× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রতিবেশী

নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়

রোহিত খান্না

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১১:৪৬ এএম

রোহিত খান্না

রোহিত খান্না

১৯৭৩ সালের ঘটনা। অরুণা শনবাগের বয়স তখন ২৫। মেয়েটা খুব সাদাসিধে। সাজুগুজু করতে ভালোবাসত। মুম্বাইয়ের প্রিমিয়ার কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে সেবিকার কাজ করত। ওই হাসপাতালেই এমডিতে অধ্যয়নরত এক নিউরোসার্জনের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল। গোয়ার দক্ষিণের এক উপকূলবর্তী শহর থেকে উঠে আসা মেয়েটি পরিবার ও গোত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। তার দক্ষতা ও সদিচ্ছা নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকার কথা ছিল না। হাসপাতালে অনিয়মের বিরুদ্ধেও সে ছিল সোচ্চার। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর অরুণা রাতে ডিউটি করছিল। বাল্মীকি নামে এক ওয়ার্ডবয়ের বহুদিনের আক্রোশ ছিল তার ওপর। রাতে মেয়েটিকে কুকুর বাঁধার চেইন দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। এত জোরে গলায় ফাঁস দেওয়া হয় যে, তার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের পথ নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েটিকে সে ধর্ষণও করে। এক রাতের ব্যবধানে মেয়েটি অন্ধ ও বাকশক্তি হারায়। বাল্মীকি ১৯৮০ সালেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। কিন্তু অরুণাকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে বন্দিজীবন কাটাতে হয়। এক রাত ও এক ব্যক্তির আক্রোশে তার জীবন শেষ।

৫১ বছর পর কলকাতার দিকে তাকালে দেখা যায়, কিছুই বদলায়নি। চলতি বছর ৮ আগস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মরদেহ সেমিনার হল থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটি বক্ষব্যাধি ওষুধ বিভাগে অধ্যয়ন করছিলেন। তাকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করা হয়। মেয়েটি হাসপাতালে দায়িত্বপালন করছিলেন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন। মৃত্যুর পরও তার গোপানাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এমন ঘৃণ্য অপরাধ মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। যখন এই লেখা লিখছি তখন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গর্জে উঠেছে। বিভিন্ন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছেন। পুলিশ হাসপাতালে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। লোকটিকে গ্রেপ্তার করার কারণ, পুলিশ হিসেবে হাসপাতালের প্রতিটি স্থানেই সে যাতায়াত করতে পারে। পোস্টমর্টেম এটাও জানিয়েছে, ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পেছনে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল।

 

বিস্ময়কর হলেও সত্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে এই বর্বর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে অভিহিত করে। তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়, ওই নারী আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের সদস্যদের লাশ হস্তান্তর করার আগে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয়। পরে ওই নারীর পরিবার একটি পিটিশন করলে কোর্ট তা সিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে। আদালত এও জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সত্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং কলেজের অধ্যক্ষ সন্দ্বীপ ঘোষ ন্যূনতম সহমর্মিতাও জানাননি। অথচ তিনিই সকল চিকিৎসকের অভিভাবক ওই প্রতিষ্ঠানে। আদালত জানায়, এই লোককে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হোক।

পাঁচ দশক পর অরুণা শনবাগ এবং কলকাতার শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের পরিস্থিতিতে কোনো বদল আসেনি। আমাদের সামনে এখনও একাধিক প্রশ্ন। নারীদের কর্মক্ষেত্রে এখনও কেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি? দিন কিংবা রাতÑকোনো সময়েই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি কেন? এখনও সামাজিকভাবে এই প্রশ্ন আসেÑএকজন নারী রাতে কেন কাজ করবে? নারীরা কেন এমন কর্মক্ষেত্র বাছাই করে, যেখানে তারা অনিরাপদ? অনেকে তো এই বিষয়ের পক্ষেও বলছে, আমাদের সমাজে তো এমনটাই হয়। ভারতে নারীরা দীর্ঘদিন থেকেই স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে রাতে কাজ করেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও নিযুক্ত ছিল। তারা এয়ারপোর্ট, রেলওয়ে স্টেশন, হোটেল-রেস্টুরেন্টেও কাজ করেছে। অনেক নারী রাতে সময় দিতে হয়Ñ এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত। ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলের অনেক নারীকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য ভোরের আলো ফোটার আগে বের হতে হয়। এভাবে তালিকা করতে গেলে অনেক কিছুই আসবে। একটি সভ্য সমাজের উচিত নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ দায়িত্ব আমাদের সবার।

যদি আপনাদের মনে হয় পরিস্থিতি ভালো হয়েছে, তাহলে ২০০৩ সালের কথাই বলা যায়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শান্তি মুকুন্দ হাসপাতালে কোমায় থাকা এক নারীকে ভুরা নামে এক ওয়ার্ডবয় ধর্ষণ করে। মহিলাটি কিছুটা নড়লে লোকটি মহিলার ডান চোখ উপড়ে ফেলে। ধর্ষণের পর ওই নারীকে ভুরা বাথরুমে নিয়ে যায়। সারা রাত মহিলার চোখ দিয়ে রক্ত ঝরে। ওই হাসপাতালের কেউই নারীটিকে চিকিৎসা দেননি। তারা বরং গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালে তাকে রেফার করে দেয়। সেখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও তিন দিন কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমে যখন এ নিয়ে প্রচার হয়, তখনই তারা এগিয়ে আসে। তাদের অবহেলা ও চিকিৎসা না দেওয়ার দীর্ঘসূত্রতায় ওই নারী চিরতরে ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। অনেক দেরিতে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া হয়। একজন ডকুমেন্টারি পরিচালক স্ব-উদ্যোগে ব্যবস্থা নেন।

২০০৫ সালে ভুরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে ওই হাসপাতালকে আদেশ দেওয়া হয়, ভুক্তভোগী নারীকে সাড়ে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ যেন দেওয়া হয়। দিল্লি প্রশাসনকেও দুই লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নারী আদৌ তার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কি-না তা আজও জানা যায়নি। কিন্তু এটুকু সত্য, সামাজিকভাবে তাকে হেয় হতে হয়েছে। এক চোখে দেখতে না পাওয়ায় তিনি অনেক জায়গায় চাকরিও পাচ্ছিলেন না। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দেখে খুশি হওয়ার কিছু নেই। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে একজন নারী যায় তা-ও একবার ভেবে দেখা জরুরি। অরুণা শনবাগ থেকে কলকাতাÑপ্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্মজীবী নারীর নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি গুরুতর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়টি উপেক্ষার কোনো অবকাশই আমাদের নেই।

  • সাংবাদিক

এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা