স্মরণ
হাসনাত মোবারক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪ ০৯:০৯ এএম
অমূল্য লাহিড়ী
দ্বারকানাথ ও
সরোজিনী লাহিড়ীর ছেলে অমূল্যনাথ। আক্ষরিক অর্থেই এ দম্পতির সন্তানের কীর্তি মূল্য দিয়ে
বিচার করা যাবে না। অবিভক্ত ভারত, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট ও কৃষক
আন্দোলনের পুরোধা অমূল্যনাথ লাহিড়ী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জারি রেখেছিলেন
সংগ্রাম।
দেশের কমউনিস্ট
আন্দোলনের দীক্ষাগুরুদের অন্যতম অমূল্য লাহিড়ীর জন্ম ১৮৯৮ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া
উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। এ কৃষকনেতার জন্মের ২৫ বছর আগে
পাবনায় ঘটে ‘কৃষক বিদ্রোহ-১৮৭৩’। পারিবারিক বিত্তবৈভব এবং বিলাসীজীবন ছেড়ে তিনি কৃষকদের
নিয়ে কাজ করেছেন। কৃষকের মুক্তি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়Ñবিষয়টি অমূল্য লাহিড়ী শত
বছর আগেই বুঝেছিলেন। বিহার কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে তিনি কৃষিপ্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি
নিয়ে নিজ এলাকার কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে নামেন। লাহিড়ী মোহনপুরের পৈতৃক জমিদারি এলাকা
ছাড়াও পাবনার ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজ ও চাটমোহরে বিশাল এলাকায় গড়ে তোলেন কৃষি খামার।
তিনিই প্রথম কলের লাঙল দিয়ে জমি চাষ করে সাড়া ফেলেন। লাহিড়ী মোহনপুরে মিল্কভিটা দুগ্ধ
সমবায় সমিতি গঠন ও দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা স্থাপনেও ভূমিকা রাখেন। ছেলে অরুণ
লাহিড়ীকেও তিনি কারিগরি কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত করেন।
অমূল্য লাহিড়ীর
পারিবারিক পরিচিতি অনেকেরই জানা আছে। তার জ্যাঠার নাম ক্ষিতীশ মোহন লাহিড়ী। এ জ্যাঠারই
এক ছেলে রাজেন লাহিড়ী। এ জ্যাঠাতো ভাইয়ের আবক্ষ মূর্তি আছে ভারতের গোন্ডা জেলা কারাগারে।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯২৭ সালে ইংরেজ সরকার রাজেনকে ভারতের গোন্ডা জেলা কারাগারে
ফাঁসি দেয়। ১৯১৫ সালে (ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ) রেলসড়ক তৈরি হলে অমূল্য লাহিড়ীর জন্মগ্রাম
‘লাহিড়ী মোহনপুর’ স্টেশনের নামকরণ হয়।
উদার মনের অধিকারী
অমূল্যনাথ লাহিড়ী মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। এজন্য জীবনের বেশিরভাগ সময়
কেটেছে তার জেলে। তার জেলজীবনের ইতিহাস দীর্ঘ। রাজশাহী জেলের ঐতিহাসিক ‘খাপড়া ওয়ার্ড’
হত্যাকাণ্ডের সময় অপ্রত্যাশিতভাবে বেঁচে যাওয়া কয়েকজনের মধ্যে অমূল্যনাথ লাহিড়ী একজন।
৮৮ বছরের আয়ুর প্রায় ৫০ বছর কেটেছে জেলে এবং অন্তরিন অবস্থায়। তার ছোট মেয়ে শিপ্রা
মুখার্জি বলতেন, ‘বাবা, তোমার বারবার জেলে যাওয়া দেখে আমি ছোটবেলায় তোমাকে “জেলের মানুষ”
বলেই জানতাম।’ প্রগতিশীল এবং আধুনিকমনস্ক অমূল্য লাহিড়ীর কাছে হিন্দু-মুসলমান কোনো
ভেদ ছিল না। সবাই তার কাছে ছিল মানুষ। তিনি বলতেন, ‘সবার রক্তের রঙ এক’। তার বড় মেয়ে
ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করলেও তিনি মেনে নিয়েছিলেন। এ মহান বিপ্লবী ১৯৮৬
সালের ২৪ আগস্ট ৮৮ বছর বয়সে পরলোকে পাড়ি জমান। বনিয়াদি এ বৃক্ষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।