রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
মিখাইল আলেক্সিভ
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪ ১২:৫৭ পিএম
মিখাইল আলেক্সিভ
ইউক্রেনের গ্রীষ্ম
ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখাচ্ছিল। প্রতিদিনই সতর্কসংকেতের শব্দে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
পাওয়ার প্ল্যান্ট, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন এমনকি শপিং সেন্টারে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছিল
রুশ বাহিনী। রাশিয়ানরা অভিযান চালিয়ে একাধিক ইউক্রেনের ভূমি দখল করার সংবাদও পাওয়া
গেছে। ইউক্রেন বরাবরই আন্তর্জাতিক সামরিক সহায়তার দাবি জানিয়ে আসছে। অনেকে তো পশ্চিমা
সম্প্রদায়কেই দুষছে। তাদের অভিযোগ, পশ্চিমারা পুতিনকে অনেক বেশি ভয় পায়। ইউক্রেনের
২৪ মেকানাইজস ব্রিগেড অবশ্য ইতোমধ্যে রাশিয়ায় অভিযান চালাচ্ছে। মে ও জুন মাসে ইউক্রেনের
ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অব সোশিওলজির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ
ইউক্রেনের নাগরিক মনে করে, এই যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। গত
বছর এই অসন্তোষ ছিল ৬৫ শতাংশ মানুষের মনে। গত মাসে বিক্ষোভকারীরা ইউক্রেনের বিভিন্ন
শহরে রাশিয়ান আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়ো হতে শুরু করে। ইউক্রেনের সূত্র বলছে,
রাশিয়ান মিসাইলের হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে এবং এবং সারা দেশে ১৫৪ জন আহত হয়েছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এক শিশু হাসপাতালেও একটি মিসাইল আঘাত হানে। উদ্ধারকর্মীরা
ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত-নিহতদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছে। যেদিন এ হামলা ঘটে সেদিনই রাশিয়ার
কুরস্ক সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনের সেনারা প্রবেশ করতে শুরু করেন।
ইউক্রেনের সেনারা
তাদের অভিযানে চমক দেখায়। রাশিয়া এক বছরে যতটুকু ইউক্রেনের জমি দখল করেছে তার চেয়ে
বেশি জমি দখলে নেওয়া হয় এক দিনে। তারা রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ধ্বংস করে ফেলে। দুটি
গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দেয়। ইউক্রেনের দিকে ধাবিত রুশ সেনাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ভূগর্ভস্থ একটি অস্ত্রাগার লুট করে এমনকি রাশিয়ার কারাগার থেকেও বন্দিদের উদ্ধার করে
আনে। এবার মস্কো বন্দি বিনিময়ের দাবি করছে। আগের অবস্থা এখন নেই। রাশিয়া তাদের অভ্যন্তরে
বিভিন্ন স্থানে সরতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের ওপর চাপ অনেকাংশে কমে এসেছে। একদিকে রাশিয়ার
যুদ্ধ অবকাঠামো বিশাল। শক্তি অবকাঠামো থেকে তারা প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। ইরান
ও উত্তর কোরিয়া থেকে তারা ড্রোন ও মিসাইল সংগ্রহ করতে পারে। কুরস্কে ইউক্রেন কিছুটা
এগিয়ে গেলেও রাশিয়া তাদের যুদ্ধ থামায়নি। তারা প্রতিদিন ৪ হাজার রাউন্ড আর্টিলারি,
১০০ গ্লাইড বোমা নিক্ষেপ করছে। প্রতিদিন ইউক্রেনের ৬০০ মাইল এলাকাজুড়ে তাদের ১২০ ইনফ্যান্ট্রি
অভিযান তো চালু রয়েছেই। রাশিয়ান সেনারা পোকরোভস্ক এলাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। ইউক্রেনের
পূর্বাংশের জন্য জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুতিন এখনও নড়েচড়ে ওঠেননি।
অন্যদিকে রাশিয়ায়
ইউক্রেনের অভিযানই এই যুদ্ধ বন্ধের দিকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ইউক্রেন ইতোমধ্যে
ক্রেমলিনকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা যে রাশিয়াকে চমকে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে তেমন আভাসই
দিয়েছে। ১৯৮০ সালে অপারেশন ওশেন ভেনচারের কথাই তোলা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী
রাশিয়ার গভীরে অভিযান চালানোর জন্য নরওয়ের বরফাচ্ছাদিত এলাকা থেকে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র
পাঠায়। রাশিয়া তখন জানায়, এ হামলা ঠেকানোর সাধ্য তাদের নেই। এই হামলাই পরবর্তী সময়ে
স্নায়ুযুদ্ধ থামাতে সহায়তা করেছিল। পুতিন এখন আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে। যদি ইউক্রেন
গোপনে কোনো হামলা চালায় তাহলে তারা কোথা থেকে হামলা চালাতে পারে? তারা কি সামনে থেকে
কোনো হামলা চালাতে পারবে? নাকি তারা কুরস্কের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট দখল নেওয়ার
চেষ্টা করবে? অথবা তারা রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ হাবের দখল নেবে? ইতিহাস বলে, রাশিয়াকে
চমকে দেওয়ার কাজ ইউক্রেনকে নিয়মিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা তাদের
লাগবেই। ইতোমধ্যে কিছু সহযোগিতা তারা পেয়েছে। ইউক্রেন সচরাচর পশ্চিমা সামরিক রসদ ব্যবহার
করে। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের অভিযান চালানোর সময়েও বাইডেন প্রশাসন এখনও তাদের
অভিযান থামাতে বলেনি। বরং ইউক্রেনের অভিযানকে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক কর্মকর্তা
সাহসী বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে এখনও অনেক
কিছু করা বাকি। এক্ষেত্রে রাশিয়াকে অনিশ্চয়তার মুখে রাখাই জরুরি। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের
নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ভাবা লাগবে। রাশিয়ার ঠিক কতটা ভেতরে ইউক্রেন সেনারা গুলি চালাতে
পারবে এই নিষেধাজ্ঞার দিকটিও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। পশ্চিমা সম্প্রদায়ের সহযোগিতায়
ইউক্রেন এখন দূর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারছে। তবে ইউক্রেনকে সামরিক কায়দা ও নিয়মের
অধীনে থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। তাদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে গেলে হবে না। রাশিয়ায়
অবকাঠামো ধ্বংস তাদের প্রধান লক্ষ্য না। বরং পুতিনকে বোঝাতে হবে কিয়েভ যথেষ্ট শক্তিশালী।
ইউক্রেনের জন্য আরও ভালো হবে যদি বাইডেন প্রশাসন গ্রাহামের ধারণার প্রবর্তন করতে পারে।
অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন বিমানবাহিনীর এফ-১৬ পাইলটদের এই যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে
পাঠাতে পারলেও অনেকটা সফলতা অর্জন সম্ভব। কারণ কিয়েভকে এই বিমান চলতি বছর দেওয়া হলেও
পাইলটরা এখনও এই বিমান চালানোর মতো পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করেনি।
কুরস্ক অভিযান এ যুদ্ধের বাঁকবদলের প্রধান অস্ত্র। ইউক্রেনকে সাহায্য করিয়ে পুতিনকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাখতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে রাশিয়ার সবকিছুই বিপদে আছে। ওয়াশিংটন যদি তুরস্কের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহর পাঠায় তখন পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে উঠবে। অথবা উত্তর কোরিয়া থেকে পাঠানো মিসাইলের জাহাজের পথরোধ করলেও অনেক কিছু হতে পারে। আমেরিকানদের এখনই সুযোগ ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার। শুধু ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধই নয়, পুতিনকে নড়বড়ে অবস্থায় ফেলারও এই সুযোগ। অন্তত পশ্চিমা সম্প্রদায়কে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের কিছু ঝুঁকি তো রয়েছেই। একাধিক ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয় তারা। কিন্তু কুরস্ক এখন আরও জটিলতা বাড়িয়েছে। কুরস্কের পরিস্থিতিকে গাণিতিকভাবে হিসাব করলে, রাশিয়া ৯০ শতাংশ ঝুঁকিতে রয়েছে।
লস এঞ্জেলস টাইমস
থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন