× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফুটবল ফেডারেশন

গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন সময়ের দাবি

ইকরামউজ্জমান

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ০৯:১৩ এএম

ইকরামউজ্জমান

ইকরামউজ্জমান

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরই ক্রীড়াঙ্গনে শুরু হয়েছে অস্থিরতা, যার জের হিসেবে ক্রীড়াচর্চা কমবেশি বাধাগ্রস্ত এবং বন্ধ হয়ে গেছে। বিগত সরকারের আপন মানুষ এবং আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতরা এখন ফেডারেশন এবং অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে আসছেন না। কেউ নিজেকে আড়ালে রেখেছেন, কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আবার কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করে দেশের দিকে তাকিয়ে আছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি, ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন খেলার ফেডারেশনের সামনে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন প্রাক্তন-বর্তমান খেলোয়াড়, বর্তমানে পদবঞ্চিত ক্রীড়া সংগঠক, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সুযোগসন্ধানী এবং তাদের আমন্ত্রণে ছুটে আসা গণমুগ্ধরা। কেউ কেউ ‘পল্টি দিয়ে’ ‘রঙ পাল্টে’ সংগঠক হিসেবে আরও বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদের স্বপ্নও দেখছেন।

বিক্ষোভ এবং মানববন্ধনে বলা হচ্ছেÑক্রীড়াঙ্গন ক্রমাগত গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন ক্রীড়াঙ্গনে অনুপস্থিত। অনুপস্থিত গণতান্ত্রিক চর্চা। লাগামহীন দুর্নীতি, অতিকেন্দ্রিকতা একাত্মবাদী শাসন এবং স্বার্থচিন্তা ক্রীড়াঙ্গন বিপথগামী করেছে। দলীয় রাজনীতি ক্রীড়াঙ্গনের নীতি, উদ্দেশ্য এবং চেতনা নষ্ট করে ফেলেছে। শাসক দলের মদদ পেয়ে একদল দাপটবাজ সংগঠক হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। অবিলম্বে সব ফেডারেশনের (১৯-এর ক ধারায়) তথাকথিত নির্বাচিত কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হোক। নতুন ‘অ্যাডহক কমিটি’ গঠন করা হোক স্বল্প সময়ের জন্য, যাতে চলমান খেলাধুলার কার্যক্রম থমকে না যায়। ইতোমধ্যে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অনেক বছর পর মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক বডি।

ক্রীড়া সংগঠক কেউ কেউ তাদের কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গন বৈষম্যে ভরপুর। ক্রীড়াঙ্গনে মাঠে এবং মাঠের বাইরে ক্রীড়া প্রশাসনে পুরুষ ও নারী সমঅধিকার ভোগ করেন না। ক্রীড়াঙ্গন ভুগছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার অভাবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ নেই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোয়। বছরের পর বছর একই মুখ একই চেয়ারে বসে কর্তৃত্ববাদী শাসন পরিচালনা করছেন। কেউ কেউ আবার জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ছাড়াও বিভাগ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন। এটি সম্ভব হচ্ছে এর জন্য গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায়। ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্রে জবাবদিহির বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে (গঠনতন্ত্র জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত) এমনভাবে যাতে বছরের পর বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা যায়। ব্যক্তি এবং সমষ্টির স্বার্থচরিতার্থ সহজেই সম্ভব হয়। কাউন্সিলররা ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ (সভাপতি শুধু সরকার মনোনীত) নির্বাচিত করেন। আর এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত খেলা। যাদের জেতাতে হবে তারাই নির্বাচনে জেতেন। এতে সব সময় অযোগ্যরা বারবার জাতীয় ফেডারেশনে পুনর্বাসিত হচ্ছেন। পুনর্বাসিত হচ্ছেন ফোরাম, বিভাগ এবং জেলা ক্রীড়া সমিতির নেতাদের কৃপায়; যাদের সবচেয়ে বড় শক্তি দলীয় রাজনীতির প্রতি আনুগত্যতা।

ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কর্তৃত্ববাদ। আর এ ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ থেকে ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বার্থ বড়। বর্তমানে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্র দুর্বল এবং কর্তৃত্ববাদ জন্ম দেওয়ার সপক্ষে। ক্রীড়াঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চার নামে যে ধরনের মতলবি খেলা চলে, গণতন্ত্রের মুখোশ পরে সাধারণ ক্রীড়ামোদী মানুষকে প্রতারিত করা হয় তা নজিরবিহীন। ক্রীড়াঙ্গনের প্রয়োজন স্বৈরতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্তি। ক্রীড়াঙ্গন দলীয় রাজনীতির সেবাদাস থেকে মুক্ত হোক। ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সিস্টেমের সংস্কার। কাঠামোগত সংস্কার। ক্রীড়াঙ্গনে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব পাক। ক্রীড়াঙ্গনসংশ্লিষ্ট সব মহলে মৌলিক মানবিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। ক্রীড়াঙ্গন হতে হবে সবার, কয়েকজনের নয়।

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেক হতাশার মধ্যে আশাবাদের জায়গা হলো আমাদের তারুণ্য, যারা বাংলাদেশের জয় সব সময় চায়। অধিকার অর্জনে তারুণ্যের জয় রাষ্ট্রীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনাময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। ক্রীড়াঙ্গন এর ব্যতিক্রম নয়। ক্রীড়াঙ্গন ঢেলে সাজানোর এখনই সুযোগ। সুযোগ ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারসাধনের মাধ্যমে সুস্থ জীবনবোধ সৃষ্টি; যা টেকসই ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যে বিষয়টি নিয়ে সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, তা হলো প্রতিটি ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন পরিবর্ধন এবং নতুন সংযোজন। বর্তমানে ফেডারেশনগুলোর অনুমোদিত (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক) গঠনতন্ত্র শুধু দুর্বল নয়, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি ধারা অকেজো। আবার গঠনতন্ত্রে আছে কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই, এ রকম অভিজ্ঞতা তো সচেতন মহলের আছে। ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রে ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রভিশন আছে। কিন্তু কাউকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত করা হয়নি, বোর্ডে এতে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে।

গঠনতন্ত্রে যদি সঠিকভাবে পরিবর্তন, সংশোধন আনা সম্ভব হয় তাহলে খুব সহজেই ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। ক্রীড়াঙ্গনে স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপের অবসান হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটবে। গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করার আগে প্রয়োজন সংগঠকদের মধ্যে ঐকমত্য। কিছু মৌলিক বিষয়ের ক্ষেত্রে তো সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। স্বল্পসময়ের মধ্যে এ চ্যালেঞ্জিং কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। ইজিএম ও এজিএমে বিষয়টি পাস করানোর পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে।

  • ক্রীড়া-বিশ্লেষক ও সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস, এশিয়া
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা