কিছুই ঘটছে। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমেই আরও বলা হয়েছে আসামীদের, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যাশা, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ মিটে গেলে পরিস্থিতি এমনিতেই স্বাভাবিক হবে। পুলিশের  তরফে এমন দায়সারা মন্তব্য আমরা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না। তাদের গুরুদায়িত্ব হলো, আসামি কিংবা বন্দির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কীভাবে তারা তা নিশ্চিত করবেন তা সম্পূর্ণই তাদের দক্ষতা এবং কৌশলের বিষয়।

আমরা এও লক্ষ করেছি, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সাবেক সরকারের মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের আদালতে হাজির করার সময় যে ধরনের জনভিড় কিংবা বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা-ও নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য কোনোভাবেই শুভপ্রদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটে যেতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। গ্রেপ্তার অনেকের বিরুদ্ধেই জনক্ষোভ কিংবা অভিযোগ-অনুযোগ থাকতেই পারে; কিন্তু এজন্য কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না। এর প্রতিবিধান নিশ্চিত করার একমাত্র এখতিয়ার আদালতের। যে অভিযোগের জন্য অভিযুক্তদের আটক করে আদালতে হাজির করা হয় এবং কাউকে কাউকে নেওয়া হয় রিমান্ডেও তাদের প্রতিও সদাচরণের দায় সংশ্লিষ্ট আইনি সংস্থাগুলোর। কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে আসামি কিংবা বন্দির ওপর মারমুখী হবেন কিংবা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করবেন এমনটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের গুরুদায়িত্ব রয়েছে।

বিচার শব্দটির তাৎপর্যপূর্ণ ভাবার্থ সম্পর্কে নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কিছু নেই। ‘মব জাস্টিস’ বা ‘তাৎক্ষণিক বিচার’ এ শব্দযুগল সব সমাজেই কমবেশি প্রচলিত। এর অর্থ হলো আইনি কাঠামোগত বিচারবহির্ভূত বিচার। এর শিকার হয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার নজির বিশ্বে রয়েছে। কোনো সভ্য কিংবা গণতান্ত্রিক সমাজে এমনটির অবকাশ নেই। এমন ঘটনা শুধু আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারকেই পরাভূত করে না, মানবিক আচরণকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা আইন উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই এ বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সজাগ রয়েছেন এবং এ ব্যাপারে সরকারের করণীয় সম্পর্কে তিনি তার ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। আমরা যেকোনো অবস্থায় বন্দি কিংবা আসামির অধিকার, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। আমরা স্পষ্টতই মনে করি, এ ব্যর্থতার দায় সবার আগে পুলিশের ওপর বর্তায়। এমন ঘটনা দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন তো করছেই, পাশাপাশি আদালতের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় বন্দি বা আসামিদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ইতোমধ্যে উঠে এসেছে।

প্রতিটি রাষ্ট্রে নিজস্ব বিচারব্যবস্থা রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা নিশ্চিত করা হয়। এটি যেকোনো রাষ্ট্র কিংবা সমাজের একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং অপরিহার্য অনুষঙ্গ। দক্ষিণ আফ্রিকার ধর্মযাজক ও অধিকার আন্দোলনের বলিষ্ঠ কর্মী ডেসমন্ড টুটু যথার্থই বলেছেন, ‘সবার জন্য ন্যায়বিচার থাকলেই প্রকৃত শান্তি অর্জিত হতে পারে।’ আমরা জানি, ন্যায়বিচার একটি সভ্যসমাজে স্থায়ী নীতি। ফরাসি গণিতবিদ, উদ্ভাবক ও ক্যাথলিক দার্শনিক ব্লেইজ প্যাসকেল বলেছেন, ‘কার্যকারিতা ছাড়া ন্যায়বিচার হলো ক্ষমতাহীন। আর ন্যায়বিচারবিহীন ক্ষমতা হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অত্যাচারী।’ আমরা এও জানিÑনীতিশাস্ত্র, ন্যায়বিচারের মূলনীতি ও উপাদান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় না, এটি চিরকালের জন্য একই এবং অপরিবর্তনীয়।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আসামি কিংবা বন্দিদের আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এর যথাযথ আইনি প্রতিবিধান করা জরুরি। যে অভিযোগে একজন অভিযুক্তকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়, তার সেই অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে আইনবহির্ভূত আচরণের কোনো সুযোগ নেই বরং যথাযথ আইনি পন্থায় তা নিষ্পন্ন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে সম্প্রতি আদালত প্রাঙ্গণে মব জাস্টিসের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে আমরা এর চরম নিন্দা জানাই। এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতেই হবে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, একজন বিচারপ্রার্থীর যেমন ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে, তেমন একজন অভিযুক্তেরও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমঅধিকার রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হলো সব নৈতিক কর্তব্যের সমষ্টি। আইনের মাধ্যমে পাওয়া ন্যায়বিচারই সভ্য সমাজের স্থায়ী নীতিÑএ বক্তব্যের সঙ্গেও আমরা সহমত পোষণ করি। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিশেষ করে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাইÑবন্দি বা আসামির যথাযথ সুরক্ষা প্রদানে কোনোরকম উদাসীন থাকার অবকাশ নেই।

বিচারকার্য বিঘ্নিত কিংবা অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয় তা নিশ্চিত করা প্রতিটি আইনি সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই দায় এড়ানোর অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি না। আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল থাকা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও অপরিহার্য। আমরা যেখানে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পথ সুগম করার উত্তরোত্তর দাবি জানিয়ে আসছি, সেখানে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিশ্চয়ই এর বিপরীতমুখী কর্মকাণ্ড। এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতেই হবে। আইনের শাসনকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা