সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৪ ১৪:৪২ পিএম
জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে থাকছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিজনিত খবর। অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিস্থিতির উন্নতিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বটে কিন্তু দেশের কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে উদ্বেগজনক ঘটনা। ১৫ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই ১৪ আগস্ট ৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বাইরেও একাধিক খুনখারাবির পাশাপাশি হামলাজনিত ঘটনার খবর উঠে আসছে। আমরা জানি, যেকোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধু সামাজিক অস্থিরতাই প্রত্যক্ষ কারণ নয়, এর সঙ্গে কোনো কোনো মহলের ক্ষমতা অপব্যবহারের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোও জড়িত। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি আরও গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া প্রয়োজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন থানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ লুটপাটের খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছিল। র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ইতোমধ্যে ৪০৬টি অস্ত্র উদ্ধারের খবর ১৫ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ এসেছে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের অভিমত লুণ্ঠিত অস্ত্র সমাজবিরোধীরা নানা অপকর্মে ব্যবহার করছে। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো প্রয়োজন। দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রায় সব মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা এও জানি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিজনিত কারণগুলোর পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রেক্ষাপট থাকে। রাষ্ট্র কিংবা সামাজিক যেকোনো পরিস্থিতিতে সুযোগ সন্ধানী চক্র এই প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
দেশের চলমান অস্থিরতা, সংঘাত-সংঘর্ষ, ক্ষোভ দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা আরও জানি, সৃষ্ট নতুন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। পর্যায়ক্রমে সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে এবং তারা ইতোমধ্যে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলেও থানাগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কারণে পূর্ণাঙ্গভাবে তাদের কাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমরা মনে করি, দেশের ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোর পূর্ণমাত্রায় কার্যক্রম সচল করার ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সংস্কারসহ বিভিন্ন ব্যাপারে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। দেশের অনেক থানার অবকাঠামো পুলিশের দায়িত্বপালন কিংবা কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ততা হারিয়েছে। জননিরাপত্তার সুরক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি অন্য আরও কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করলেও মূলত এই কাজটি পুলিশের। পুলিশ একটি রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। রাষ্ট্রীয় বিধিমালার নিরিখে মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সর্বাগ্রে তাদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এবং সৃষ্ট নানা কারণে পুলিশের দায়িত্বপালনে ইতোমধ্যে বিঘ্ন ঘটেছে। আমরা দেখেছি, পুলিশ বাহিনীকে পূর্ণমাত্রায় গতিশীল ও তাদের কার্যক্রম শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে বেশকিছু রদবদলও ঘটেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি, ছিনতাই এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, যা জানমালের নিরাপত্তাহানিজনিত ঘটনার বার্তা বহন করে এমন অনেক সংবাদই সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। আমরা এও দেখেছি, এলাকাভিত্তিক দলগতভাবে মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এখনও সব ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারছে না-এ অভিযোগ আছে। আমরা দেখেছি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সৃষ্ট প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী চাপে আছে। সরকারের পক্ষে একসঙ্গে সবকিছু মোকাবিলা করা সংগত কারণেই কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে যূথবদ্ধ কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি সমন্বিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে কাজ করা জরুরি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক রেষারেষির প্রতিশোধমূলক ঘটনাও ঘটছে, যা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেরই প্রত্যাশা সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সফল হবে। আমরাও এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি না। তবে বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে জরুরি হলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় কাজগুলোর প্রাধান্য দেওয়া, যার মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
প্রায় ১৮ কোটির এই অতি জনঘনত্বের দেশটিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যে অস্থিরতা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে এর নিরসন করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক করা না যায় এবং জননিরাপত্তা নিয়ে যদি অস্থিরতা বিরাজ করতেই থাকে তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশসহ অন্য সব বাহিনীকেও সমান্তরালে আরও কার্যকর করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধনের ঘাটতি দূর করে মৈত্রীর সেতুবন্ধ গড়ে তোলাও বাঞ্ছনীয়। একই সঙ্গে পুলিশ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জনস্বার্থে এ ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দূরদর্শী হতেই হবে।